নিজস্ব প্রতিবেদক : রমজানের শেষ প্রান্তে এসে রাজশাহীর ঈদ বাজারে বইছে উৎসবের আমেজ। বড় বিপণীবিতান থেকে ফুটপাত—সবখানেই উপচে পড়া ভিড়। নগরীর আরডিএ মার্কেট, সাহেববাজার, নিউ মার্কেট ও সিল্ক পাড়ার দোকানগুলোতেও এখন কেনাকাটার ধুম। শহরের প্রতিটি কোণায় যেন ঈদের আগমনী বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। বিক্রেতাদের ডাক আর ক্রেতাদের দরদাম মিলিয়ে পুরো শহরে উৎসবের আবহ তৈরি হয়েছে।
প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদ বাজারে বিশেষ আকর্ষণ ছিল পোশাক। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের বাজারে কিছুটা ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে। যেখানে আগের বছরগুলোতে ভারতীয় পোশাকের আধিপত্য ছিল, এবার সেই জায়গা দখল করেছে পাকিস্তানি পোশাক। সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে ভারতীয় পোশাকের আমদানি ব্যাহত হওয়ায় পাকিস্তানি পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। দেশি পোশাকের পাশাপাশি বাহারি ডিজাইনের পাকিস্তানি থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি এবং শার্ট নজর কেড়েছে ক্রেতাদের। তবে দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় অনেক ক্রেতার মধ্যে অসন্তোষও দেখা গেছে।
সাহেববাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, “সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে এবার ভারতীয় পোশাক আসেনি বললেই চলে। তবে পাকিস্তানি পোশাকের কাটতি ভালো। দেশি পোশাকের পাশাপাশি এসব পোশাক ভালোই বিক্রি হচ্ছে।”
তবে দাম বৃদ্ধির কারণে এবার কেনাকাটা কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে জানান ক্রেতারা। ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম অনেক বেশি। যে বাজেট করেছিলাম, তা দিয়ে কেনাকাটা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বাজেট বাড়াতে হচ্ছে।”
রাজশাহীর ঈদ বাজারের আরেকটি বড় আকর্ষণ হলো সিল্কের পোশাক। সিল্ক পাড়ায় প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ উপলক্ষে রেশমের পোশাকে এসেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। মসলিন সিল্ক, সফট সিল্ক, কাতান ও তসর সিল্কের বাহারি শাড়ি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেছে। পাশাপাশি পাঞ্জাবি ও শেরওয়ানির বিক্রিও ছিল চোখে পড়ার মতো। এবারের বাজারে প্রায় অর্ধকোটি টাকার রেশমের কাপড় কেনাবেচা হবে বলে আশাবাদী সিল্ক ব্যবসায়ীরা। রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশন শো-রুমের মালিক খুরশিদা খাতুন খুশি জানান, এবারের বাজারে মসলিন সিল্কের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। দাম বেড়েছে ঠিকই, তবে বিক্রি মোটেও কমেনি।
তিনি বলেন, “আমাদের মসলিন সিল্কের শাড়ি ১,৭৫০ থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকার মধ্যে রয়েছে। কাতান শাড়ি ৩,৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি করছি। পাঞ্জাবি এবং থ্রি-পিসেও নতুন ডিজাইন আনা হয়েছে। এবারের ঈদ বাজারে প্রায় অর্ধকোটি টাকার রেশমের কাপড় কেনাবেচা হতে পারে বলে আশা করছি।”
অন্যদিকে রাজশাহীর ফুটপাতের বাজারেও ছিল ব্যাপক ভিড়। ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের ক্রেতাদের বেশিরভাগই স্বল্প আয়ের মানুষ। কম দামের মধ্যেও ভালো মানের পোশাক পেয়ে তারা সন্তুষ্ট। গণকপাড়া, সাহেববাজার ও সিরোইল বাসস্ট্যান্ডে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কেনাবেচা চলেছে জমজমাটভাবে।
নগরের কোর্ট এলাকার বাসিন্দা শান্তা বেগম বলেন, “আমাদের মতো নিম্নবিত্ত মানুষদের জন্য ফুটপাতের দোকানই ভরসা। কম টাকায় পরিবারের সবার জন্য পোশাক কিনেছি। তাতেই আমরা খুশি।”
এদিকে ঈদ বাজারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি)। নগরীর বড় বড় মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, “সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত এবং রাতের বেলায়ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরাও মাঠে রয়েছেন। আমরা চাই সবাই যেন নিরাপদে ঈদের কেনাকাটা করতে পারে।”
সব মিলিয়ে শেষ মুহূর্তে রাজশাহীর ঈদ বাজার পেয়েছে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। দাম বাড়লেও মানুষের কেনাকাটার উচ্ছ্বাসে কোনো কমতি নেই। ব্যবসায়ীরাও সন্তুষ্ট, ক্রেতারাও খুশি মনে পরিবারের জন্য পছন্দের পোশাক কিনে ফিরছেন বাড়ি। ঈদ আনন্দের এই উৎসব শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অটুট থাকবে বলেই সবার প্রত্যাশা।
বিএ..