ওমর ফারুক :
রাজশাহী মহানগরসহ আশেপাশের জেলা-উপজেলায় দ্’ুদিনের টানা বৃষ্টিতে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। একটানা বৃষ্টিতে স্বাভাবিক জনজীবন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নগরজীবনে স্থবিতরতা নেমে আসলেও শীষ ফোটা অবস্থায় টানা বৃষ্টিতে আমনের ক্ষতির শঙ্কা করছেন কৃষকরা। কারণ এ সময় কোন কোন জমির ধানের শীষ ফুটেছে আবার কোন জমিন শীষ ফুটন্ত অবস্থায় রয়েছে। ফুটন্ত শীষের ফুল ঝরে গেলে ও ধান গাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে কাঙ্খিত ফলন না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত দুই তিন বছর ধরে এ সময় বৃষ্টি ও বাতাস হওয়ার কারণে আমন ধান পড়ে ফলন কম হচ্ছে। ধানের মধ্যে পাতান থাকার কারণে দামও
কম পাচেছন কৃষকরা। আর দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষজনও পড়েছেন বিপাকে। বৃষ্টির কারণে তারা কাজের সন্ধানে বাইরে বেরত হতে পারছেন না। বের হতে না পারায় আয় রোজগারও দুই দিন ধরে বন্ধ হয়ে গেছে। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষরা ছেলেমেয়ে নিয়ে বিপদের মধ্যে পড়েছেন। স্বাভাবিক দিনের তুলনায় বৃষ্টির মধ্যে রাস্তাঘাটে মানুষ কম দেখা যাচ্ছে। সেই সাথে রিক্সা-অটোরিক্সাসহ অন্যান্য যানবাহনও কম দেখা যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার বেলা ১১টার পর থেকে রাজশাহীর আকাশে সূর্য দেখা যায়নি। মেঘলা আকাশ দেখা যায়। মেঘের কারণে সূর্যের দেখা না মেলায় বুধবার থেকেই রাজশাহীর আবহাওয়া শীতল হয়ে যায়। ওই দিন গভীর রাত থেকেই শুরু হয় বৃষ্টিপাত। রাতে
ভারি বৃষ্টি হলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে থেমে থেমে একটা ঝিরি বৃষ্টি হয়। বৃষ্টিতে স্কুল-কলেজগামী ছাত্রী, অফিস-আদালতগামী মানুষ ও দিনমজুররা ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পড়েন। বৃহস্পতিবার দিন ও রাতে টানা বৃষ্টি হয়। শুক্রবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বৃষ্টি হয়। এদিনও দিনমজুররা কাজের সন্ধানে বের হতে পারেন নি। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় অন্যান্য দিনের তুলনায় কর্মজীবী মানুষদের কম বের হতে হয়েছে। যারা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছেন তারা রাস্তায় রিক্সা-অটোরিক্সার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। তারপরও বৃষ্টির কারণে অন্যান্য দিনের তুলনায় ভাড়া বেশি দিতে হয়েছে। নগরের রাস্তাঘাটে তেমন
মানুষ দেখা যায়নি। এদিকে, দু’দিনের টানা বৃষ্টির কারণে আমনের ক্ষতির শঙ্কায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। প্রথম দিনের বৃষ্টিতে আমনের উপর তেমন প্রভাব না পড়লেও শুক্রবারের টানা বৃষ্টিতে আমনের ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি দেখছেন কৃষকরা। তবে কৃষি অফিস থেকে আমনের ক্ষতি হবে না জানিয়ে কৃষকদের না চিন্তিত হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। আমনের বেশি ক্ষতি না হলেও সরষে বপন বিলম্বিত হবে। রাজশাহীর ৯ টি উপজেলার বিভিন্ন নিচু এলাকার আমন ধানের গাছ ইতিমধ্যেই পড়ে গেছে। কোন কোন জমিতে পানি জমে গেছে। তবে সব এলাকার ধান পড়েনি। ধান না পড়লেও টানা বৃষ্টিতে ফুটন্ত শীষের ফুল ঝরে ফলন ব্যাহত
হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন কৃষকরা। রাহিমুল নামের এক কৃষকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার ধান পড়ে গেছে। জমির আইল কেটে দিয়েছি। যাতে পানি জমতে না পারে। কিন্ত দীর্ঘ সময়ের পানিতে ফুল ঝরে গেছে। ফুল ঝরলে ফলন কম হয় আর পাতান বেশি হয়। প্রতি বছর এ সময়ের বৃষ্টিতে ধান গাছ পড়ে ফলন কম হয়। তার উপর আবার দামও ভালো পাওয়া
যায়না। শুধু আমারই নয় অনেক কৃষকের জমির ধান পড়ে গেছে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল হক বলেন, টানা বৃষ্টিতে আমনের তেমন ক্ষতি হবে না। ধান গাছ যদি মাটিতে লুটিয়ে না পড়ে তাহলে ক্ষতি হবে না। আর যদি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তাহলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরষে বপন বিলম্বিত হবে। পানি না জমলে তেমন ক্ষতি হবে না। শনিবার বৃষ্টি হলে কৃষকদের পরবর্তী পরামর্শ দেওয়া হবে না।
আর/এস