নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মহানগরীর লক্ষীপুরে অবিস্থত ফার্মেসীগুলোতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে স্যাম্পুল ওষুধ। আর এতে করে প্রতারিত হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। এসব দোকান থেকে একেতো স্যাম্পুল ওষুধ বিক্রি হয়। সেই সাথে দামও ধরায় আকাশ ছোঁয়া। বিশেষ করে দিনের বেলায় যা হয় তা কিছুটা সাধ্যের মধ্যে হলেও রাতের বেলায় সেই ওষুধের দাম দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। এ কারণে রোগীর স্বজনদের পড়তে হয় হয়রানি ও বেশি খরচের মধ্যে। এ নিয়ে রোগীর স্বজনদের যেন অভিযোগের শেষ নেই। কিন্তু কে করবে এর প্রতিকার। প্রতি মুহূর্তেই পড়তে হয় হয়রানির মধ্যে। যেসব রোগীর জন্য রাতের বেলা ওষুধের প্রয়োজন হয় তা দায়ে পড়ে বেশি টাকায় ওষুধ কিনে প্রতারিত হন। তাও আবার স্যাম্পুল ওষুধ। স্যাম্পুল ওষুধ বিক্রির জন্য না হলেও এগুলো অনিয়ম করে বিক্রি করছে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা।
সরজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কে কেন্দ্র করে হাসপাতালের আশেপাশে অনেক ফার্মেসী গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে কিছু ফার্মেসী ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা না করলেও বেশির ভাগ ফার্মেসীর মালিকরা রোগীদের সাথে প্রতারণা করছেন।
নওগাঁ জেলার সাপাহার থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছেলেকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছেন কৃষক জমশেদ আলী (৫০)। রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন তার ছেলে জসিম (২২)। সকালে রামেক হাসপাতালে পৌঁছার পরে লক্ষ্মীপুর মোড়ে ওষুধ কিনতে যান জমশেদ আলী। হাসপাতাল থেকেই দালাল পিছু নিয়েছে। অচেনা জায়গায় দেবতা হয়ে কাছে আসা দালাল চক্রে পড়ে যান তিনি। লক্ষ্মীপুর মোড়ে একটা দোকান থেকে ওষুধ কেনেন নি। পরে দেখা যায় জমশেদ আলীকে দেয়া ওষুধগুলোর বেশিরভাগ স্যাম্পুলের।
বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা চিকিৎসকদের প্রতিদিন শত শত প্যাকেট স্যাম্পুল দিয়ে থাকে। যার প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে ‘বিক্রয়ের জন্য নয়’। কিন্তু ওইসব ওষুধ নানান হাতঘুরে আবার চলে যাচ্ছে বেশকিছু অসাধু দোকানিদের হাতে। তারা সেসব ওষুধ আবার বিক্রি করছে রোগির স্বজনদের কাছে।
জানা গেছে, রামেক হাসপাতালের পাশে লক্ষীপুর ও তার আশেপাশের এলাকায় বেশ কিছু ওষুধের দোকান গড়ে উঠেছে বিক্রয় প্রতিনিধিদের দেয়া স্যাম্পুলের ওষুধ নিয়ে। এসব আবার বিক্রি করা হয় সাধারণ মানুষের কাছে। বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা মানুষগুলোকে ওইসব ওষুধের দোকানগুলো টার্গেট করে থাকে। এসব ওষুধের দোকানগুলোর বেশিরভাগ লাইসেন্সবিহীন। ওধুষ প্রশাসনকে প্রতি মাসে অর্থ দিয়ে এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা দেদারচে তাদের ব্যবসা করে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক সময় ২০ টাকার ওষুধ ৫০০ টাকাও দাম নেয়। আবার ৫০০ টাকার ওষুধ বারশত টাকায় বিক্রি করে এমন অভিযোগও রয়েছে।
লক্ষীপুর ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের বিপরীত দিকের গলির মধ্যে অবস্থিত বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকান, মডেল মেডিসিন মার্কেট, পপুলার ডায়াগনেস্টেক সেন্টারের নিচে, শাপলা ডায়াগনেস্টি মিলিয়ে ১৫ থেকে ২০টি ওষুধের দোকানে শুধু স্যাম্পুলের ওষুধ বিক্রি হয়ে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় লোকজন জানান, রাজশাহী শহরে বিশেষ করে লক্ষ্মিপুর এলাকায় কিছু ওষুধের দোকানের লাইসেন্স নেই। তারা ওধুষ প্রশাসনকে হাতে রেখে বুক ফুলিয়ে অবৈধভাবে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন আরো অভিযোগ করেন, ওষুধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় সময় লক্ষ্মিপুর মোড়ে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু চোখের সামনে যারা ভালো ব্যবসা করে তাদের দোকানেই ঘুরেফিরে অভিযান। অলিগলিতে বসে থাকা দোকানগুলোতে অভিযান চলে না।
রাজশাহী ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মীর্জা মোহাম্মদ আনোয়ারুল বাসেদ জানান, ওধুষের দোকানগুলোতে অভিযান প্রায় সময় চালানো হয়ে থাকে। স্যাম্পল বিক্রির বিষয়টি তিনি আরো শক্তভাবে দেখবেন।
ওষুধ প্রশাসনের গাফিলতির বিষয়ে তিনি মীর্জা মোহাম্মদ আনোয়ারুল বাসেদ জানান, এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন। ওষুধ প্রশাসনের কোন অবহেলা নেই। মনিটরিং এর সমস্যা হয়ে থাকে জনবল সংকটের কারণে।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে