নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মহানগর ও আশেপাশের উপজেলায় টানা ৮ দিন ধরে থেমে থেমে কখনো ভারি আবার কখনো ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। টানা বৃষ্টি হওয়ায় মানুষের স্বাভাবিক জনজীবন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টি হওয়ায় নগরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার রাস্তায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সেই সাথে বৃষ্টির অজুহাতে নিত্য প্রয়োজনীয় সবজির দামও বেড়েছে। প্রায় প্রত্যেকটা সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১ টাকা। আর ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরে রাজশাহীর বাজারে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এ ছাড়াও টানা বৃষ্টিতে সবজির গাছগুলো নষ্টের মুখে পড়েছে। সবজি উৎপাদন কমে গেছে। নগরীর প্রায়
বাজারে সবজির সংকট দেখা গেছে। স্বাভাবিক দিনের তুলনায় বৃষ্টির দিনে সবজি বিক্রেতার সংখ্যাও কম দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মাসের ২২ সেপ্টেমবর বেলা ১১টার দিকে খরতাপের পর স্বস্তির বৃষ্টি হয়। বৃষ্টিতে রাজশাহীর আবহাওয়া শীতল হয়ে যায়। এরপর বিকেল ও রাতে বৃষ্টি না হলেও সকাল থেকে টানা ভারি বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিতে রাজশাহী মহানগরজুড়ে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সেই জলাবদ্ধতা নগরজুড়ে প্রায় দুই/তিন অব্যাহত ছিল। এর মাঝে মাঝে ঝিরি বৃষ্টি হয়। প্রতিদিনই কিছু সময় বিরতি দিয়ে বৃষ্টি হয়। এরপর গত শুক্রবার দিনভর তেমন বৃষ্টি না হলেও দুপুরের দিকে আকাশে কালো মেঘ দেখা দেয়। তবে বৃষ্টি নামেনি। রাতে বৃষ্টি না হলেও শনিবার সকাল থেকে শুরু হয় ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি। টানা বৃষ্টি
নামতে থাকে। সকাল থেকেই বৃষ্টির কারণে অফিসগামী মানুষ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েন। কারণ সময়মত তারা পৌঁছাতে পারছেন। এদিন বেশি সমস্যার মধ্যে পড়েন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষজন। প্রতিদিন সকালে খেটে খাওয়া মানুষজন কাজের সন্ধানে নগরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করলেও এদিন তা সম্ভব হয়নি। এ কারণে অনেকেই কাজ পায়নি। রহিদুল নামের এক দিনমজুরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা যারা কাজ করে সংসার চালাই তারা বৃষ্টির কারণে সমস্যার মধ্যে পড়েছি। কারণ বৃষ্টিতে ঠিকমত কাজ করতে পারিনি। এ কারণে সংসারে অভাব অনটন শুরু হয়েছে। কয়েকদিন ধরে টানা বসে থাকতে হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কাজ পাচ্ছিনা। এভাবে আরো বেশি সময় ধরে বৃষ্টি হতে থাকলে পরিবার নিয়ে সমস্যার
মধ্যে পড়তে হবে। রাসেল নামের অপর এক দিনমজুর বলেন, ৭ দিন ধরে একটানা বসে আছি। আমরা দিনমজুরি করে খায়। কাজ না পেলে সন্তানের মুখে কি তুলে দেব? বৃষ্টিতে সমস্যায় পড়েছি। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, ভারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে আরো বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। এদিকে, গত রোববার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয়। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বৃষ্টি থেমে যায়। ওই দিন রাত ও সোমবার বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি। এরপর আবার শুরু হয় বৃষ্টি হয়। দুপুর থেকে বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত বৃষ্টি না হলেও আবার শুরু হয় বৃষ্টি। বিকেলে ভারি বৃষ্টি হয়। বৃষ্টিতে আবার নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
এমনিভাবে টানা বৃষ্টি হতে থাকলে শাক-সবজির নষ্ট হয়ে যাবে। সেই সাথে আমন ধানে পচন দেখা দিবে। কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে ধানে পচন দেখা দিয়েছে। পচন রোধে বিষ দেওয়া প্রয়োজন। কিন্ত বিষ দেওয়া যাচ্ছে না। বিষ দিতে না পারার কারণে পচন আরো বেশি বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে টানা বৃষ্টি হলে ধানের ক্ষতি হয়ে যাবে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, বৃষ্টি আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
এস/আর