নিজস্ব প্রতিবেদক : মামলার সুষ্ঠ তদন্ত ও প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবিতে রাজশাহী মহানগরীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর সিটি প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, নিহত স্কুলছাত্রী হাসিনা খাতুন (১২) এর বাবা হোসেন আলী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাজশাহী মহানগরীর কর্ণহার থানার বারইপাড়া গ্রামের আকবর আলীর ছোট মেয়ে নাজমা বেগমের সাথে আমার বিয়ে হয়। শ^শুর ও শাশুড়ির সাথে আমার কোন দ্ব›দ্ব ছিলনা ও নেই। আমি তিন সন্তানের জনক। এরমধ্যে ৫ম শ্রেণীর সমাপনি পরীক্ষা দেয়া মেয়ে হাসিনা খাতুন (১২) বছর বয়সি ছিল। সে বারইপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণীর সমাপনি পরীক্ষা দিয়েছিল। গত গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখে বারইপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাদারের গান শোনার জন্য তার নানা আকবরের বাড়িতে বেড়াতে যায়। ১৫ তারিখ রাত আনুমানিক ৮টার দিকে আমার শ্বশুর আকবর ও শাশুড়ি শাবানুর বেগম দুইজন মিলে
হাসিনাকে বাড়িতে একা রেখে মেইন গেটে তালা লাগিয়ে মাদারের গান শুনতে যায়। তারা গান শুনে রাত আনুমানিক পৌনে ১২ টার দিকে নিজ বাড়িতে ফিরে দেখতে পান যে, কে বা কারা আমার মেয়ে হাসিনাকে ধর্ষণ করে গলা কেটে হত্যা করে ফেলে রেখেছে। পরে বিষয়টি আমাকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানান। ঘটনার পর আমি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্ণহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করি। মামলাটি দায়েরের কয়েকদিনের মধ্যেই সেটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিকেশন (পিবিআই) তে স্থানান্তর করা হয়। পিবিআই এর তৎকালীন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মহিদুল ইসলাম ২০১৯ সালের মার্র্চ মাসের ১৩ তারিখে উল্টো আমার শ্বশুর আকবর আলীকে গ্রেফতার করে। শ্বশুর ৪ মাস ১২ দিন কারাগারে ছিলেন। এরপর জুলাই মাসে অপরাধীদের না ধরে উল্টো হাসিনার নিজের মামা অর্থ্যাৎ আমার শ্যালক নাজমুল হক বাচ্চুকেও গ্রেফতার করে পিবিআই’র এসআই মহিদুল ইসলাম। আটকের আমার শ্যালক বাচ্চুকে পুলিশ স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন করে। পরে উচ্চ আদালত থেকে আমি নিজেই তাদের জামিনের ব্যবস্থা করি। অথচ ঘটনার দিন আমার শ্যালক নিজ বাড়িতে ছিলো না। সে তার তার বড় বোন নগরীর রাজপাড়া থানার লক্ষীপুর মিঠুর মোড়ে জেসস রেবেকা সুলতানার বাড়িতে ছিলেন। বিষয়টি প্রতিবেশী ও
স্থানীয়রা সবাই জানেন। ঘটনার রাতেও আমার শ^শুর ও শাশুড়ি মাদারের গান শুনেছিল তার সাক্ষী প্রায় পুরো গ্রামের লোক রয়েছে। পুলিশকেও বিষয়টি একাধিকবার জানানো হয়েছে।
এতকিছু জানানোর পরেও অজ্ঞাত কারণে পিবিআই’র এসআই আমার শ^শুর ও শ্যালককে গ্রেফতার করে। আমি পুলিশকে কর্ণহার থানার বারইপাড়া গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে হেলাল ও একই গ্রামের মজিদের ছেলে মাসুমের নাম সন্দেহভাজন হিসেবে বললেও পুলিশ এদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, পিবিআই’র তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার জন্য আমর নির্দোষ শ^শুর ও শ্যালককে দোষারোপ করছে। মামলার সুষ্ঠ তদন্ত না করে ও প্রকৃত আসামীদের না খুঁজে আমার মেয়ে ছোট থেকে যে পরিবারে বড় হয়েছে সেই পরিবারের মানুষকেই গ্রেফতার করেছে। আমার শ্বশুর ও শ্যালক এ ঘটনার সাথে কোনভাবেই জড়িত নয় বলে আমরা বিশ্বাস করি। কারণ আমার মেয়ে ছোট থেকে সে বাড়িতে মানুষ হয়েছে।
এদিকে, ঘটনাস্থল থেকে পিবিআই আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠায়। সেই আলামত পরীক্ষার রিপোর্ট ভালো দেয়ার নাম করে আমার শ্বশুর আকবর আলীকে দিলীপ কুমার সাহা নামে গত ২০১৯ সালের আগস্ট মাসের ৮ তারিখে ০১৪০৪-৪৫৮১৬৯ নম্বর থেকে কল দিয়ে ঘুষ চাওয়া হয়। ঘুষ
চেয়ে বলেন, যে আলামত পাওয়া গেছে সেটি ফরেনসিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা করা হবে। রিপোর্ট আপনাদের পক্ষ দিতে হলে খরচ দিতে হবে। টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেন অথবা ঢাকায় নিয়ে আসেন। আমরা বিষয়টি রেকর্ড করে রেখে পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদকে দিয়েছি। কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
আমার শ্বশুর ও শ্যালক ঘটনার সাথে কোনভাবেই জড়িত নয় এমন কোর্ট এপিডেভিটও করে দিয়েছে। তারপরও পুলিশ আমার শ্¦শুর ও শ্যালকের পেছনেই পড়ে রয়েছে। শ্বশুর ও শ্যালকের ব্যাপারে আমার কোন অভিযোগ নেই। কিন্ত বিষয়টি পুলিশ না শুনে উল্টো আমার পরিবারকেই হুমকি দিচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা খুব সমস্যার মধ্যে আছি। মামলাটি সুষ্ঠ তদন্ত করা প্রয়োজন। কিন্ত মামলাটির আগের তদন্তকারী কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম প্রভাবশালীদের পক্ষ হয়ে উল্টো আমাকেই হুমকি দিয়েছে। আমাদের কথাই শুনেনি। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন পিবিআই’র এসআই গৌতম।
এ বিষয়ে মামলার আগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাদীর শ্বশুরের চলাফেরা আচরণ সন্দেহজনক হওয়ার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়। নানাকে গ্রেফতারের ৪ মাস পর শ্যালককে কেন গ্রেফতার করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নানার মাধ্যমেই কোন ক্লু পাওয়া যায় কিনা তাই গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে বাদীর শ্যালককে সন্দেহ
হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। বাদী পক্ষ যাদের সন্দেহভাজন বলে আপনাদের জানিয়েছে তাদের কেন জিজ্ঞাসাবাদ করেননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি তাই করেনি। আমার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সত্য নয়।
বর্তমান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গৌতমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মামলা তদন্তরে স্বার্থে আমি কোন মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বাদীর স্ত্রী নাজমা বেগম, জেসস রেবেকা সুলতানা, জেসসের শাশুড়ি মৃত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী অমেলা বেওয়া, আব্দুল মান্নান, শিলা বেগম, বাদীর শ্বশুর আকবর আলী ও শ্যালক নাজমুল হক বাচ্চু।
এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মহিদুল খবর ২৪ ঘন্টা সংবাদ প্রকাশের পর বলেন, আসামিদের সাথে ডিএনএ ম্যাচ করায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল কিন্তু মামলার বাদী ভুক্তভোগীরা বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।
এসআর