নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ও চিকিৎসাধীন রোগীকে দেখতে আসা মানুষকে টার্গেট করে কৌশলে ভাই পাতিয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি ও পরে অপহরণের নাটক সাজিয়ে অর্থ আদায় চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। এরা মূলত মহানগরীতে বাইরে থেকে আসা মানুষকে টার্গেট করে যেকোনভাবে সম্পর্ক পাতিয়ে অর্থ আদায় করে থাকে। প্রায় ২ বছর ধরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও আশেপাশের গড়ে উঠা ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে কেন্দ্র করে এ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে প্রতারক চক্রটি। চক্রের মূল হোতা নারী প্রথমে টার্গেট করা ব্যক্তিকে পরিচিত লাগছে বলে কথা শুরু করে। পরে তার সাথে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভালো সম্পর্ক তৈরি করে বাড়ি বা তার অধিনস্থ কোন জায়গায় নিয়ে
গিয়ে খাওয়ানোর পরে টাকার জন্য অশ্লীল ভিডিও ধারণ ও মারধর করে। বাধ্য হয়েই ভুক্তভোগীরা পরিবারের কাছ থেকে তাদের চাহিদামতো টাকা নিয়ে তাদের দিয়ে মুক্তি পায়। গতকাল রোববার বিকেলে নগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক।
নগরের পবা থানা পুলিশ এ চক্রের নারীসহ চার সদস্যকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন, নগরীর শাহমখদুম থানার রোড নওদাপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল সামাদ তালেবের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩০), বোয়ালিয়া থানার অলোকার মোড়ের আমিনুরের ছেলে আতিকুর রহমান বাপ্পী (২৮), নগরীর চন্দ্রিমা থানার নামোভদ্রা পদ্মা আবাসিক এলাকার হামিম আল ফজলে নুর ওরফে শুভ্র (২৮) ও পবা থানার
চৌবাড়িয়া গ্রামের ইউসুফ আলী মাস্টারের স্ত্রী নার্গিস নাহার হেলেন (৫৫)।
পুলিশ জানায়, চলতি মাসের ১৯ নভেম্বর রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানাধীন জাহানাবাদ গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে আব্দুল হক (৪৩) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীণ তার চাচাকে দেখতে আসেন। সেখানে নার্গিস নাহার ওরফে হেলেন তাকে দেখতে পেয়ে ডাকেন। তার কাছে গেলে নার্গিস নাহার ওরফে হেলেন বলে তাকে অনেক পরিচিত লাগছে ও মোবাইল নম্বর চান। তখন আব্দুল হক (৪৩) সরল বিশ্বাস তাকে মোবাইল নাম্বার দেন। পরদিন সকাল ১০টার দিকে নার্গিস নাহার @ হেলেন তাকে কয়েকবার ফোন দেন। দুপুরে ফোন রিসিভ করলে
নার্গিস নাহার জরুরী প্রয়োজনে দেখা করতে চায় এবং খুবই আকুতি মিনতি করে বায়া বাজার নামক স্থানে তাকে ডাকে। তার কথায় আব্দুল হক বায়া বাজারে পৌঁছানোর পর ওই নারী তাকে একটি অজ্ঞাতনামা অটো নিয়ে এসে অটোতে উঠতে বলে। তার কথা মত অটোতে উঠলে সে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে কৌশলে তাকে অপহরণ করে পবা থানাধীণ চৌবাড়িয়া গ্রামস্থ তার বাড়ি পরিচয়ে একটি একতলা বাড়িতে নিয়ে যায়। ওই বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্রই নার্গিস নাহার হেলেন ঘরের দরজা লাগিয়ে দেয় ও অজ্ঞাতনামা ৩ জন পুরুষ আব্দুল হককে লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ী মারপিট করতে থাকে। মারপিটের একপর্যায়ে নার্গিস নাহার তার কাছ থেকে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অন্যথায় মারপিট করে প্রাণনাশের হুমকি দেয় তার কাছে থাকা ২০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এরপর অপর একব্যক্তি তার মোবাইল থেকে স্ত্রী রহিমা বেগমকে কল দিয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে মুক্তিপণ হিসাবে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে। অন্যথায় আব্দুল হকে হেরোইন দিয়ে চালান করবে নতুবা ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। ভয়ে তার স্ত্রী বিকাশে দুই বারে ২০ হাজার টাকা পাঠায়। পরে অপহরণকারীরা টাকা ক্যাশ আউট করে নেয়। এরপর তাকে একটি
টিভিএস মোটরসাইকেল রেজিষ্টিশন নং- রাজ মেট্রো-হ-১১-১৩৯০ যোগে ২৩ ও ২৬ বছর বয়সের দুইজন লোক কর্ণহার থানাধীন করমজা মোড়ে নিয়ে আব্দুল হককে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। ছাড়া পাওয়ার পর তিনি পবা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পর গতকাল ভোর সোয়া ৪টার তিকে নার্গিস নাহার ওরফে হেলেনকে তার বাড়ি থেকে আটক করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর সহযোগী রফিকুল ইসলাম, আতিকুর রহমান বাপ্পী, হামিম আল ফজলে নুর ওরফে শুভ্রকে আটক করে। তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়। আসামীদের রিমান্ড আবেদন করা হবে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে থানায় একই ধরণের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সুজায়েত ইসলাম, ডিসি শাহমখদুম সাইফুল ইসলাম ও নগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস উপস্থিত ছিলেন।
এস/আর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।