বিশেষ প্রতিবেদক :
প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে লাগামহীনভাবে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এমনকি প্রতি ঘণ্টাতেও পেঁয়াজের বেড়ে যাচ্ছে। গত কিছুদিন ধরে পেঁয়াজের দাম কম আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকলেও এখন তা মধ্যবিত্তদের কেনার ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। রাজশাহীর বাজারে মাত্র একদিনের ব্যবধানে ১৮০ টাকা থেকে ২৬০ কেজিতে উঠেছে পেঁয়াজের দাম। দাম বেড়ে যাওয়ায় তা মধ্যবিত্ত মানুষেরও ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। শুক্রবার সরজমিনে রাজশাহী মহানগরীর বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না থাকায় সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্রেতারা। পেঁয়াজ সিন্ডিকেটকে
দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে এসে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ক্রেতারা। যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এমন সিন্ডিকেট করে মানুষের পকেট কাটতে না পারে। গত দুই আড়াই মাস ধরে পেঁয়াজের দাম বাড়তি থাকলেও এখন তা নিয়ন্ত্রণের বাইরেই চলে গেছে। গত ১৫ দিন আগেও পেঁয়াজ ৬৫/৭০ টাকা থাকলেও সেঞ্চুরি পার করে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এরপর মাত্র ৩/৪ দিনের ব্যবধানে ১৮০ টাকা কেজিতে খুচরা বিক্রি হয়। এবার মাত্র একদিনের ব্যবধানেই ৮০ টাকা বেড়ে ২৬০ টাকা কেজিতে উঠে। শুক্রবার সরজমিনে
কোর্ট স্টেশন ও হড়গ্রাম বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা কেজি। তবে তাম বেশি হওয়ার কারণে পেঁয়াজ খুব কম মানুষই কিনছেন। কিনলেও পরিমাণে কম। অনেক ক্রেতাকে দাম শুনেও ঘুরে যেতে দেখা গেছে। আবার কোন কোন ক্রেতাকে দোকানীর সাথে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়তেও দেখা গেছে। লালু নামের এক ক্রেতা বলেন, পেঁয়াজের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে কেনা সম্ভব নয়। এখনই উচিত সরকারের এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া। অভিযান চালিয়ে পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের সদস্যদের কঠোর শাস্তি দেয়া। যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে কম আয়ের মানুষতে দুরের কথা মধ্যম আয়ের
মানুষেরাও কিনে খেতে পারবেনা। এখনই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আব্দুল্লাহ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার পরও সরকারের পক্ষ থেকে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা তা আমাদের বোধগম্য নয়। এখনই সময় সারাদেশে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো। এখন অভিযান না দিলে জনগনই হয়তো এক সময় মাঠে নেমে যাবে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। সোহরাব নামের এক ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপ জরুরী।
সরকার হস্তক্ষেপ করলে দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা পেঁয়াজ কিনতে পারছিনা। হড়গ্রাম বাজারে ২৬০ কেজিতে বিক্রি হলেও নগরীর অন্য বাজারগুলোতে ১০/১৫ কম দামে বিক্রি হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। বাজারে আগে যেভাবে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা যেত বর্তমানে সেভাবে দেখা যাচ্ছেনা। অনেক বিক্রেতা যারা শুধু পেঁয়াজ বিক্রি করতেন তারা বর্তমানে পেঁয়াজ বিক্রি করা ছেড়ে দিয়েছেন। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক পেঁয়াজ বিক্রেতা বলেন, আগের তুলনায় বর্তমানে পেঁয়াজ খুব কম বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে দাম বেশি। শুধু পেঁয়াজ বিক্রি করে আগে পোষালেও দাম
বেড়ে যাওয়ার পরে পোষাচ্ছেনা তাই এখন পেঁয়াজ বিক্রি করা ছেড়ে দিয়ে অন্য সবজির ব্যবসা করছি। আরো এক পেঁয়াজ বিক্রেতা বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকে পেঁয়াজ খুব কম বিক্রি হচ্ছে। অনেক ক্রেতা দাম শুনেই ঘুরে চলে যাচ্ছেন। কম বিক্রি হওয়ার কারণে এখন কম পেঁয়াজ নিয়ে আসছি। লাভও খুব বেড়েছে তা নয়। কারণ পাইকারি বাজারেই দাম বেশি। পাইকারি বাজারে দাম কমলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারবো। শুধু নগরেই নয় জেলার ৯টি উপজেলাতেও পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজি ছাড়িয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শুধু যে পেঁয়াজের দাম বেড়েঠে তা নয় অন্য সবজির দাম বেড়েছে। প্রত্যেক
ধরণের সবজির দাম অনেক বেশি। এ নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগের শেষ নেই। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। বেশি দামে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করা ছাড়া উপায় নেই। কম দামে কিনতে পারলে কম দামে বিক্রি করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে কথা বলতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক হামিদুল হক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
আর/এস