নিজস্ব প্রতিবেদক :
বেসরকারী হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে এসে সিরিয়ালেই মৃত্যু হয়েছে রিপন (৩০) নামের এক অসুস্থ রোগীর। মৃত ব্যক্তি রাজশাহীর তানোর উপজেলার কলমা গ্রামের আনিকুলের ছেলে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর লক্ষীপুর মোড়ে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আল্ট্রাসনোগ্রাফি কক্ষে তার মৃত্যু হয়। ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর শোকে হতবিহম্বল হয়ে পড়েন তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম।
মৃত রিপনের স্ত্রী স্বপ্না বেগম জানান, তার স্বামী বুকে ব্যথা অনুভব করায় মঙ্গলবার সকালে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৩ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসকরা তার স্বামীকে আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ কয়েকটি টেস্ট করতে দেন। কিন্ত তিনি তার স্বামীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাসপাতালের মধ্যের প্যাথলজি করাতে পারেন নি। সেখানে বারবার গিয়েও তিনি সিরিয়াল পাননি। হাসপাতালের মধ্যে টেস্টগুলো করাতে পারলে কম টাকায় দরিদ্র স্বামীর পরীক্ষা করাতে পারতেন। সবরকম চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তিনি তার স্বামীকে লক্ষীপুর মোড়ে অবস্থিত ইসলামী হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে নিয়ে আসেন।
ইসলামী হাসপাতালে এসে প্যাথলজি কাউন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার টাকা জমা দিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফি রুমে কাগজ জমা দিলে ৪৮ নম্বর সিরিয়াল পান। ৪৮ নম্বর সিরিয়াল দেখে তারা আল্ট্রাসনোগ্রাফি ডা. তোহরুলের এ্যাটেনডেন্ট আবু বক্কর সিদ্দিককে রোগীর অবস্থা খারাপ জানিয়ে একটু আগে পরীক্ষা করাতে চান। কিন্ত এ্যাটেনডেন্ট রোগীর স্বজনের কথা কর্ণপাত না করে সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন। রাত ৮টায় রিপনের মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত কয়েক দফায় আগে আল্ট্রাসনোর সিরিয়াল চেয়ে কোন লাভ হয়নি। উপস্থিত এ্যাটেনডেন্টকে বোঝাতে সক্ষম হননি তাদের জরুরী সেবার কথা। অবশেষে রাত ৮টার দিকে সিরিয়াল পেয়েই আল্ট্রাসনো রুমের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয় অসুস্থ রিপনকে। কক্ষে নেওয়া মাত্রই তার মৃত্যু হয়। রোগ নির্নয়ের ইচ্ছাটাও পূর্ণ হলো না তার। ইচ্ছে থাকলেও স্ত্রীর কোলে থাকা ছোট অবুঝ শিশুটাকে আদর করতে পারলেন না রিপন।
রিপনের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। চিৎকার করে বলতে থাকেন, আমি ৪৮ নম্বর সিরিয়াল দেখে বলেছিলাম ভাই আমার স্বামীর অবস্থা খুব খারাপ। একটু আগে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার সুযোগ দেন। কিন্ত তারা দেয়নি। আমার স্বামীকে এরাই মেরে ফেলেছে। রিপনের স্ত্রী স্বপ্নার কান্নায় উপস্থিত অন্যান্য রোগী ও তাদের স্বজনদের চোখে পানি চলে আসে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্বপ্না বলেন, স্বামীর খারাপ অবস্থার কথা এ্যাটেনডেন্টকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। আমরা গরীব বলে আমাদের কথা কর্ণপাত করেন নি। আমরা কয়েক দফায় কাকুতি, মিনতি করে আল্ট্রাসনোটা আগে করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম কিন্ত কোন লাভ হয়নি।
অসহায় গরীবের কথা তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি। কিন্ত সমাজের কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি বা পেশি শক্তিওয়ালা লোকের জন্য ঠিকই সিরিয়াল ব্রেক করা হয়। তখন হাসপাতালের কোন নিয়ম কানুন থাকে না। সব নিয়ম শুধু গরীবের জন্য বলে আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। রোগী মৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়। কিন্ত তারা কোন অভিযোগ করবেনা জানিয়ে নিজ বাড়ি তানোর লাশ নিয়ে চলে যায়। এই অসহায় গরীব পরিবারটিকে দুই হাজার টাকার মাইক্রোবাস ভাড়া দেড়গুণ বেশি দিয়ে ৫ হাজার ২০০ টাকায় নিয়ে যেতে হয়।
ইসলামী হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ রিয়াদ বলেন, রিপনের মৃত্যুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা ডাক্তারের কোন অবহেলা নেই। আল্ট্রাসনো করার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। সিরিয়াস রোগী আগে চেয়েও পাননি রিপনের স্ত্রী স্বপ্নার অভিযোগের কথা জানালে তিনি বলেন, দেখেন আল্ট্রাসনো রুমের সামনে যারা দাঁড়িয়ে থাকে সবাই খুব জরুরী। সিরিয়াল ব্রেক করলে রোগীগের তোপের মুখে পড়তে হয়। এ ছাড়া ওই রোগী এত বেশি সিরিয়াস তাতো কেউ জানতো না।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে