1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
রাজশাহীর সাংবাদিকদের ঐক্যে বাধা কোথায়? - খবর ২৪ ঘণ্টা
শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০:০২ অপরাহ্ন

রাজশাহীর সাংবাদিকদের ঐক্যে বাধা কোথায়?

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৩০ জুন, ২০২১

রাজশাহীতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সমস্যা নিরসন এবং পেশাগত স্বার্থে বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গত ৫ জুন গঠন করা হয় “রাজশাহী সাংবাদিক সমন্বয় পরিষদ”। ঠিক চারদিন পর ৯ জুন একই ইস্যুতে সাংবাদিকদের আরেকটি সংগঠন ” রাজশাহী সাংবাদিক ঐক্য পরিষদ” আত্মপ্রকাশ করে।

বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে একটাই সংগঠন হওয়ার কথা।কিন্তু সেখানে দুটো হলো কেন?এতেই বুঝা যায়, রাজশাহীর সাংবাদিকদের ঐক্য প্রচেষ্টায় কোথাও গলদ আছে।সাংবাদিকরা নিজেরা কখনোই অনৈক্য চাননা।কারণ,তাঁরা জানেন সাংবাদিকতা পেশায় কত সমস্যা।জীবনের ঝুঁকি,চাকরির নিরাপত্তাসহ নিত্যনতুন জটিলতা তাঁদের সামনে দেখা দেয়।এইসব সমস্যা সমাধান করতে হলে বৃহত্তর ঐক্যের কোন বিকল্প নাই।তারপরেও কেন তাঁরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারছেননা?এর পিছনে কাদের ষড়যন্ত্র আছে?

প্রকৃতভাবেই যদি রাজশাহীর সাংবাদিকরা বৃহত্তর ঐক্য চান,তবে তাঁদের এর গোড়ায় গিয়ে খোলা মন নিয়ে নিজেদের সমস্যা নিজেদেরকেই সমাধান করতে হবে।কোন রাজনৈতিক সংগঠনের উপর নির্ভরশীল হয়ে নয়।ঝানু ঝানু অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিকেরা বলেছেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং মিডিয়ার মালিকরা নিজেদের স্বার্থে কখনোই সাংবাদিকদের ঐক্য চাননা।কিন্তু রাজশাহীর সাংবাদিকরা এ দুটের মধ্যেই বসবাস করছেন।

রাজশাহীতে সাংবাদিকদের মধ্যে অনৈক্য অনেকদিন ধরে।তবে প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে পেশাগত স্বার্থে সারা দেশের ন্যায় রাজশাহীতেও সাংবাদিকরা বৃহত্তর ঐক্য অনুভব করেন।কিছু তৎপরতাও লক্ষ্য করা যায়।আশান্বিত হয়েছিলাম।কিন্তু হতাশ হলাম দু’টি কারণে।প্রথমতঃ গত ৫ জুন “সমন্বয় পরিষদ” গঠন করার সভায় কিছু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি। আমরা জানি এবং কেন্দ্রের সচেতন সাংবাদিক নেতাদের বলতে শুনছি, রাজনৈতিক নেতারা কখনোই সাংবাদিকদের ঐক্য চাননা।

অনৈক্য থাকলে তাঁদের লাভ।অন্যের উপর নির্ভরশীলতা দুর্বলতার পরিচায়ক।সাংবাদিকতাকে মহান পেশা বলা হয়।সাংবাদিকরা জনগণের মুখপাত্র।সাংবাদিক হলেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তি।সামাজিকভাবে সাংবাদিকদের কিছুটা আলাদা চোখে দেখা হয়।ব্যক্তিগতভাবে একজন সাংবাদিকের নানারকম প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে।থাকতে পারে ব্যক্তিগত রাজনীতি বোধ,সংস্কার কিংবা বিশ্বাস অবিশ্বাস।

কিন্তু পেশাগত কারণেই তাঁকে এই ব্যক্তিগত বোধগুলোকে পরিহার করতে হয়।যুগে যুগে আমরা দেখে আসছি,শাসক শ্রেণী কখনও সংবাদমাধ্যমের চ্যালেঞ্জকে স্বাভাবিক মনে গ্রহণ করেনি।তাই সাংবাদিকদের অনুধাবন করতে হবে,তাঁদের স্বাতন্ত্র্যবোধ থাকা প্রয়োজন।তাঁরা কেন রাজনৈতিক নেতা, আমলাদের নম নম করে নিজেদের ব্যক্তিত্বকে নষ্ট করবেন!

রাজনীতিবিদরা আমাদের নমস্য।তাঁরা দেশ ও জাতির ত্রাতা,চালিকাশক্তি।তাঁদের ক্ষেত্র আলাদা, সাংবাদিকদের ক্ষেত্র আলাদা।রাজনীতিবিদদের আভ্যন্তরীন কিংবা দলীয় কোন ফায়সালার জন্য কী সাংবাদিকদের কখনো ডাকেন?দ্বিতীয়তঃ সমন্বয় পরিষদের ঐ সভায় “ঐক্য পরিষদের” কারো উপস্থিতি না থাকা।তাদের কাউকে কেন ডাকা হয়নি,তা সমন্বয় পরিষদের নেতৃবৃন্দ ভাল বলতে পারবেন।তবে আমার ধারণা,তাঁরা যদি সেখানকার কর্মরত সাংবাদিকদের ডাকতেন,তাহলে হয়তোবা ঐক্য পরিষদ গঠিত হতোনা।তবে সাংবাদিকদের মধ্যে জি-৮ ভুক্ত রাষ্ট্র আর সার্কভুক্ত রাষ্ট্র এই ধরনের মনোভাব যদি থেকে থাকে,তবে

বৃহত্তর ঐক্য কিংবা সমন্বয় সম্ভব হবেনা।শ্রেণীকাঠামো,জাতপাতের কথা মনে করলে বৃহত্তর ঐক্য কখনোই সম্ভব নয় বলে আমার মনে হয়।সংবাদপত্রে অঞ্চলভিত্তিক যেমন ক্যাটাগরি আছে, তেমনি ঐসব আঞ্চলিক কিংবা স্থানীয় পত্রিকায় যারা কর্মরত সাংবাদিক, তাঁরাও ঐ ক্যাটাগরির মধ্যেই পড়ে। তাঁদের অবজ্ঞা করলে বিভাজনটা আরো প্রকট হবে।সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে যারা পেশার অমর্যাদা করছে,তাদের চিহ্নিত করা সময়ের দাবি।বৃহত্তর ঐক্য করা সম্ভব হলে অপ-সাংবাদিকতা এমনিতেই দূর হয়ে যাবে।

সাংবাদিকতা পেশার মর্যাদার মাপ বর্তমানে কীভাবে করবেন? ঢাকায় ক্রাইম রিপোর্টারদের সংগঠন ‘ক্র্যাব’ কী ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটালো!কলেজ ছাত্রী মুনিয়া আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে অভিযুক্ত আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীরকে ফুলেল শুভেচ্ছা দিতে তার বাসভবনে গিয়েছিল তারা।দেশের এত বড় বড় ক্রাইম রিপোর্টাররা নিজেদের পেশার মর্যাদাকে ভূলুন্ঠিত করে চাঁদাবাজির জন্য একজন বিতর্কিত ব্যক্তির কাছে এভাবে যাওয়াটা কী সমীচীন হয়েছে!

আমজনতার অনেকেই জানে, রাজশাহীর কোন কোন সাংবাদিক চাঁদাবাজি করে। দুই ঈদসহ নানা পার্বনে কারা সাংবাদিকদের উপঢৌকন দেয়?তারা সাংবাদিকদের কেন উপঢৌকন দেন,এটা সবাই বুঝে।কারো কোনো গিফট কিংবা উপঢৌকন সাংবাদিকরা গ্রহণ করলে, তার বিরুদ্ধে নিউজ করা মুশকিল হয়ে পড়ে।
পেশাগত নিরাপত্তার স্বার্থে,স্থানীয় সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তার স্বার্থে বৃহত্তর ঐক্য চাইলে,এসব ভুলে যেতে হবে।

সকলকে সমানভাবে ভাবতে হবে।মূল জায়গায় হাত দিতে হবে।আমরা মোটা দাগে জানি,সাংবাদিকদের এসব অপকর্মের জন্য প্রধানতঃ দায়ি পত্রিকার মালিকপক্ষ।তারা পত্রিকার মিডিয়া লিস্টের জন্য যখন সরকারের কাছে আবেদন করেন,তখন সাংবাদিকদের সর্বশেষ ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ বাস্তবায়নসহ সব সুযোগ-সুবিধা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন।তাঁদের বেশিরভাগই মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপনের রেটকার্ড নেন।অনুমতি পাওয়ার পর তাঁরা সব ভুলে যান। সাংবাদিকদের প্রতি অমানবিক আচরণ করেন।

নিয়োগ পত্র,প্রাপ্য বেতন-ভাতা দিতে গড়িমসি করে।চিরকাল তারা সাংবাদিকদের শ্রম শোষণ করে আসছে।তারাতো বেতনের নামে চা খাওয়ার পয়সাও দেননা।তাও অনেক সময় অনিয়মিত।এইসব স্থানীয় সংবাদপত্রের সাংবাদিকরা কীভাবে চলবেন!কোনো কোনো মিডিয়ার মালিক ‘পরিচয় পত্র’ টাকার বিনিময়ে দিয়ে বলে “কামাই করে বেতন নেন”। এই শ্রেণির সাংবাদিকরা কী করবে?তারা অন্য কোনো চাকরি না

পেয়ে,আপাতকালীন সাংবাদিকতায় ঢুকে পড়ে।পরে সাংবাদিকতার মোহ তাদের এমনভাবে পেয়ে বসে যে,এ জগত থেকে তারা আর বের হয়ে অন্য কোন পেশায় যাওয়ার মত মানসিকতা থাকেনা।ইতোমধ্যে বয়সও পার হয়ে যায়।এসব দুঃখজনক বাস্তবতা এবং রাজনেতিক মতাদর্শগত বিষয়টি মাথায় না নিলে বৃহত্তর ঐক্য করা সম্ভব হবেনা বলে আমার মনে হয়।

রাজশাহীতে আমার সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি,নিজেদের মূলধারার সাংবাদিক বলে গর্ববোধ করা কিছু সাংবাদিক এবং অতি বুদ্ধিমান স্থানীয় পত্রিকার একজন সম্পাদকের কূটচালের কারণে অনৈক্য জিইয়ে থাকছে।ঐ ধূর্ত সম্পাদক কখনো চাননা সাংবাদিকেরা ঐক্যবদ্ধ হোক।মুখে তিনি ঐক্যের কথা যতই বলুন না কেন।সব সাংবাদিকরা এক প্ল্যাটফর্মে থাকলে তার অনেক অসুবিধা আছে। একটা বিষয় চিন্তা করেন,তিনি স্থানীয় একটি পত্রিকার মালিক সম্পাদক। তাঁর কেন এত খায়েশ “সাংবাদিক কল্যাণ তহবিলের” চেয়ারম্যান হওয়ার।তার ব্যক্তিত্ব নেই নাকি!তিনিতো সাংবাদিক নন।তার নামে কোনদিন কোন

লেখাও চোখে পড়েনি।প্রত্যেকবার নির্বাচনের সময় ছলেবলে কৌশলে তাকে চেয়ারম্যান হতেই হবে! রাজশাহীর সাংবাদিক ভাইরাও সরল মনে, উদারচিত্তে তাকে গ্রহণ করেন।সাংবাদিকদের মধ্য যোগ্যতাসম্পন্ন কেউ নাই নাকি!তার এই চেয়ারম্যান হওয়ার পিছনে অনেক উদ্দেশ্য আছে।তিনি নিজের পত্রিকার সাংবাদিকদের ন্যায্য বেতন-ভাতা এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন।মাথা উঁচু করে তিনি বলতে পারবেন,তাদের প্রাপ্য বেতন-ভাতাদি,গ্র্যাচুইটি,গোষ্ঠী বীমা,নাইট অ্যালাউন্সসহ কোন প্রান্তিক সুযোগ-সুবিধা

দেন? অন্যান্য সাংবাদিকদের কল্যাণে তিনি কীভাবে ব্রতি হবেন?সাংবাদিকদের বৃহত্তর ঐক্য হলে তার এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে।এইজন্য তিনি “কল্যাণ তহবিলের” মাধ্যমে একদল সাংবাদিককে নিজের আয়ত্তে রেখে আরেকদল সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নানা কৌশলে বিভাজন তৈরি করে রেখেছেন। যাতে তাদের শক্তি কম থাকে।আন্দোলন ফলপ্রসূ না হয়।

তিনি “রাজশাহী সাংবাদিক কল্যাণ তহবিলের” চেয়ারম্যান হয়ে,স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক হয়ে কীভাবে একই এলাকার আরেকটি স্থানীয় পত্রিকার দু’জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করতে পারলেন!সাংবাদিকদের জন্য যে আইন অকল্যাণকর,অনিরাপদ,মুক্ত সাংবাদিকতার পরিপন্থী; যে অস্পষ্ট আইনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা আন্দোলন করছেন,সেই বিতর্কিত আইনে তিনি গত ৩ জুন এই মামলাটি দায়ের করেন।

ঠিক আছে,যে কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কিংবা কোন স্বার্থান্বেষী মহল দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যদি ঐ সাংবাদিক তাঁর বিরুদ্ধে নিউজ করেই থাকে,তবে একই এলাকার পত্রিকার মানুষ হিসেবে তিনি প্রথমে সেই পত্রিকা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সেখানেই মিটমাট করার সুযোগ ছিল।অবস্থা বুঝে তারপর ব্যবস্থা নিতেন।তিনিতো সাংবাদিকদের মুরুব্বী হতে চান।তাহলে কোন যুক্তিতে তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে

মামলা করতে গেলেন? কী তাঁর উদ্দেশ্য ছিল? সবচেয়ে বড় কথা, কোন সংবাদপত্রের সম্পাদক কিংবা সাংবাদিক যদি কোন অপরাধ করে থাকেন,তবে তার বিরুদ্ধে কী নিউজ করা যাবেনা? প্রকাশিত সংবাদটি যদি উদ্দেশ্যমূলক হয়,তবে কেন তিনি সমঝোতা করার জন্য একজন রাজনৈতিক নেতার শরণাপন্ন হলেন? তিনি বুঝতে পেরেছিলেন,কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত তার বিরুদ্ধে একজন আওয়ামী লীগ নেতার এবং একজন মুক্তিযোদ্ধার আনীত অভিযোগটি তাকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে।তড়িঘড়ি করে স্থানীয় একজন রাজনৈতিক

নেতার ব্যক্তিগত চেম্বারে বসে, সাংবাদিক ইউনিয়নের দু’জন নেতার উপস্থিতিতে মামলা প্রত্যাহারের শর্তে মিমাংসা করে নিলেন।কিন্তু জনগণের প্রশ্নের কোন সদুত্তর মিললোনা।তার বিরুদ্ধে এত বড় অভিযোগ সত্য কী মিথ্যা,তার যাচাই হবেনা? প্রকাশিত সংবাদের দু’টি অভিযোগের মধ্যে একটি হলো,”সুজন” আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি নাকি “বঙ্গবন্ধুর মরণোত্তর শাস্তি” দাবি করেছিলেন।সাক্ষি হিসেবে সেখানে স্থানীয় দু’জন মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়।

প্রকাশিত সংবাদটি যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে থাকে,তবে সংবাদপত্রের অাইন অনুযায়ী ঐ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যেতো।তিনি তা না করে সাংবাদিকদের ঘায়েল করা সরাসরি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে দিলেন। তিনি যদি বঙ্গবন্ধুর প্রতি এ ধরনের অমর্যাদাকর বক্তব্য দিয়ে থাকেন,তবে সেটিরও তদন্ত করা উচিত বলে আমরা মনে করি।কারণ,জাতির পিতাকে অবমাননাকর বক্তব্য কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আঘাত না লাগতে পারে,কিন্তু পুরো

জাতির গায়ে আঘাত লাগবে।তার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযোগটি হলো,অসহায় শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকা তার পত্রিকার সাংবাদিকদের নামে তুলে নেওয়া।এটা দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে,যা সাংবাদিকদের জন্য মানহানিকর।
রাজশাহীতে প্রেসক্লাবের বিভক্তি শুরু হয় ‘দৈনিক বার্তা’ প্রতিষ্ঠার পরে।আশির দশকের প্রথম ভাগে ঢাকা থেকে আসা দৈনিক বার্তার কিছু বড় বড় সাংবাদিক গঠন করেন “রাজশাহী সাংবাদিক ক্লাব”। অফিসটা ছিল সোনাদীঘির মোড়ে।

এখানেও কিছু ‘ইগো’ কাজ করেছে। দৈনিক বার্তা ছিল প্রথম শ্রেণীর জাতীয় পত্রিকা। ঢাকার নামকরা ডাকসাইটে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক এখানে যোগদান করেন।তারা মফস্বল শহরের প্রেসক্লাবে ছোট ছোট সাংবাদিকদের সাথে একত্রিতভাবে থাকতে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেননা।অবশ্য সবাই না।প্রখ্যাত সাংবাদিক আজিজ মিসিরসহ(প্রয়াত) আরো কয়েকজন নামকরা সাংবাদিক তাদের সাথে না গিয়ে রাজশাহী প্রেসক্লাবেরই সদস্য হয়েছিলেন।

এরপর ১৯৯২ সালে চারদলীয় জোট আমলে কেন্দ্রীয়ভাবেই শুরু হয় সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজনের ষড়যন্ত্র।মূলতঃ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই সাংবাদিকদের ঐক্যে ফাটল ধরানো হয়।নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।আলাদা হয়ে যায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে),ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এবং জাতীয় প্রেসক্লাব।বিএফইউজে’র একটা অংশ বিএনপি-জামায়াতপন্থী হয়,অন্যটা আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক পরিচয়ে বিভক্তি ঘটে।এতে দুই তরফের কতিপয় নেতার লাভ হলেও, ক্ষতি হয় পুরো সংবাদমাধ্যমের। বৃহত্তর ঐক্যের মৃত্যু ঘটে।

রাজশাহীতেও বিভক্তির এই হাওয়া এসে লাগে।কেন্দ্রের মত রাজশাহীতেও বিএফইউজের দু’টি গ্রুপ হয়।একটি বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত,অন্যটি প্রগতিশীল ধারার সমর্থিত।

এদিকে প্রেসক্লাবের রাজনীতিতেও এর হাওয়া লাগে।১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহি “রাজশাহী প্রেসক্লাব” থেকে কয়েকজন বেরিয়ে গিয়ে আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ” রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাব”।অনেকে এই ক্লাবকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন।বেশ কিছুকাল পর ব্যক্তিদ্বন্দ্ব ও স্বার্থের হানাহানির কারণে রাজশাহী প্রেসক্লাব থেকে আরো কয়েকজন প্রগতিশীল

সাংবাদিক বেরিয়ে গিয়ে গড়ে তোলেন “রাজশাহী মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাব”।দুঃখজনকভাবে রাজশাহীতে তিনটি প্রেসক্লাব হয়ে গেল। বিভক্তি আরো বিস্তৃত হলো।এইভাবে রাজশাহীতে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজনের সৃষ্টি হয়।প্রেসক্লাব আলাদা হয়ে গেলেও এখানকার সাংবাদিকদের মধ্যে বড় ধরনের তেমন বিরোধ দেখা দেয়নি।তবে রাজশাহী প্রেসক্লাবকেন্দ্রীক স্বার্থকে কেন্দ্র করে সমালোচিত ঐ সম্পাদকের ইন্ধনে মাঝে মাঝে একটি মহল বিরোধটাকে চাঙ্গা করে রাখার চেষ্টা করে।এই মহলটি ঐতিহ্যবাহি রাজশাহী প্রেসক্লাবকে

অগণতান্ত্রিকভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য বহু চেষ্টা করেন।এমনকি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে ধর্ণা দিয়েই চলেছেন।তবে এখন মিডিয়ার অফিস আলাদা আলাদা হয়ে যাওয়ায় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকরা আর তেমন আসেননা।প্রেসক্লাব মূলতঃ সাংবাদিকদের একটি চিত্তবিনোদনের জায়গা।তারপরেও প্রশাসনিক সুবিধাসহ নানা সুবিধার জন্য জেলায় জেলায় একটাই প্রেসক্লাব থাকলে সকল পক্ষের জন্য সুবিধা হয়।কিন্তু

রাজশাহীতে ব্যক্তিস্বার্থ,রাজনৈতিক স্বার্থ,ইগো প্রবেলেম,কুক্ষিগত মনোভাব, অগণতান্ত্রিক আচরণের ফলে সৃষ্ট জটিলতা, জবাবদিহিতা,পদ-পদবীর আকর্ষণ, হিংসা-বিদ্বেষসহ নানাবিধ কারণে একীভূত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।তবে আমার বিশ্বাস, রাজশাহী প্রেসক্লাবভিত্তিক জটিলতা দূর করতে হলে কর্মরত সাংবাদিকদের মতবিনিময়ের মাধ্যমে সংবিধান মোতাবেক গণতান্ত্রিক উপায়ে একটা পরিবর্তন নিয়ে আনাটা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

এখানকার সাংবাদিকদের মাথায় এটা কাজ করেনা যে,রাজনৈতিক নেতারা কিংবা প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিরা গায়ের জোরে কখনেই সাংবাদিকদের ঐক্য নিয়ে আসতে পারবেননা।একটি স্বার্থান্বেষী মহল সাংবাদিকদের অনৈক্যকে পুঁজি করে, বিভাজনের সুযোগ নিয়ে খোদ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেই সাংবাদিকদের ব্যবহার করছে।আর সংবাদকর্মীরাও ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য বৃহৎ স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে বিভাজনের ফাঁদে পা দিচ্ছে।এই বিভাজনে লাভবান হচ্ছে সরকার,রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সর্বোপরি

মালিকপক্ষ।এই মালিকপক্ষের সেই আলোচিত ব্যক্তি রাজশাহীতে সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্যের অন্তরায় বলে অনেকে মনে করেন।স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার মালিক সম্পাদক তিনি। সাংবাদিক – কর্মচারিদের শ্রম তিনি শোষণ করেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানকার দু’জন সাংবাদিক জানান।তাঁর পত্রিকা রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞাপন পায়।প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করেন।ডিএফপিতে পত্রিকার প্রচার সংখ্যা এবং ৭ম

ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ বাস্তবায়ন করেছেন বলে তথ্য দিয়ে রেট কার্ড নিয়েছেন। অথচ তার পত্রিকার সাংবাদিকরা মানবেতর জীবনযাপন করেন।তাঁদের ন্যায্য বেতন ভাতা দেওয়া হয়না।৭ম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করলে এ অবস্থা হতোনা।অনোন্যপায় হয়ে তারা অন্য জায়গায় উপার্জনের চেষ্টা করেন।তাদের চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে কী প্রক্রিয়ায়, প্রকৃত কত বেতন তারা পান,তা কেউ বলতে চাননা।তবে শোনা

যায়,সরকারের চোখকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য কাগজ-পত্রে তারা কিছু কৌশল অবলম্বন করে।এখানকার তিন তিনজন সাংবাদিক ২০/২৫ বছর ধরে দিন রাত্রি তাদের রক্ত, ঘাম ঝরিয়ে এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।অথচ অমানবিক কর্তৃপক্ষ তাদের অসহায় পরিবারকে গ্র্যাচুইটির নামে যে পরিমাণ অর্থ দিয়েছে, তা বলার মত না।

তাদের অসহায় পরিবারের কান্না আমরা শুনেছি।প্রয়াত ঐ তিনজন সাংবাদিকই রাজশাহী প্রেসক্লাবের সদস্য ছিলেন।যার কারণে প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ তাদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে যতদূর সম্ভব ঐ অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।একজন প্রয়াত সাংবাদিকের শিশুপুত্রের লেখাপড়া খরচের জন্য কয়েকলক্ষ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে দিয়েছে।সেই পরিবারের একজন সদস্যকে তদ্বির করে একটি চাকরিও জোগাড় করে দিয়েছে।

আরেক অসহায় পরিবারের জন্য ক্লাবের সদস্যদের চাঁদার মাধ্যমে কিছু আর্থিক সহযেগিতা করেছে।অথচ দুঃখের বিষয়,পত্রিকা কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা নামমাত্র।ওয়েজবোর্ড মোতাবেক পাওনা পরিশোধ করা হয়নি।তিনি নাকি সাংবাদিকদের কল্যাণ চান!এই কী কল্যাণের নমুনা!সাংবাদিকরা একতাবদ্ধ হয়ে যেন বেতন-ভাতার জন্য আন্দোলন করতে না পারে, সেজন্য সাংবাদিকদের ভিতরে তিনি বিভাজন সৃষ্টি করে রেখেছেন।

রাজশাহীতে বর্তমানে মিডিয়া তালিকায় ১০টি পত্রিকার নাম রয়েছে।এগুলোর যে প্রচার সংখ্যার উল্লেখ আছে,অভিজ্ঞজনরা তা দেখলে হাসি পাবে। বিজ্ঞাপন হারে কম বেশি আছে,কিন্তু সবগুলো পত্রিকা রেট কার্ড পেয়েছে। অথচ এসব পত্রিকায় সাংবাদিকদের যে বেতন দেয়া হয়,তা একজন ডেইলি লেবারের চেয়েও অনেক কম।

দৈনিক সানশাইন পত্রিকার বিজ্ঞাপনের হার সবচেয়ে বেশি এবং তারা ৮ম ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ বাস্তবায়ন করেছে বলে ডিএফপিতে তথ্য রয়েছে। তারা আদৌ কী ৮ম ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা দেয়?শর্ত মোতাবেক যে ভাতাদি বা অন্যান্য সুবিধাদি দেওয়ার কথা,তাকি দেয়া হয়?যদি দেওয়া হতো তবে সেখানকার সাংবাদিকদের এত দুঃখ-কষ্ট থাকতোনা।কাগজে-কলমে কিন্তু সব ফিটফাট করা থাকে।

এখানে কর্মরত সাংবাদিকরা সবকিছু জেনেও চাকরি থেকে বাদ দিবে বলে মুখ বুজে কাজ করে যায়।তার মধ্যে সাংবাদিক ইউনিয়নের কয়েকজন নেতৃবৃন্দও এখানে চাকরি করেন।দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকার প্রচার সংখ্যা দেওয়া আছে ৩০ হাজার, বিজ্ঞাপনের হার তাদের কিছুটা কম।কিন্তু ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ নেই।তার মানে বাস্তবায়ন নেই (তথ্য সূত্রঃ ডিএফপি)। সেখানেও সাংবাদিকরা অত্যন্ত অর্থনৈতিক কষ্টে ভোগেন।

বাকিগুলোর বিজ্ঞাপনের হার কিছুট কম, কিন্তু সবাই রেট কার্ড পেয়েছে।সেখানে কর্মরত সাংবাদিকরা কীভাবে, কত পরিমাণ বেতন পান, তা তারা মান ইজ্জতের ভয়ে কোথাও বলেননা।
সংবাদপত্রকে ঘিরে কী পরিমাণ যে দুর্নীতি হয়,বাইরের পাবলিক তা ধারণাই করতে পারবেনা।এই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে মালিকরা ফুলে ফেঁপে উঠে আর সাংবাদিকেরা শোষণ বঞ্চনার শিকার হন।বাধ্য হয়ে পরিবারের

ন্যূনতম খরচ মেটানোর জন্য এইসব পত্রিকার সাংবাদিকদের দুই নম্বর পথ বেছে নিতে হয়।এটাই বাস্তবতা।তাই আমি বলতে চাই,কোন সংবাদপত্র যদি ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ শতভাগ বাস্তবায়ন করে,তবেই কেবল তাদের নির্ধারিত রেটে সরকারি বিজ্ঞাপন পাওয়ার যোগ্য হওয়া উচিত। আমার জানামতে,রাজশাহীর কোনো সংবাদপত্র শতভাগ ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ বাস্তবায়ন করেনি।তাই সাংবাদিক নেতাসহ সবধরনের

সাংবাদিকদের সোচ্চার হওয়া উচিত।কতকাল আর মুখ বুজে থেকে ধুকে ধুকে মরবেন আর সাংবাদিকতা পেশার অমর্যাদা করবেন।অধিকার আদায়ে আন্দোলনের বিকল্প নেই।এই আন্দোলনের একমাত্র শক্তি বৃহত্তর ঐক্য। দলমত নির্বিশেষে, ছোট-বড় ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সকলে একত্রিত হন।নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করেন।রাজনেতিক নেতা, মালিকপক্ষের আশীর্বাদ আপনাদের ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।দুঃখের বিষয়,রাজশাহীতে পূর্বে

যারা সাংবাদিক নেতা ছিলেন কিংবা এখনো যারা আছেন,কেউ নিজেদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হননা,উল্টো মালিকপক্ষকেই তারা সমর্থন দেন। ওয়েজ বোর্ড সকল সাংবাদিকের ন্যায়সঙ্গত প্রাপ্য।কিন্তু মালিকরা সাংবাদিকদের প্রতি অবিচার করে চলেছে।সকলে একযোগে দাবি জানান,ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করেই সংবাদপত্র মালিকদের সুযোগ সুবিধা নিতে হবে,নচেৎ নয়।যুগ যুগ ধরে দুষ্ট মিডিয়ার মালিকপক্ষ এবং রাজনৈতিক চক্রের ফায়দা হাসিল থেকে রক্ষা পেতে ভেদাভেদ ভুলে রাজশাহীর সাংবাদিকরা বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলুন।নিজেরা সুস্থ মত বাঁচুন।রাজশাহীবাসিকে সুস্থ রাখুন।জয় হোক সাংবাদিকের,জয় হোক সাংবাদিকতার।
লেখক: গোলাম সারওয়ার
প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
[email protected]

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST