নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মহানগরীতে চিকিৎসকের সিজারিয়ানের ভুলে জরায়ু কেটে ফেলা নারী আফরোজা জাহান (৩৭) মহানগর ক্লিনিকের মালিক, চিকিৎসক, ম্যানেজার ও নার্সসহ চারজনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে সার্জারী চিকিৎসক ডা. মাহবুব আলম রানার নাম উল্লেখ করে মহানগর ক্লিনিকের মালিক, ম্যানেজার ও নার্সকে আসামী করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নগরীর রাজপাড়া থানায় এ লিখিত অভিযোগ করা হয়। তিনি নাটোরের লালপুর উপজেলার ধুপইল গ্রামের মিহির চৌধুরীর স্ত্রী। তারা বর্তমানে পুঠিয়া পৌরসভার কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তার স্বামী কৃষি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ও তিনি প্রাইমারী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। গত ২৬ আগস্ট রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে মহানগর ক্লিনিকে তার অনুমতি ছাড়াই সিজারিয়ান করেন সার্জারি বিশেষজ্ঞ মাহবুব আলম রানা।
লিখিত অভিযোগে আফরোজা জাহান বলেন, গত ২৬ আগস্ট তিনি অন্তসত্তা অবস্থায় চিকিৎসক মাহবুব আলম রানার সাথে যোগাযোগ করে রাজশাহী মহানগরীতে অবস্থিত মহানগর ক্লিনিকে যান চেকআপ করার জন্য। ক্লিনিকে পৌঁছানোর পর সেখানকার মালিক, ম্যানেজার ও নার্সরা তার চেকআপ না করে শুধু ইসিজি করান। ইসিজি করানোর পর তার অনুমতি ছাড়াই ম্যানেজার ও নার্সরা হঠাৎ করে তাকে দোতলায় অবস্থিত অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। তাড়াহুড়ো করে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পর অজ্ঞান করে সিজারিয়ান করা হয়। এরপর আর কিছু জানেন না তিনি। জ্ঞান ফিরে জানতে পারেন সিজারিয়ান করার সময় তার গর্ভফুল অপসারণ করতে গিয়ে ব্লিডিং শুরু হলে ডা. রানা নিজেই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পরও তার ব্লিডিং বন্ধ হয়নি। কয়েক ব্যাগ রক্ত দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়। পরের দিন সোমবার সকালে রামেক হাসপাতালে তাকে বাঁচানোর জন্য অস্ত্রপাচার করে চিকিৎসকরা জরায়ু কেটে ফেলেন। এরপর ধীরে ধীরে তার শারীরিক অবস্থায় কিছুটা উন্নতি হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে রামেক হাসপাতাল থেকে তাকে ছুটি দেওয়া হলে তিনি এ্যাম্বুলেন্সে করে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান । ঘটনার পরদিন সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুব আলম রানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছিলেন, আফরোজা জাহান আমাকে দিয়েই সিজারিয়ান করতে চেয়েছিলো তাই আমি তার সিজারিয়ান করেছি। গর্ভফুল অপসারণ করতে গিয়ে ব্লিডিং শুরু হয়। সার্জারি বিশেষজ্ঞ হয়েও আপনি সিজারিয়ান করেছেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমবিবিএস চিকিৎসকরা সব করতে পারে তাই করা হয়েছে। ফুল অপসারণ করতে গিয়ে প্রসূতির ব্লিডিং শুরু হয়। রক্ত বন্ধ না হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে বাঁচানোর তাগিদে অপারেশন করে তার জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না। তিনি আরো বলেন, আমি রাজশাহী চিকিৎসা করিনা। ঢাকার একটি বেসরকারী ক্লিসিকে সার্জারি বিশেষজ্ঞ হিসেবে রোগী দেখি।
গৃহবধূ আফরোজা অভিযোগ করে করে আরো বলেন, পূর্ব পরিচিত হিসেবে আমি তার কাছে শুধু চেকআপ করার জন্য গিয়েছিলাম। কিন্ত মহানগর ক্লিনিকে যাওয়ার পর তারা আমার অনুমতি ছাড়াই সিজারিয়ান করেছেন। সিজারিয়ানের সময় কনসেন্টে তারা নিজেরাই নিজ লেখে দেন। এটা আমার সাথে অন্যায় করা হয়েছে। সেখানে অপারেশন করার মত পরিবেশ নেই। তারপরও করা হয়েছিল আমার সিজারিয়ান। সিজারিয়ান করার সময় স্যালাইন ও রক্তের ব্যবস্থা করা হয়নি। হঠাৎ করেই ওটি দেখতে নিয়ে গিয়ে সিজারিয়ান করে ফেলেন তারা। আমার যে ক্ষতি হয়েছে আমি তার বিচার চাই। এ বিষয়ে রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী গৃহবধূ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে