নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মহানগরীতে চিকিৎসকের ভুলে শিশু মৃত্যুর অভিযোগে স্বজন কর্তৃক চিকিৎসক কে মারধর ও পরে বিচারের দাবিতে অবস্থানের প্রতিবাদে প্রাইভেট প্রাকটিস বন্ধ রেখে মানবন্ধন করেছেন চিকিৎসকরা। শনিবার সকাল থেকে সন্ধা ৭টা পর্যন্ত নগরীর সব ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো একযোগে বন্ধ রাখা হয়। এতে দুর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। এ সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করাতে পারেননি রোগীরা। তারা দিনভর চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। চিকিৎসা সেবা না পেয়ে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
খোঁজ নিয়ে ও সরজমিনে রাজশাহী মহানগরীর লক্ষীপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ থাকতে দেখা যায়। কিছু প্রকিষ্ঠানের মেইন গেটে দুঃখ প্রকাশ সংবলিত নোটিশ দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে রোগীর সেবা দিতে না পারার কারণে দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
সকাল থেকে চিকিৎসার জন্য রোগীরা বিভিন্ন ও ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে ভিড় জমায়। কিন্ত গেইট বন্ধ থাকার কারণে তারা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন নি। বাইরে বসে অপেক্ষা করতে হয়।
আলেয়া নামের এক রোগীর স্বজন নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, আমার রোগীর চিকিৎসা করা খুব জরুরী কিন্ত পারছি না। আরেক রোগী বলেন, আমার রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেছে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করাতে। কিন্ত বন্ধ থাকার কারণে সম্ভব হচ্ছে না। খুব বিপদের মধ্যে পড়েছি।
আব্দুল্লাহ নামের আরেক রোগী অভিযোগ করে বলেন, চিকিৎসকরা মানুষের সেবা দিয়ে থাকেন। তাদের যদি কোন দাবি থাকে তাহলে সেটা রোগী জিম্মি করে আদায় করতে হবে তা ঠিক নয়। তারা ভালভাবে বসেও সেটা করতে পারে। তারা এভাবে রোগীদের কেন জিম্মি করে তা বোধগম্য নয়। দেশে এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার।
এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপকের সাথে কথা হলে তিনি নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, বিএমএ’র সিন্ধান্ত ও ওনার্স এসোসিয়েশনের একাত্মতা মোতাবেক কিøনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ রাখা হয়েছে। রোগীর কষ্ট হলেও কিছু করার নেই।
আয়াতুল্লাহ নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, আমি সকাল ১০টার সময় রাজশাহীতে রোগীকে নিয়ে এসেছি। কিন্ত সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্তও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। তাই রোগীর চিকিৎসা নিয়ে আমি অনিশ্চিত। হয়তো রোগীর চিকিৎসা করাতে পারবো না।
ছবিঃ সরবরাহকৃত
প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোখলেসুর রহমান বলেন, বিএমএ’র সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ রাখা হয়। ওনার্স এসোসিয়েশন শুধু তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। প্রথমে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত হলেও দুপুরে সভা ডেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এর সময় বাড়ানো হয়। সন্ধ্যা ৭টা থেকে সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক খোলা হয়েছে।
এদিকে, দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ গেইটে চিকিৎসকের উপর হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করা হয়। বিএমএ ও প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশন এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধন থেকে শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ছানাউল হক এর উপর হামলাকারীদের শাস্তির দাবি জানানো হয়। এতে চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চিকিৎসকের ভুলে শিশু রাফি মৃত্যুর অভিযোগ তুলে স্বজনরা চিকিৎসক ছানাউল হককে মারধর করে। পাল্টা পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্টাফরাও রোগীর স্বজনদের মারধরে করে। এরপর চিকিৎসকের বিচারের দাবিতে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই শিশুর কোন ভুল চিকিৎসা করা হয়নি। না জেনেই রোগীর স্বজনরা চিকিৎসককে মারধর করেছে।
উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত র্যাব ও পুলিশ সদস্য অবস্থান নেয়। পরে শিশুর স্বজনরা লাশ নিয়ে চলে যায়। পরে চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্রাকটিস বন্ধসহ মানববন্ধনের কর্মসূচী ঘোষণা করেন।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে