সারাদেশে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ শনিবার সকাল থেকে রাজশাহীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। এ সময় বিভিন্ন এলাকার সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় তাঁদের। এদিন ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয় ভাঙচুর করাসহ সংবাদকর্মীকেও লাঞ্ছিত করা হয়।
সকাল ১০টার দিকে আন্দোলনকারীরা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সামনে জড়ো হন। পরে তাঁরা রুয়েটের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। একই সময়ে নগরীর নর্দান মোড় থেকে আন্দোলনকারীদের আরও একটি মিছিল এসে সড়ক অবরোধকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়।
এ সময় বৃষ্টি কারণে তালাইমারী মোড়ে অবস্থান নেওয়া পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে সরে যান। তবে বিক্ষুব্ধরা এই বৃষ্টির মধ্যেই তাঁদের আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যান। পরে পুলিশ আবারও সেখানে সতর্ক অবস্থান নেয়। পরে আন্দোলনকারীরা রুয়েটের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তালাইমারি হয়ে নর্দান মোড়ে যান। সেখান থেকে ঘুরে একই স্থানে এসে আবারও বিক্ষোভে কর্মসূচিতে মিলিত হন। এদিকে
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে অংশ নেওয়া রাবির কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. ফজলুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আমরা তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছি। আর কত ঘরে বসে আমার ছেলেদের রক্ত দেখবো। শিক্ষার্থীদের গায়ে গুলি করতে স্বৈরাচার সরকারের কি একটুও বুক কাঁপেনি? আজ থেকে এ আন্দোলনে গুলি চালালে সেই গুলি আগে শিক্ষকদের গায়ে লাগবে, তারপর আমাদের ছাত্রদের। শিক্ষার্থীদের আর কোনো ভয় পাওয়ার কারণ নেই, তাদের পিতৃতুল্য শিক্ষকরা আজ থেকে তাদের সামনে থাকবেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে আমরা একাত্মতা পোষণ করছি এবং তাদের সুরক্ষা দিতে সবসময় তাদের সঙ্গেই আমরা আছি।
পরে তাঁরা তালাইমারি মোড়, ভদ্রা হয়ে রেলগেট পর্যন্ত যান। এ সময় ভদ্রায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। এরপর শহরের রেলগেট এলাকায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলা হয়। সেখানে একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সও ভাঙচুর করা হয়। পরে ভদ্রায় গিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় আন্দোলনকারীদের। এই কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকে শহরে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিকে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে রাজশাহী মহানগর পুলিশের এক সদস্যকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। তাঁকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি তিনজন সংবাদকর্মীকেও লাঞ্ছিত করা হয়।
নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. মোবারক পারভেজ জানান, আন্দোলনরত ব্যক্তিরা সকাল থেকে বিক্ষোভ করলেও পরিস্থিতি এখনো পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। তালাইমারীতে অবরোধ করলেও বিভিন্ন যানবাহন পাশের বিকল্প সড়ক ব্যবহার করছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েটসহ আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কেউ জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির চেষ্টা করলে পুলিশ তা প্রতিরোধ করবে।
সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা ও খুনের প্রতিবাদ এবং ৯ দফা দাবিতে আজ সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ সংশ্লিষ্টদের আজ রুয়েট গেটে জমায়েত হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন।
জ/ন