রাজশাহী (মোহনপুর) প্রতিনিধি: শিক্ষকতা শুধু পেশা নয়,মহান ব্রত। এ ব্রত পালনে শিক্ষককে হতে হয় নৈতিক আদর্শে উজ্জ্বল । যিনি শিক্ষার্থীর হৃদয়ে জ্ঞান জাগিয়ে,মনের সুকুমার বৃত্তিগুলোর পরির্চচা করে শিক্ষার্থীকে আর্দশ মানুষে পরিণত করেন তিনিই শিক্ষক। আমাদের দেশের আর্দশ শিক্ষকের বড় অভাব। সততা, নৈতিকতা,উদারতা,আধুনিকতা,ব্যক্তিত্ব তথা সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষকই আর্দশ শিক্ষক। শিক্ষক হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। তাঁকে মনে রাখতে হবে দেশের নেতা বা রাষ্ট্রপ্রধান তথা রাষ্ট্রের রক্ষাধর ব্যক্তিবর্গ সকলেই কোন শিক্ষকেরই ছাত্র ছিলেন। পৃথিবীতে পরাজয় কথাটা কষ্টের ও লজ্জার। অথচ এই “পরাজয়” কথাটি তখনই হয় আনন্দ ও গর্বের যদি ছাত্রের কাছে শিক্ষকের পারজয়, পুত্রের কাছে পিতার পরাজয়। একজন প্রকৃত শিক্ষকই ধারাবাহিকভাবে একজন শিক্ষার্থীকে সহজ থেকে কঠিনের দিকে,জানা থেকে অজানার দিকে জ্ঞানের বিন্দু থেকে নিয়ে যান জ্ঞান সমুদ্রের দিকে।
রাজশাহী মোহনপুর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠা থাকলেও ঐতিহ্যবাহী মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় উল্লেখ্যযোগ্য। মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষকেরা দায়সারা ভাবে বিদ্যালয়ে শ্রেণী কক্ষে পাঠচুকে বাড়ী ফিরে এসে প্রাইভেট বাণিজ্য মেতে উঠেছে। প্রাইভেট বাণিজ্য চলে ভোর ৬ টা থেকে শুরু হয়ে সকাল ১০ টা পর্যন্ত চলছে। ফলে ওই শিক্ষার্থীরা এ্যাসেম্ললীতে উপস্থিত হতে দেরী হয়। ওই শিক্ষকদের নিজস্ব ও ভাড়া বাড়ী গিয়ে দেখা গেছে বাড়ীর ভিতর বাইরে ছোট বড় প্রাইভেট বাণিজ্যর বিদ্যালয়। মিনি বিদ্যালয় বললেও ভুল হবে না।
শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি। প্রত্যেক শিক্ষককে সেটা অনুধাবন করতে হবে। একজন ডাকাত ডাকাতি করে লোক চক্ষুর আড়ালে আর শিক্ষকরা জাতির গড়ার কারিগর হিসাবে দিনে দুপুরে ডাকাতি করছে নির্লজের মতো।
সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে প্রাইভেট বাণিজ্য মেতে উঠেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব ড. আবদুল নাসের চৌধুরী স্বাক্ষরিত পত্রের স্বারক নং শিম/শাঃ১১/৩-৯/২০১১/৪০১ তারিখ ২৫/০৬ /১২ ইং। সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-১) সাখায়েত হোসেন বিশ্বাস মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের স্বারক নং ৬সি/১-সম/২০০৫/৫১০ তারিখ ২৮/০৪/১৬ স্বারকে কোচিং বাণিজ্য ও প্রাইভেট শিক্ষকদের ওই বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা ২০১২ জারি করেন। জারিকৃত অধ্যাদেশ উপক্ষো করে শ্রেণী কক্ষে পাঠদানে মনোয়োগী না হয়ে অধিকাংশ সময় প্রাইভেট বাণিজ্যে বেশি সময় ব্যয় করছেন ।এ ক্ষেত্রে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা এবং অভিভাবকগণ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তাদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ আর চরম হতাশা।
এ সম্পর্কিত মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন ৭৩৬৬/১১ এর আদেশের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে আদেশ প্রদানে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। উক্ত নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে এসব মিনি প্রাইভেট সেন্টারে ৩ শিফট এ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া তাও আবার এক বিষয়ের ওপর। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে ১২ দিনে মাস শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় এক বিষষের ওপর প্রতিমাসে জন প্রতি ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা গুনতে হয়। মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহ বেশ কিছু বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ বাসা ভাড়া নিয়ে প্রাইভেট সেন্টার তৈরী করে রমরমা প্রাইভেট বাণিজ্যের আড়ালে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ সমস্ত প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে সাথে জড়িতরা হলেন
মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কলিম উদ্দিন (বাসাভাড়া নিয়ে) নুরুল ইসলাম মডেল কোচিং সেন্টারের রুম ভাড়া নিয়ে, গণিত এর শিক্ষক পলাশ হোসেন আতাউর রহমান নতুন কুড়িঁ কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করছেন,আর বাড়তি চাপ আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছেন এবং এ ব্যয় নির্বাহে হিমশিম খাচ্ছে অভিভাবকগণ। এদিকে ওই শিক্ষকগণ (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহীন সাথে যোগ-সাজসে নির্ধারিত কমিশন বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়া এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের তাদের কাছে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন।
নাম প্রকাশ করার না শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ইতিপূর্বে অধ-বার্ষিক,ও বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নে সাথে প্রাইভেট পরীক্ষার প্রশ্ন পত্রে সাথে মিল দেখা গেছে, নুরুল স্যার মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকায় নিজের আধিপত্য বিস্তার করে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে তার কাছে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন। সে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীর্তি দেখায় কর্কশ অশাল্নীন ভাষায় কথা বলে শিক্ষার্থীদের সাথে এবং তার কাছে যারা প্রাইভেট পড়ে তাদের তিনি পছন্দ করেন স্কুল পরীক্ষায় বেশী নম্বর ব্যবস্থা করে দেন। আর যারা তার কাছে প্রাইভেট পড়েন না তাদেরকে ওই স্কুলের শিক্ষার্থী বলে মনে করেন না। তিনি ক্লাসে দম্ভের সাথে বলে আমি মুক্তিযোদ্ধার ছেলে তোদের অভিভাবকদের বলে দিস।
আমার কাছে প্রাইভেট না পড়লে কিছুই শিখতে পারবিনা পরীক্ষার খাতায় নম্বরও বেশী পাবিনা। (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহীন বিদ্যালয়ের দারোয়ান ( ব্যক্তিগত সহকারী) আব্দুস সাত্তারের মাধ্যমে প্রাইভেট সাথে যুক্ত শিক্ষকদের নিকট হতে নির্ধারিত কমিশন উত্তোলন করেন থাকে বলে জানা গেছে। ওই দারোয়ান কারনে ইতি মধ্যে কয়েকজন মাষ্টাররুলে কর্মচারী তাদের কর্মস্থল হতে চলে গেছেন।
মোহনপুর উপজেলা সচেতন মহল মনে করেন সরকার শিক্ষদের বেতন ভাতা-দিচ্ছেন শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ সরকার প্রদত্ত বেতন ভাতার চেয়ে কয়েকগুণ আয় করছেন প্রাইভেট পড়িয়ে। যার ফলে বিদ্যালয়ে পাঠদানে অমনোযোগী বলে তারা মনে করছেন। তারা মনে করেন প্রাইভেট বাণিজ্য সাথে যুক্ত ওই শিক্ষদের বদলীসহ তাদের বিরুদ্ধে উদ্ধর্তন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) সুলতানা শাহীন সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি জানান, স্কুল ক্যাম্পাসের মধ্যে কোন শিক্ষক প্রাইভেট পড়ান না। আমার বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক ক্যাম্পাসের বাহিরে প্রাইভেট বাণিজ্য করলে সেই দায়িত্ব তাদেরকে বহন করতে হবে। অভিযোগ পেলে তিনি যথাযর্থ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার-উল-হালিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিমালা উপেক্ষা করে যে সকল শিক্ষক কোচিং ও প্রাইভেট বাণিজ্য সাথে জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/জেএন