দাবিকৃত যৌতুকের টাকা না পেয়ে তাবাস্সুম আক্তার জুহি (২২) নামের এক গৃহবধূর বাম হাত চুলোর জ্বলন্ত কাঠ দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে কারাগারে কর্মরত কারারক্ষী স্বামী। তিনি বর্তমানে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্মরত রয়েছেন। তার নাম আসাদুজ্জামান ওরফে দিুপ। তিনি নওগাঁ জেলার বদলগাছি থানার পাহাড়পুর সরাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী রোববার বেলা ১১টার দিকে নগরীর রাণীবাজারে অবস্থিত একটি রেস্টুরেন্টের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ তাবাস্সুম আক্তার জুহি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করে আরো জানান, গত ২০১৩
সালের ২২ মার্চ পারিবারিকভাবে আসাদুজ্জামান দিপুর সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে প্রায় আড়াই লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র দেয়া হয়। সেই সাথে বিভিন্ন সময়ে তার স্বামী দিপু বিভিন্নভাবে কৌশলে আরো ৩ লাখ টাকা আদায় করে। টাকা দেয়ার পর কিছুদিন ভালো থাকলেও আবার টাকা নেয়ার জন্য নির্যাতন শুরু করে। এরমধ্যে তার একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ছেলে মুদাচ্ছের আব্দুল্লাহ তাওহীদের বর্তমান বয়স ৫ বছর। কিছুদিন পর আবার সে টাকার জন্য চাপ দেয়। টাকা না পেয়ে মারধর করে। একপর্যায়ে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপর তিনি আদালতে মামলা করেন। মামলার পর তার স্বামী তাকে আর নির্যাতন করবেনা এমন কথা বলে স্ত্রীকে নিয়ে ভালোভাবে সংসার করার কথা বলে। তাই মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন তিনি।
কিন্ত কিছুদিন আগে থেকে আবার তার স্বামী ২ লাখ টাকার জন্য অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে। কিন্ত তার বাবা আর্থিকভাবে দুর্বল ও পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় অতিরিক্ত টাকা এনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এ কারণে ২০২০ সালের পহেলা সেপ্টেমব তার স্বামী তাকে রান্না করা অবস্থায় চুলোর জ্বলন্ত কাঠ দিয়ে হাত পুড়িয়ে দেয় ও মাথায় আঘাত করে। তারপরও তার স্বামী দিপু তাকে প্রথমদিন চিকিৎসা করতে যেতে দেয়নি। পরের দিন তার শাশুড়ি সাথে নিয়ে গিয়ে ওষুধ কিনে দেয়। সেই পোড়া হাত না শুকানোয় অনেক অনুরোধ করার পর বাবার বাড়িতে চিকিৎসা নিতে যান তিনি। এরমধ্যেই জয়পুরহাট থেকে তার স্বামী রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বদলি হয়ে যায়। রাজশাহীতে নিয়ে আসবে বলে আবার আসবাবপত্র দাবি
করে ও রাজশাহী চলে আসে। কিন্ত বাসার ঠিকানা দেয়নি ও নিয়েও আসেনি। আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও যোগাযোগ করেনা। ফোন দিলেও ফোন ধরেনা। শুধু তাই না তাকে ও তার মাকে নিয়ে অশালীন কথা বলে। ম্যাসেজ দিয়ে বাজে বাজে কথা লেখে। তাকে খোঁজাখুজি করে না পেয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করতে বাধ্য হন তিনি বলে জানান।
তিনি আরো বলেন, আমি এই বিষয় নিয়ে কারাগারের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসক স্যারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যাতে আমি ন্যায্য বিচার পাই। এ বিষয়ে ওই গৃহবধূর স্বামী কারারক্ষী আসাদুজ্জামান ওরফে দিপুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সত্য নয়। স্ত্রী ও শাশুড়িকে নিয়ে কেন অশ্লীল কথা বলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা খারাপ তাই। আমি স্ত্রীকে নির্যাতন করিনি। তাহলে হাত পুড়ালো কে তখন তিনি বলেন, এটি সে নিজে নিজে করেছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে তার মা রাজিয়া সুলতানা, নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন নবদিগন্ত মহিলা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রাজিয়া সুলতানা ও তার ছেলে মুদাচ্ছের আব্দুল্লাহ তাওহীদ উপস্থিত ছিল।
এস/আর