নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর পাঠক নন্দিত গণমানুষের দৈনিক গণধ্বণি প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ইয়াকুব শিকদারের নামে সাধারণ ডায়েরি করিয়েছেন নগরীর রাজপাড়া থানার ওসি। গত বৃহস্পতিবার থানার এক কনস্টেবলকে দিয়ে ওসি এই জিডি করান। এই ঘটনার পর থেকেই রাজশাহীর সর্বস্তরের সাংবাদিক মহলে বইছে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়। গতকাল জেলার বাগমারা, তানোর ও চারঘাট প্রেস ক্লাব থেকে সাংবাদিকরা এই কাÐের প্রতিবাদ জানান। সাংবাদিক নেতারা বলেন, সম্পাদক ইয়াকুব শিকদারের নামে যে জিডি হয়েছে তা বানোয়াট, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন হয়রানীমূলক। এটি সাংবাদিকদের জন্য অসনি সংকেত। প্রেস ক্লাবের কর্মরত সংবাদ কর্মীরা এনিয়ে প্রেস ক্লাবে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন কররেন। সভায় পুলিশের এমন অতেুক ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। ঘটনাটি তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানানো হয়। এছাড়াও এমন ঘটনা থেকে শুধু সম্পাদক নয়, কোন সংবাদ কর্মীকে অহেতুক হয়রানী করা না হয় সেই দিকে নজর রাখার জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। রাজপাড়া থানা পুলিশ সদস্য কর্তৃক সম্পাদকের বিরুদ্ধে জিডি করায় তানোর প্রেস ক্লাব নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। সম্পাদকের নামে জিডি করায় তানোর প্রেস ক্লাবে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে তানোর প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন তানোর প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইদ সাজু। পরিচালনা করেন তানোর প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক টিপু সুলতান। বক্তব্য রাখেন, তানোর প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আশরাফুল ইসলাম রন্জু, সিনিয়র সহ সভাপতি ইমরান হোসাইন, সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান, সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি, যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মামুনুর রশিদ মামুন, আসাদুজ্জামান মিঠু, কোষাধক্ষ আশরাফুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর সবুর, শরিফুল ইসলাম, সারোয়ার হোসেন, ইনছান পারভেজ, ফারুক হোসেন, আব্দুল হান্নান প্রমুখ। প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, থানায় গিয়ে ডিউটিরত পুলিশ সদস্যকে ঘুষ না দেয়ায় পত্রিকার একজন সম্পাদকের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরন করে উল্টো সম্পাদক ইয়াকুুব শিকদারের বিরুদ্ধ থানায় জিডি দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ সদস্য কর্তৃক এধরনের জিডি কোন ভাবেই কাম্য নয়। অবিলম্বে সম্পাদক ইয়াকুব শিকদারের বিরুদ্ধে দায়ের করা জিডি প্রত্যাহার ও নিঃস্বর্তে ক্ষমা প্রার্থনা ও শাস্তির দাবি জানান হয়। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে নগরীর রাজপাড়া থানার কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম (কনস্টেবল নম্বর ৪৩৩) জিডি করেন রাজশাহী থেকে প্রকাশিত দৈনিক গণধ্বনি প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক ইয়াকুব শিকদারের নামে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এই ঘটনায় শনিবার সকালে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ইয়াকুব শিকদার।সম্পাদক ইয়াকুব শিকদারের অভিযোগ, তার সাথে কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম অসৌজন্যমুলক ও অপেশাদার আচরণ করেছেন। কিন্তু প্রতিকার না করেই উল্টো জিডি করিয়েছেন ওসি। বিষয়টি উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলছেন ইয়াকুব শিকদার। এ নিয়ে তিনি পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত চান তিনি। ভুক্তভোগী এই সাংবাদিকের ভাষ্য, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে তিনি থানায় সেকেন্ড অফিসার মোস্তাক আহম্মেদের কাছে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে থানার দায়িত্বরত সেন্ট্রি শহিদুল ইসলাম তার পথরোধ করেন। এ নিয়ে তার সাথে প্রকাশ্যে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন শহিদুল। পরে সেকেন্ড অফিসারের কাছে ফিরে গিয়ে ইয়াকুব শিকদার বিষয়টি জানান। তখনই সেকেন্ড অফিসার এসে কনস্টেবলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কর্তব্যরত অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে ঘটনার দায় স্বীকার করেন কনস্টেবল শহিদুল। প্রতিকার পেতে ইয়াকুব শিকদার বিষয়টি তখনই মোবাইলে আরএমপির মুখপাত্রকে জানান। বিষয়টি শীর্ষ পর্যায়ে জানাজানি হয়ায় ক্ষুদ্ধ হন ওসি। তিনি প্রতিকার না করেই পাঠিয়ে দেন। এর ঘন্টাখানেক পর তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করে পুলিশ। অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে রাজি হননি কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম। এদিকে জিডির তদন্তভার দেয়া হয়েছে থানার উপপরিদর্শক শরিফুল ইসলামকে। বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে তিনি নথিপত্র হাতে পেয়েছেন। খুবশিগগিরিই এর তদন্তকাজ শুরু করবেন। তার ভাষ্য, বৃহস্পতিবার দুপুরে যখন এই ঘটনা ঘটে, তিনি তখন থানায় ছিলেন। সামান্য ভুলবোঝাবুঝি থেকেই এমনটি ঘটেছে। এমন তুচ্ছ বিষয় জিডি পর্যায়ে নেয়ার কারণ জানতে চাইলে জানা নেই দাবি করেন শরিফুল ইসলাম। একই সাথে নিয়ম মেনে তদন্তকাজ শেষ করারও কথা জানান তিনি।এদিকে, অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে থানার ওসি শাহাদাত হোসেন খান দাবি করেন, কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম নিজেই জিডি করেছেন। এ নিয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে বিধি মেনেই সেটির তদন্তভার দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠছে সেটি ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেন ওসি। জানতে চাইলে নগরীর বোয়ালিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সাজিদ হোসেন বলেন, সেদিনের ঘটনা কিংবা জিডির বিষয়টি ওসি নিজেই ভালো বলতে পারবেন। এর বাইয়ে এ নিয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। সম্পাদকের লিখিত অভিযোগ পাবার কথা নিশ্চিত করেছেন নগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, ওই সাংবাদিক বৃহস্পতিবার দুপুরের তাকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তাকে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। তিনি শনিবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এখন সেটি তদন্ত করে আইনত ব্যবস্থা নেয়া হবে। জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি থানার বিষয়টি। থানা সেটির তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। তবে এই জিডি নিয়ে ওই সাংবাদিক যেনো কোন ধরণের হয়রানির শিকার না হন সে দিকেও নজর রাখা হবে।
খবর২৪ঘন্টা/নই