বিশেষ প্রতিবেদক :
রাজশাহী জেলার জন্য বরাদ্দ জ¦ালানী তেল পার্বতীপুরে চলে যাওয়ার কারণে পাম্পগুলো তেল সংকটের মধ্যে পড়েছে। ব্যবসা ঠিক রাখতে বিকল্প পদ্ধতিতে বাঘাবাড়ি থেকে তেল নিয়ে আসার কারণে খরচ বেশি হওয়ায় লোকসানের মধ্যে পড়েছেন পাম্প মালিকরা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ বলছেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বিপিসির সিদ্ধান্তে রাজশাহীর বরাদ্দ তেল উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় ডিপো পার্বতীপুরে গেছে। তাদের কিছু করার নেই। বোরো মৌসুম হওয়ায় জমিতে সেচ দেওয়ার কারণে সেখানে চাহিদা বেড়েছে। এ জন্য তেল সেখানে চলে গেছে। বিশেষ করে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেনের চাহিদাই বেশি রয়েছে।
বিকল্প পদ্ধতিতে বাঘাবাড়ি থেকে তেল নিয়ে আসার কারণে খরচও বেড়েছে। খরচ বাড়ায় তা পুষিয়ে নিতে সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে মালিকদের। তবে গ্রাহকদের অভিযোগ, পাম্প মালিকরা লোকসান করে না। তারা গ্রাহকদের থেকেই সেই বেশি খরচের টাকা উঠিয়ে নিচ্ছে। এতে মুল ক্ষতি হচ্ছে গ্রাহকদের। গ্রাহকদের থেকেই সেই টাকা উঠানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি মাসে খুলনা থেকে রেলওয়ের মাধ্যমে রাজশাহীতে ৩০টি অরগানে করে তেল আসে। পদ্মার জন্য ১০টি অরগান, মেঘনার জন্য ১০টি অরগান ও যমুনার জন্য ১০টি অরগান বরাদ্দ থাকে। সেখান থেকেই বিতরণ করা হয়। কোন কোম্পানীর ডিপোতেই তেল সংরক্ষণ করার সুযোগ নেই। প্রতিবার দুই দফায় তেল আসলেও এবার রাজশাহীর জন্য বরাদ্দকৃত নির্দিষ্ট তেল পাবর্তীপুরে পাঠানো হয়েছে। এ কারণে তেল সংকটের মধ্যে পড়ে রাজশাহীর পাম্পগুলো। গত কয়েকদিন ধরেই রাজশাহীর পাম্পগুলো তেল সংকটের মধ্যে রয়েছে। গত মঙ্গলবার রাজশাহী মহানগরের অনেক পাম্পে তেল ছিলনা বলে জানা গেছে। আর বাঘাবাড়ি থেকে তেল নিয়ে আসলেও খরচ বেশি পড়ছে। এর ভুক্তভোগী হচ্ছে রাজশাহীবাসী।
রাজশাহী জেলা ও মহানগরে প্রায় ৪৫ টি তেল পাম্প রয়েছে। নগর এলাকায় প্রায় ২০টি ও জেলায় প্রায় ২৫ টি রয়েছে।
আব্দুল্লাহ নামের এক গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, পাম্পগুলো ব্যবসা ঠিক রাখার জন্য বাঘাবাড়ি থেকে তেল নিয়ে আসে। সেখান থেকে তেল নিয়ে আসতে খরচ বেশি হয়। কিন্ত তেলের দাম তারা বেশি নিতে পারে না। দাম বেশি না নিলে কিভাবে বাড়তি খরচ উঠছে? তারা কম দেওয়ার মাধ্যমে গ্রাহকদের থেকে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন। এ জন্য গ্রাহকরাই ক্ষতির মধ্যে পড়ছেন। তাই তিনি রাজশাহীর জন্য বরাদ্দ তেল রাজশাহীতে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
মেঘনা অয়েলের সিনিয়র সেলস্ অফিসার মনির হোসেন বলেন, রাজশাহীতে তেলের সংকট নেই। বিকল্প পদ্ধতিতে বাঘাবাড়ি থেকে তেল নিয়ে আসা হচ্ছে। সেখানে মূল ডিপো। মাসের শুরুতেই এই অবস্থা স্বাভাবিক হবে।
এ বিষয়ে পদ্মা অয়েলের ডিপো সুপারিনটেনডেন্ট মাজহারুল ইসলাম রাজশাহীর বরাদ্দ তেল পার্বতীপুরে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের সিদ্ধান্তে রাজশাহীর তেল পার্বতীপুরে গেছে। উত্তরবঙ্গে এখন তেলের প্রয়োজন তাই সেখানে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাদের কিছু করার নেই। বিকল্প পদ্ধতিতে বাঘাবাড়ি থেকে তেল মালিকরা তেল নিয়ে আসছে। খুব বেশি সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে না। আগামী ২ থেকে ৩ এপ্রিলের মধ্যে তেল চলে আসবে। রাজশাহীতে আরো বেশি বরাদ্দ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। রেলওয়ের সাথেও বৈঠক করা হয়েছে। কিন্ত অরগান সমস্যার কারণে সম্ভব হয়ে উঠছে না। প্রতি মাসে খুলনা থেকে রাজশাহীতে ৩০টি অরগান আসে। প্রত্যেক কোম্পানী ১০ টি করে অরগান পায়।
রাজশাহী জেলা পাম্প মালিক সমিতির সভাপতি মনিমুল হক বলেন, এ মাসে কম তেল আসার কারণে তেল সংকট হয়েছে। সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠার জন্য বাঘাবাড়ি থেকে তেল নিয়ে আসা হচ্ছে। তেল নিয়ে আসতে খরচ বেশি হচ্ছে। তবে তা পুষিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিভাবে পুষিয়ে নেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা কোনভাবে পুষিয়ে নেওয়া হয়। পাম্পে তেল সংকট হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। এভাবেই ব্যবসা করতে হচ্ছে। প্রতি বছর এ সময় এমন ঘটনা ঘটে।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে