নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজশাহীতে জামায়াতের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার(৩১ আগস্ট) দুপুরে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহী মহানগর জামায়াতে ইসলামির আমীর ড.মওলানা কেরামত আলীর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ইমাজ উদ্দিন মন্ডল, অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ সেলিম, সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দীন মন্ডল, প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক অধ্যাপক একেএম সারওয়ার জাহান প্রিন্স, মহানগর ছাত্রশিবির সভাপতি সিফাত আলম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহাইমিন, মহানগরীর সাবেক সভাপতি সালাউদ্দীন আহমেদ, হাফেজ খাইরুল ইসলামসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাজনৈতিক সব মামলা পর্যালোচনা সাপেক্ষে ‘অটোমেটিক’ প্রত্যাহার হবে। আর চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট সব পর্যন্ত সব মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের আদেশ আসবে। শনিবার রাজশাহী নগরীর এক মিলনায়তনে সাংবাদিকদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় জামায়াত নেতারা এসব কথা জানান।
উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রাজশাহী মহানগরীর আমির ড. কেরামত আলী।
সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দীন মন্ডল বলেন, ছাত্র আন্দোলন থেকে গণজোয়ারের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ প্রধান হাসিনা পালিয়েছে। আমরা নতুন দেশ পেয়েছি। এটা অর্জনের জন্য সাড়ে আটশো জীবন দিতে হয়েছে। তাদের রক্তের বিনিময়ে নতুন দেশ পেয়েছি। স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য জামায়াতে ইসলামী শুরু থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ১৬ বছরে আওয়ামী সরকার দ্বারা আমরা চরম জুলুমের শিকার হয়েছি। জামায়াতের প্রায় এক হাজার জন শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন অসংখ্য। দিনের পর দিন আমাদের অনেক নেতাকর্মী কারাগারে ছিলেন। এখনো অনেকে গুম হয়ে আছেন। আয়নাঘরে এখনো অনেকে আছেন, আমরা এখনো তাদের খোঁজ পাইনি। স্বৈরাচারী সরকার আমাদের উপর এত বেশি জুলুম-নির্যাতন করেছে যে, আমাদের নেতাকর্মীরা নিজেদের বাড়িতে থাকতে পারেনি। বছরের পর বছর লুকিয়ে বেড়িয়েছে।
ইমাজ উদ্দীন বলেন, আমিরে জামায়াতসহ ৬ জন শীর্ষ নেতাকে বিচারিক কায়দায় হত্যা করেছে হাসিনা সরকার। গোলাম আজম, আল্লামা সাইদী, মাওলানা ইউসুফসহ অনেককে কারাগারে মৃত্যুবরণে বাধ্য করেছে। গত ১৫ বছর বাড়িতে ঘুমাতে পারিনি, শত শত মামলা দিয়েছে। মামলা দিয়ে জুলুম ও নিষ্পেষণ করা হয়েছে। জামিন দেয়া হয়নি। আমরা এমন জুলুমের শিকার হয়েছিলাম, কাঁদতে পর্যন্ত পারিনি। নিহত নেতাকর্মীদের জানাজা পর্যন্ত পড়তে দেয়া হয়নি। সমালোচনা করতে দেয়া হয়নি। সমালোচনা করলে ডিজিটাল আইনে মামলা করেছে, মিছিলে গেলে পেটুয়া বাহিনী দিয়ে গুলি করেছে। আমাদের ৫ জন গুম হয়েছিলেন। শিবির নেতা মাসুম ৯১ দিন, গোলাম মর্তুজা ৪৫ দিন, আব্দুস সালাম ৮৪ দিন, হাবিবুর রহমান দীর্ঘদিন আয়নাঘরে ঘুম ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, দাম্ভিকতার কারণে হাসিনাকে আল্লাহ সহস্তে বিদায় করেছেন। এ ১৬ বছরে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও সরকারি বাহিনী দ্বারা শহীদ নোমানিসহ অনেককে হত্যা করা হয়েছে। আমরা বিচার পাইনি। তিনি আরও বলেন, শুধু মাত্র রাজশাহীতেই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও তাদের পেটোয়া বাহিনীর মাধ্যমে জামায়াত -শিবিরের ১১ জন নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতরে দুইজনের পা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে আঘাত করে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এখন সময় দেশ গড়ার। নতুন সহিংসতা নয়। পুলিশ অনেক জুলুম করেছে, শুধু দেশের স্বার্থে থানা পাহারা, পুলিশ লাইন গুছিয়ে দেয়া, এগুলো আমরা করেছি।
রাজশাহীতে নিহত ১১ জন নিহতের ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা দৈনিক জবাবদিহি’র এমন প্রশ্নের জবাবে , অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ সেলিম বলন, মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়া ধীন রয়েছে।ধারাবাহিকভাবে সকল শহীদ নেতাকর্মীর হত্যার বিচার হবে। সে সময়ে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও আওয়ামী সরকারের দোসর পুলিশ সদস্য যাদের মাধ্যমে বা ইন্ধনে এই হত্যাকান্ড গুলো ঘটানো হয়েছিল তাদের চিহ্নিত করে খুব শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।
সভায় মহানগরীর নায়েবে আমির এডভোকেট আবু মোহাম্মদ সেলিম বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে রাজশাহীতে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৫৫টি । তিনি জানান, ২০০৯ সাল থেকে ১৬ বছরে রাজশাহীতে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪৬২টি মামলা হয়। এতে মহানগর আমিরসহ সাড়ে পাঁচশো নেতৃকর্মীকে আসামি করা হয়। মামলাগুলোর ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটা ১ জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত মামলা পর্যন্ত ফাইনাল হবে।
তিনি বলেন, পূর্বের রাজনৈতিক মামলাগুলোর ব্যাপারে কেন্দ্রীয়ভাবে তালিকা চাওয়া হয়েছে। পর্যালোচনা করে প্রত্যাহারের আদেশ আসবে। এ আদেশ আসতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লাগতে পারে।
এ সময় মহানগর আমির ড. কেরামত আলী বলেন, আমরা সব মামলা করার চেষ্টা করছি। নিরপরাধ কেউ অন্তর্ভুক্ত হবে না। তবে যারা দোষী তারা ছাড় পাবে না। যারা সংশ্লিষ্ট তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জামায়াতের আওয়াজ বা অবস্থান কেমন থাকবে এমন প্রশ্নে ড. কেরামত আলী বলেন, অবস্থান আছে, আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। অবশ্যই ভূমিকা রাখব, থাকবে। যা দুর্নীতি হয়েছে, হচ্ছে। প্রকৃত সত্য উদঘাটনে যা যা নেয়া উচিত, সেটা নিব। কোনো লুটপাট-ভাঙচুরের সঙ্গে জামায়াতের সম্পৃক্ততা নেই।
জুলুমকারী পুলিশ সদস্যরা চিহ্নিত কি না এমন এক প্রশ্নে মহানগর আমির বলেন, অনেক পুলিশ প্রশাসনের লোক ভূমিকা রেখেছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ চিহ্নিত হচ্ছে, ফুটেজ দেখা হচ্ছে। আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে মামলা করব।
জামায়াতে ইসলামীতে অন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সংগঠন এমনভাবে সংগঠন গড়ে উঠছে, আমরা অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করি না; নামাজ পড়ি, দ্বীন চর্চা করি। কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠিকে আমরা গ্রহণ করব না। সন্ত্রাসীদের আমাদের সংগঠনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের সুযোগ নেই। যাচাই বাছাই ছাড়া কাউকে নেয়া হবে না।
সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর সাংবাদিকদের আত্মসমালোচনা করার আহবান জানান ড. কেরামত আলী। বলেন, তারা ব্যর্থ হয়েছে। এখন মুক্ত পরিবেশ এসেছে, আত্মসমালোচনা করবেন। এতদিন পুলিশ যা দিয়েছে, তা লিখেছেন। এখন থেকে প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করবেন।
বিএ…