বিশেষ প্রতিবেদক :লাইনে দাঁড়ানো টিকিট প্রত্যাশীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট না পেলেও এক অসাধু কালোবাজারি চক্র সেই টিকিট হাতিয়ে নিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করেছেন।
অনলাইন টিকিট সিস্টেমেও কালোবাজারিরা তাদের অশুভ ছায়া ফেলেপ্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। আর সেই গুনেই কামিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। রাজশাহী থেকে ঢাকার সাধারণ নন এসি টিকিটের মূল্য ৩২০ টাকা হলেও এই কালোবাজারি চক্রটি অসাধু
কর্মকর্তাদের যোগসাজোশে সেই টিকিটের দাম নেই ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। আর এসি ও কেবিনের মূল্য যে দামে বিক্রি করতো তা সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। খবর ২৪ঘণ্টার হাতে এমন তথ্য ও অডিও রেকর্ড রয়েছে। যাতে নগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া লিয়াকত আলী বিভিন্ন শ্রেণীর টিকিটের দরদাম করছেন। যা শুনলে যেকোন মানুষই অবাকহয়ে যাবেন। অবশ্য পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে লিয়াকতআলী সেই টিকিটের দরদাম করেন এক চিকিট প্রত্যাশীর কাছে।
গ্রেফতার হওয়ার আগ থেকেই খবর ২৪ ঘন্টা এই সিন্ডিকেটের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাচ্ছিল। কিন্ত হঠাৎ করেই কথিত শ্রমিক লীগ নেতা ও রিমন নামের দুইজন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন।লিয়াকত আলী কিছু রেল কর্মকর্তার যোগসাজোশে নিজেরএলাকা স্টেশন বাজারকে বেছে নেন। সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতেন এইসব টিকিটের কালোবাজারি। লিয়াকত নগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন শিরোইল স্টেশনপাড়া এলাকার মৃত ভাদু শেখের ছেলে ও মাবুদ ওরফে রিমন একই থানার শিরোইল মঠপুকুর মোড় এলাকার আশরাফ আলীর ছেলে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাতীয় রিকশা-ভ্যান শ্রমিকলীগরাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি, রিকশা-ভ্যান শ্রমিক মালিক ফেডারেশন সমন্বয় পরিষদের রাজশাহী মহানগর শাখার আহবায়ক ওজাতীয় জাতীয় শ্রমিক লীগ রাজশাহী শাখার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক লিয়াকত আলী রেলওয়ে চাকুরী করা নুর ইসলাম, কাউসারসহ বেশ কয়েকজনকে সাথে নিয়ে গড়ে তোলেন টিকিট কালোবাজারির সিন্ডিকেট। নুর ইসলাম নগরীর পাওয়ার হাউজের কাছে বাস করেন। এরা ছাড়াও ভ্রাম্যমাণভাবেও টিকিট বিক্রি করা হয় বলেও একটি সূত্র নিশ্চিত করে।আরো জানা গেছে, স্টেশনপাড়া বাড়ি হওয়ার সুবাধে লিয়াকত আলী কালোবাজারির জন্য গড়ে তোলেন নিজস্ব মাস্তান বাহিনী।
তার দাপটে তটস্থ থাকতেন সবাই। কেউ ভয়ে তার বিরুদ্ধেপ্রতিবাদ করতে পারতেন না।অনলা ক্রিয়াও। কিছু অসাধুকর্মকর্তা ও তার নিজস্ব বাহিনীর মাধ্যমে এই কাজ চালিয়ে যান তিনি। টিকিট ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই লাইনে দাঁড়ানো মানুষকে জানানো হতো টিকিট নেই। অথচ সেই টিকিট চলে যেত কালোবাজারিদের হাতে। ১০ দিন আগের টিকিটও তারা বিক্রি করতেন। অনলাইন টিকিট সিস্টেমেও কি করে কালোবাজারি হচ্ছেএমন প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজশাহীবাসীর মধ্যে।
সবার মনেএকই প্রশ্ন কিভাবে এই কালোবাজারিরা টিকিট বিক্রি করতেপারছে? নাকি সর্ষের মধ্যেই ভূত? লিয়াকত আলী গ্রেফতার হওয়ার আগে এক টিকিট প্রত্যাশীর সাথে যে কথা বলেন সেই কথোপকথন হুবহু তুলে ধরা হলো,টিকিট প্রত্যাশী ব্যক্তি কল দেয়ার পর লিয়াকত আলী কল রিসিভ করলে টিকিট প্রত্যাশী বলেন, এটা কি লিয়াকতের নম্বর? লিয়াকত বলেন, জ্বী আমি লিয়াকত বলছি। টিকিট প্রত্যাশী লিয়াকতকে বলেন, আমার আপনার সাথে পরিচয় নাই। আমাকে ১০ আগস্টের ৩টি নন এসি টিকিটের ব্যবস্থা করে দিলে উপকার হতো। তখন লিয়াকত বলেন, একটু দাঁড়ান, আমি একটু বুক করে নিই।
লিয়াকত আবার বলেন, এই নম্বরেই কি? তখন টিকিট প্রত্যাশী বলেন, হ্যাঁ, এই নম্বরে। টিকিটের দাম কত বললে এই নম্বরে টাকা দিয়ে দিতাম। লিয়াকত টিকিট প্রত্যাশীর উত্তরে বলেন, আপনি টিকিট পাবেন কনফার্ম। পুনরায় টিকিট প্রত্যাশী প্রশ্ন করেন, টিকিটের জন্য কয় টাকা দিতে হবে? তখন লিয়াকত বলেন, সাধারণ নরমাল টিকিটতো এখন ১২০০, ১৩০০, ১৪০০, ১১০০ যাচ্ছে। ঠিক আছে? দিয়েন আপনি আপনার সাথে বাঁধবেনাকো। এবার টিকিট প্রত্যাশী বলেন, না, ঝামেলা মিটিয়ে নেওয়াই ভালো। তখন লিয়াকত বলেন, ২৫০০ টাকা দিয়েন তাহলেই হবে। ২৫০০ টাকা শুনে টিকিট প্রত্যাশী বলেন, বেশি হয়ে গেলোনা? এমনিতো কম।তখন লিয়াকত বলেন, আপনি ২০০০ হাজার টাকা দিলে কি আমি না
করবো? একটা সাধারণ টিকিট ১৪০০, ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একটি এসি চেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ হাজার টাকায়। কেবিন বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ টাকায়। লিয়াকত আবার নিজেই বলেন, একটা এসি চেয়ারের দাম ৭২৫ টাকা। আড়াই হাজার টাকা নেয়ার মানে আছে? একটি কেবিন ৮৮৫ টাকা ৩ হাজার টাকা নেয়ার যুক্তি আছে? এবার টিকিট প্রত্যাশী ব্যক্তি বলেন, একটু কম করে নিলে হতো না? তখন লিয়াকত বলেন চেষ্টা করবো।লিয়াকত আলীর একটি কথোপকথনেই বোঝা যায় টিকিট কালোবাজারি করে লিয়াকত কত টাকা কামিয়ে নিয়েছেন। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সাধারণ মানুষ এসব কালোবাজারিদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল এলাকার গোধূলি মার্কেট থেকে তাদের আটক করে নগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। ১৩টি ট্রেনের টিকিট উদ্ধার করা হয়। সেই টিকিটে ৪৫ জন যাত্রীর সিট ছিল। এরমধ্যে কপোতাক্ষের ২টি, বনতালতার ১১টি টিকিটের বিপরীতে ৩৯টি সিট ও মধুমতির ৪টি।
এ ঘটনায় বোয়ালিয়া থানায় একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস।
বোয়ালিয়া থানা সূত্রে জানা গেছে, আটক দু’জনের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এমকে