নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী বিভাগজুড়ে এখনও বিরাজ করছে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির আতঙ্ক। এসব ঘটনার বাড়বাড়ন্তে থানায় বেড়েছে মামলার সংখ্যাও। তারপরও সব অপরাধী গ্রেপ্তার হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবনতিতে উদ্বেগ ছড়িয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মহলে। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে সর্বোচ্চ তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগে প্রতি মাসেই চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো শতাধিক অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। রাজশাহী বিভাগে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির অন্তত ৩৯০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ডাকাতির ঘটনা ছিল ২৯টি। মোট ২৮৪টি মামলা হয়েছে চুরির। এসব ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে ৫৪টি ঘটনা বগুড়ায়।
রাজশাহীতে ঈদের ছুটিতে এসে নিজ বাড়ির সামনে পৌঁছেই গত ৬ জুন ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান শাখায় কর্মরত রাশিদুর রহমান ও ফাহমিদা সুলতানা। নগরের দেবিসিংপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীদের হামলায় আহত হন ফাহমিদা সুলতানা।
রাশিদুর রহমান জানান, ফজরের নামাজের সময় তারা বাসে করে রাজশাহীর তালাইমারি মোড়ে নামেন। সেখান থেকে একটি রিকশা ভাড়া করে দেবিসিংপাড়ার দিকে রওনা হন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে তিনি রিকশা থেকে নেমে পড়েন। তখন তার স্ত্রী ফাহমিদা সুলতানা রিকশাতেই বসে ছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে দুই জন ছিনতাইকারী তাদের সামনে এসে ধারালো অস্ত্রের মুখে আটকায়। এ সময় তারা দুটি মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
গত ৮ এপ্রিল রাতে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দিঘা আঠালিয়াপাড়া গ্রামে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশরাফুল আসেকিন রিপনের বাড়িতেই চুরির ঘটনা ঘটে। বাসা থেকে দুটি স্বর্ণের বালা, একটি চেইনের লকেট ও এক জোড়া রুপার তোড়া চুরি হয়। রিপনের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম দিঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার সুবাদে তিনি রাজশাহীতে থাকেন। এ ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
জানতে চাইলে বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের পুলিশ সদস্যের বাড়িতেই চুরি বলে ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। কিন্তু এখনও কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। ওই ঘটনায় থানায় একটা জিডি হয়েছিল। কিন্তু ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্যই মামলা করতে চাননি। কেউ ধরা পড়লে তখন মামলা হবে। আমরা দেখছি।’
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘পুলিশের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক ইন্ধনের সুযোগে বাড়ছে অপরাধ। সারাক্ষণ চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির আতঙ্কের মধ্যে সাধারণ মানুষ আছে। অনেক সময় পুলিশ সেনাবাহিনীকে ছাড়া কোনো অভিযানও করছে না। আগে পুলিশ নিজেরাই অভিযান করত। সে অভিযান এখন কমে যাওয়ায় চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ঘটনা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। অভিযান জোরদার করা দরকার।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘৫ আগস্টের ঘটনার পর প্রশাসনের মধ্যে একটা নিষ্ক্রিয়তা দেখা গেছে। জনসাধারণের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছে। পুলিশ-প্রশাসনের দুর্বলতা, বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক দলের ইন্ধন সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। দ্রুতই পরিস্থিতির উন্নয়ন করা উচিত।’
পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘পুলিশ আবারও সক্রিয়ভাবে মাঠে নেমেছে এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, নির্মূল করা নয়। আমরা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী চেষ্টা করছি প্রতিটি অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনতে। তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’
বিএ..
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।