নজরুল ইসলাম জুলু: রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের ভেতরে কলেজ অধ্যক্ষকে চড় ধাপ্পড় দিয়েছেন একই কলেজের আরেক শিক্ষক। বুধবার বিকালে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পবা উপজেলার কাটাখালি এলাকার আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদিন নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় একই কলেজের ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সিরাজুল হকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
থানায় লিখিত অভিযোগে অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদিন দাবি করেছেন, বুধবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা রাজশাহী আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়ের চতুর্থ তলায় কর্মচারীদের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। তখন সহকারী অধ্যাপক সিরাজুল হক পূর্ব শত্রুতার জেরে তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। তাকে প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে জয়নাল আবেদিন কলেজে অনুপস্থিত। আর জয়নাল আবেদিনের ওপর চড়াও সিরাজুল হক কলেজের ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি এখন কলেজের ‘স্বঘোষিত’ অধ্যক্ষ। তিনি নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করলেও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাকে এই দায়িত্ব দেননি। এখন জয়নাল আবেদিন ও সিরাজুল হক দুজনেই নিজেদের অধ্যক্ষ দাবি করছেন। থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগে জয়নাল আবেদিন নিজেকে অধ্যক্ষ হিসেবেই পরিচয় দিয়েছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার (মাউশি) রাজশাহী আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়ের চতুর্থ তলায় কর্মচারীদের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। তখন সহকারী অধ্যাপক সিরাজুল হক পূর্ব শত্রুতার জেরে তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। তাকে প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়।
ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, পরিচালকের কার্যালয়ের এক কর্মচারীর কক্ষের দরজার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন জয়নাল আবেদিন। সিরাজুল হক দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে তাকে দেখেই পর পর তিনটি চড় মারেন। এরপর গলা ধরে তাকে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরেন। এরপর থাপ্পড় দিতে আবার হাত উঁচু করলে দ্রুত এক কর্মচারী গিয়ে তার হাত চেপে ধরেন। তারপর সিরাজুল হককে কক্ষের ভেতর থেকে বের করে দেওয়া হয়।
অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদিন জানান, সিরাজুল হক জোর করে তার চেয়ার দখল করে রেখেছেন। কলেজে গেলে প্রাণে মেরে ফেলবে, এমন হুমকি দেওয়ায় জীবনের নিরাপত্তা না পেয়ে তিনি কলেজে যাচ্ছেন না। হুমকির প্রেক্ষিতে কাটাখালি থানায় গত ১১ সেপ্টেম্বর (জিডি নং-৩৯৭) এবং বোয়ালিয়া মডেল থানায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর (জিডি নং-৮৩৩) জিডি করেছেন। কিন্তু দুই থানার পুলিই কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
অধ্যক্ষ আরো জানান, বুধবার বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে তিনি আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসে কলেজের কাজে যান। এর কিছুক্ষণ পর ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সিরাজুল হক সেখানে গিয়ে আমাকে দেখেই সবার সামনে চড়-ধাপ্পড় দিয়েছেন। এক পর্যায়ে আমাকে মেরে ফেলার জন্য দেয়ালে চেপে ধরেন। এসময় অফিসের কর্মচারীরা আমাকে উদ্ধার করেন। অধ্যক্ষের অভিযোগ, এ ঘটনার পরপরই তিনি বোয়ালিয়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জয়নাল আবেদিনকে চড়-থাপ্পড় মারার বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজুল হক প্রথমে দাবি করেন, বুধবার তিনি শিক্ষা ভবনেই যাননি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থাকার কথা জানালে তিনি বলেন, ‘তাহলে আমাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন না করলেই খুশি হবো।
নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ বলেন, ‘জয়নাল আবেদিন অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সিরাজুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, গত ৯ আগস্ট তিনি জয়নাল আবেদিনকে কলেজে তার কার্যালয়ে ঢুকতে দেননি। সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে গিয়ে হামলা চালিয়েছেন জয়নাল আবেদীনের বাড়িতেও। কলেজে ঢুকতে বাঁধা দেওয়া ও বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগে জয়নাল আবেদিন সংশ্লিষ্ট থানায় আলাদা দুটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন। সিরাজুলের ভয়ে তিনি কলেজে যেতে পারেন না বলে তিনি জিডিতে উল্লেখ করেন।
এদিকে অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদিন কলেজে অনুপস্থিত থাকায় কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ইউএনও সোহরাব হোসেন কলেজের এক শিক্ষককে সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেন। কিন্তু পরদিনই অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করে নেন সিরাজুল হক। তিনি নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ঘোষণা করেন। এখন কলেজটিতে অধ্যক্ষের পদ নিয়ে জটিলতা চলছে।
কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ইউএনও সোহরাব হোসেন বলেন, ‘কলেজে যে এখন কে অধ্যক্ষ সেটা নিয়েই জটিলতা চলছে। জয়নাল আবেদিন অনুপস্থিত থাকলেও তিনি আবার আলাদা কমিটিও অনুমোদন করিয়ে এনেছেন আমাকে না জানিয়ে। এসব ব্যাপারে করণীয় জানতে চেয়ে আমি জেলা প্রশাসক স্যারকে লিখেছিলাম। জেলা প্রশাসন আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে এখনও কোন নির্দেশনা আসেনি।
শিক্ষা ভবনে জয়নাল আবেদিনকে আরেক শিক্ষকের মারধর করার বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘এ রকম ঘটনা ঘটলে তো সেটা ফৌজদারি অপরাধ। এর জন্য পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। সেক্ষেত্রে যদি সিরাজুল হক অভিযুক্ত হন, তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএ..