নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মহানগরীর শাহমখদুম থানা থেকে বের হয়ে কলেজ ছাত্রী লিজা রহমান শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার ঘটনায়় পুলিশের দেয়া তথ্য উপাত্তে নানা গরমিল পেয়েছে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের গঠিত তদন্ত কমিটি। শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল মাহমুদ ফাইজুল কবির সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির কাছে পুলিশের সদস্যরা বলেছেন লিজা থানায় জিডি করার জন্য শ্বশুর বাড়ীর তথ্য নিতে থানা থেকে বের হয়ে শরীরে আগুন দেয়। অথচ থানায়় পুলিশের করা জিডিতে লিজার শ্বশুর বাড়ীর
সব কথা রয়েছে। আগামী রোববার তদন্ত কমিটি মানবাধিকার কমিশনে তাদের রিপোর্ট পেশ করবেন বলে জানান আল মাহমুদ ফাইজুল কবির।
গত ১ অক্টোবর প্রথম দফায়় মানবাধিকার কমিশনের ৪ সদস্যের কমিটি রাজশাহী শাহ মখুদুম থানা, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, ছাত্রীর স্বামী, স্বজন ও বন্ধুদের সাক্ষ্য গ্রহন করেন। গত ২৪ অক্টোবর দ্বিতীয়় দফায় তদন্ত কমিটি আরো কয়েকজনের সাথে কথা বলেন। সব তথ্য উপত্ত নিয়ে তারা চুল চেরা বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট তৈরী করেছেন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের ঘটনায়় নগরীর শাহ্ মখদুম থানায় অভিযোগ দিতে
গেলে ওসি মাসুদ পারভেজ তাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে যাবার পরামর্শ দেন। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে থানার ১০০ গজ দুরে মহিলা কারিগরি কলেজের গেটের সামনে নিজ শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়় লিজা। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়াা হয়়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ অক্টোবর বুধবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়। পরে নিহতের লাশ গাইবান্ধায় জানাজা শেষে কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এরপর লিজার বাবা বাদী হয়ে নগরীর শাহমখদুম থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় লিজার স্বামী সাখাওয়াত, শ্বশুর ও শাশুড়িকে আসামী করা হয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে
সাখাওয়াতকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ভগ্নিপতি রুবেলের বাড়ি থেকে গভীর রাতে আটক করে। আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে শুনানি শেষে বিচারক তাকে দুই দিন জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়। পুলিশ তাকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারপর মা-বাবাও উচ্চ আদালত থেকে আগাম চার সপ্তাহের জামিন নেন। চার সপ্তাহ পর তাদের রাজশাহীর আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে। গত ২০ জানুয়ারি রাজশাহী মহিলা কলেজের দ্বিতীয়় বর্ষের ছাত্রী ও গাইবান্ধা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রধানপাড়া এলাকার আব্দুল লতিফের মেয়ে লিজার সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের
নাচোল উপজেলার খানদুরা গ্রামের খোকন আলীর ছেলে ও রাজশাহী সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র সাখাওয়াত হোসেনের বিয়ে হয়। পরিবারকে না জানিয়ে সে লিজার গোবিন্দগঞ্জের বাড়িতে গিয়ে বিয়ে করে। সাখাওয়াত রাজশাহী মহানগরীর একটি ছাত্রাবাসে থাকতেন। বিয়ের পর তারা নগরীর শাহমখদুম থানার পবা নতুনপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। তাদের পারিবারিক কলহ হয়। কলহের জের ধরে লিজা থানায় অভিযোগ দিতে গিয়ে বের হয়ে এসে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা করে। পরে পুলিশের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি পুলিশের তেমন অবহেলা খুঁজে পায়নি বলে তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করে।
আর/এস