এলপিজি গ্যাসের দাম কমানো হলেও রাজশাহী মহানগরীতে সেই গ্যাস কম দামে কিনতে পারছেন না ক্রেতারা। আর পূর্বের দামেই এলপিজি গ্যাস বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। এনিয়ে ক্রেতাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ ও ক্ষোভের শেষ নেই। ক্রেতারা বলছেন, সরকারীভাবে এলপিজি গ্যাসের দাম কমানো হলেও বিক্রেতারা সেই নির্দেশনা মানছেন না। তারা পূর্বের দামেই গ্যাস বিক্রি করছে। যার কারণে প্রতি ১২ কেজি গ্যাস ১০০ টাকার উপরে বেশি কিনতে হচ্ছে। তবে কিছু কিছু বিক্রেতা বলছেন, আগে বেশি দামে কেনা ছিল তাই তারা কম দামে বিক্রি করতে পারছেন না। কম দামে কিনতে পারলে কম দামে বিক্রি করা সম্ভব হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববাজারে দাম কমায় তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম আরেক দফা কমায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত সোমবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন দাম ঘোষণা করে বিইআরসি। বেসরকারি খাতে ১২ কেজির সিলিন্ডারের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৪২ টাকা। যা আগের মাসে ছিল ৯০৬ টাকা। এটি সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য। নতুন এ মূল্য ১ জুন থেকে কার্যকর হয়েছে। এ ছাড়াও উৎপাদন পর্যায়ে ব্যয় পরিবর্তন না হওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির এলপিজির দাম পরিবর্তন করা হয়নি। সরকারি সাড়ে ১২ কেজি এলপিজির দাম আগের ৫৯১ টাকাই রাখা
হয়েছে। গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির নতুন দাম প্রতি লিটার ৪১ টাকা ৭৪ পয়সা। আগে এটি ছিল ৪৪ টাকা ৭০ পয়সা। সে সময় বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেছিলেন, কেউ নির্ধারিত দামের কমে বিক্রি করতে পারে। কিন্তু বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না। দাম কমিয়ে বেশি দামে যাতে কেউ বিক্রি করতে না পারে সেজন্য কঠোর নির্দেশনা থাকলেও রাজশাহী মহানগরীর এলপিজি গ্যাস বিক্রেতারা সেটি মানছেন না। তারা পূর্বের দামেই বিক্রি করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন দাম কার্যকর হয়েছে চলতি মাসের ১ জুন। দাম কমার পরেও নগরের বিভিন্ন বাজার ও পাড়া-মহল্লার গ্যাস বিক্রেতারা বসুন্ধরা ১২ কেজির গ্যাস বিক্রি করছেন ৯৬০ টাকা ও ওমেরা কোম্পানীর গ্যাসের দামও ৯৬০ টাকা রাখা হয়েছে। তবে বসুন্ধরার প্লাস্টিকের গ্যাসের দাম রাখা হচ্ছে ৯৮০ টাকা। এর কমে তারা বিক্রি করছেন না। কেউ সরকারী দামের কথা বললে, তাদের কাছে গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে না। পূর্বের নির্ধারিত দামেই বিক্রি করছে তারা।
জুয়েল নামের এক ক্রেতা বলেন, আমি সরকারীভাবে দাম কমার ১ দিন পরে গ্যাস কিনতে গিয়ে সরকারীভাবে বেঁধে দেয়া দামে গ্যাস কিনতে পারেনি। আমা কাছ থেকে ৯৮০ টাকা নিয়েছে। কম দামের কথা বললে তারা সেটিকে পাত্তা দেয়নি। দোকানি বলেছে, যেখানে কম দামে পাবেন সেখানে কিনে নেন। বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিলে একই দামের কথা জানতে পারি। বাধ্য হয়ে বেশি দামেই কিনেছি।
রাহুল নামের আরেক ক্রেতা বলেন, আমার কাছেও এলপিজি গ্যাসের দাম ৯৬০ টাকা নিয়েছে। কম দামে দেয়নি। মুসাব্বির নামের আরেক ক্রেতা বলেন, বিভিন্ন দোকান ঘুরেও সরকারী নির্ধারিত মূল্যে কম দামে গ্যাস কিনতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী।
এলপিজি গ্যাস বিক্রেতার সাথে কথা হলে নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, আমরা আগে বেশি দামে কিনেছি। সেই গ্যাস সরকারী দামে বিক্রি করলে লোকশান গুনতে হবে। তাই কম দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়। কম দামে কিনলে কম দামেই বিক্রি করা সম্ভব হবে। তবে নতুনভাবে এলপিজি গ্যাস কেনা এক বিক্রেতা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, নতুন যেগুলো কেনা হয়েছে সেগুলো কম দামেই বিক্রি করছি। কত কম দামে তা তিনি বলতে চাননি।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের রাজশাহী বিভাগীয় সহকারী পরিচালক হাসান মারুফ বলেন, সরকারী নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ নির্ধারিত দামের থেকে বেশি নিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সোমবার থেকে মনিটরিং করা হবে। কোনো ভোক্তা মানি রিসিট নিয়ে অভিযোগ করলেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এস/আর