নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ত্রী পারুল বেগম (৬৫) এর চিকিৎসা করাতে গিয়ে উল্টো ইন্টার্ন চিকিৎসক কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক পুলিশ সদস্য ইসাহাক আলী ও তার ছেলে রাকিবুলের উপর ন্যাক্কারজনক হামলা ও পুলিশে তুলে দেয়ার প্রতিবাদে রাজশাহী মহানগরীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার সকালে নগরীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজারে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ রাজশাহী জেলা ও মহানগর ইউনিট কমান্ড’র আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধারা এ মানবববন্ধনে অংশগ্রহণ করে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মহানগর শাখার সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে এবং সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ৭১ রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বলের সঞ্চালনায় মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, চিকিৎসা অবহেলায় মৃত্যু এবং মুক্তিযোদ্ধা ও তার সন্তানের ওপর হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।
বক্তারা বলেন, রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনা তদন্তে যে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এটি নিরপেক্ষ না। তদন্ত কমিটির সদস্যরা সকলেই চিকিৎসক। এ কারণে তারা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের রক্ষা করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। অচিরেই বিচার
বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা না হলে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন। যেসব ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হামলার সাথে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আর এটি না হলে আমরাই তাদের বিচার করব।
মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ভালো চিকিৎসক হবার আগে ভালো মানুষ হতে হবে। কিন্তু চিকিৎসকরা চিকিৎসাসেবা দেন না। শুধু মুক্তিযোদ্ধারাই নন, দেশের সাধারণ মানুষও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। কিছু চিকিৎসককে মনে হয়, এরা মাফিয়া গ্যাংয়ের সদস্য। আর হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান মাফিয়া সর্দার। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তার সহযোগী।
তারা বলেন, রামেক হাসপাতালে বর্তমানে দুর্নীতি চরমে পৌঁছেছে। আর এ দুর্নীতি আড়াল
করতেই হাসপাতালে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেন না পরিচালক। আমরা অবিলম্বে রামেক হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চাই। হাসপাতালের দুর্নীতি সাংবাদিকরা প্রকাশ করেন। জাতি জানতে চায়, চিকিৎসক নামধারী স্বাস্থ্য প্রশাসকরা দেশের অর্থ কীভাবে লুট করছে।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন গেরিলা কমান্ডার শফিকুর রহমান রাজা, কবিকুঞ্জের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামানিক, মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান, মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম, রবিউল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম, হাকিম আতাউর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক
আলমগীর মোর্শেদ রঞ্জু, মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন মোল্লা, নাজিম উদ্দিন প্রমুখ।
ঘোষণার জন্য সোমবার বেলা ১১টায় রাজশাহী মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলন করা হবে বলেও মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে ঘোষণা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাকে মারধরের বিচার নিশ্চিত করেই তারা ঘরে ফিরবেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
উল্লেখ্য, ঘটনার দিন ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা ইসাহাক আলী অভিযোগ করে সংবাদকর্মীদের জানিয়েছিলেন, চলতি মাসের গত ২ সেপ্টেমবর সকালে তাঁর স্ত্রী পারুলকে চিকিৎসার জন্য সকাল ৭ টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান তিনি। পরে পারুল বেগমকে ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পর তার ছেলে রাকিবুল ওয়ার্ডে দায়িত্বরত ইন্টার্ন ডাক্তার
শোভন সাহার কাছে গিয়ে তার মাকে দেখার জন্য অনুরোধ করেন। শোভন সাহা ডিউটি শেষের কারণে তার মাকে দেখতে চাননি। পরের ডাক্তার দেখবে বলে জানান। এরপর লিটন যান আরেক ইন্টার্ন ডাক্তার আব্দুর রহিমের কাছে। সেও জানিয়ে দেয় যে এখন বের হবে। রোগী দেখতে পারবে না। এভাবেই কেটে যায় আধ ঘন্টা। চিকিৎসা পাওয়া ছাড়াই এরমধ্যেই পারুল বেগমের মৃত্যু হয়।
চিকিৎসা ছাড়াই মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় ছেলে রাকিবুল ওয়ার্ডের ভেতরেই উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করছিলেন আর ডাক্তারদের নিয়ে বিভিন্ন ধরণের কথা বলছিলেন। এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসক শোভন সাহা ও আব্দুর রহিমসহ আরও কয়েজন এসে তাকে গালাগাল দিয়ে ওয়ার্ড থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করেন। রাকিবুলের সঙ্গে দুই ইন্টার্ন ডাক্তারের ধ্বস্তাধস্তি হয়। এরপরই এই দুই ইন্টার্ন অন্যদের ফোন করে ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে ডেকে নেয়।
পরে রাকিবুলকে আটক করে বেধড়ক মারধর করেন। পরে রোগীর স্বজনদের ওয়ার্ড থেকে বের করে দেয়া হয়। মৃত পারুল বেগমের স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ইসাহাক আলীসহ স্বজনরা লাশ চাইলে ইন্টার্নরা লাশ আঁটকে দিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। দুপুর সোয়া ১ টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা ইসাহাক আলী লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়ে হাসপাতাল থেকে স্ত্রীর লাশ নিয়ে যান। তবে পুলিশ ডেকে পারুল বেগমের ছেলে রাকিবুলকে রাজপাড়া থানার ওসির কাছে হস্তান্তর করে ইন্টার্নরা। হাতজোড় করে ক্ষমা চাওয়ানোর পরেও ইন্টার্নরা রাকিবুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
এমকে