রাজশাহী (নাটোর) প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন রেল স্টেশন হলো নাটোরের লালপুর উপজেলার আজিম নগর রেলস্টেশন। দেশের পূর্ব ও দক্ষিনাঞ্চলের সাথে পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগের সকল ট্রেন এ স্টেশনের উপর দিয়ে চলাচল করে। স্টেশনের অদুরেই পশ্চিম পার্শে রয়েছে অধিক ব্যবস্ততম একটি রেল গেট। এ গেট দিয়ে প্রতি মিনিটে গড়ে ৪০-৫০ টি যান বহন চলাচল করে। আন্তনগর, মেইল, লোকাল, মালট্রেন ও মটর ট্রলিসহ প্রতিদিন ৬০-৬৫টি ট্রেন চলাচল করে এ স্টেশন ও রেলগেট দিয়ে।
অথচ এ রকম একটি গুরুত্বপুর্ন স্টেশনে কোন স্টেশন মাষ্টার নেই। ফলে সিগনাল ব্যবস্থা বন্ধ সহ সকল যোগাযোগ ব্যাবস্থা বন্ধ রয়েছে। ১২ পদের মধ্যে মাত্র একজন পোর্টার ও একজন পয়েন্টসম্যান দিয়ে চলছে স্টেশন। আর সিগনাল ব্যাবস্থা বন্ধ থাকার ফলে রেল গেটের অটোলক ব্যবস্থা এখন এনালকে পরিনত হয়েছে। অত্যান্ত ব্যাস্ত এ রেলগেটর গেটম্যান ট্রেনের মাথা দেখে গেট বন্ধ করছে আর ট্রেন পার হলে তা খোলা হচ্ছে। যা অত্যান্ত ঝুকি পুর্ন। এভাবে চলতে থাকলে যে কোন সময় এখানে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
রোববার স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের কম্পিউটার ও টেলিফোন গুলো বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। একজন কর্মারী টিকেট বিক্রি করছে। কোন ট্রেন সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারছেনা। আজিমনগর রেলওয়ে স্টেশন ও বাংলাদেশ রেলওয়ে পাকশি বিভাগীয় অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানাযায়, আজিমনগর স্টেশনটি ‘বি’ শ্রেণির। যেখানে তিনজন মাস্টার, তিনজন পয়েন্টম্যান, তিনজন বুকিং সহকারী ও দুজন পোর্টার ও একজন ক্লিনারের পদ রয়েছে। এর মধ্যে দুজন স্টেশন মাষ্টার ও দুজন পয়েন্টসম্যান ও দুজন পোর্টার ও একজন ক্লিনার কর্মরত ছিল।
কিন্তু গত ৩১ অক্টোবর দুজন স্টেশন মাষ্টারসহ মোট ৫জনকে বদলি করা হয়। এর মধ্যে স্টেশন মাষ্টার জিয়াউদ্দিনকে মহেরা ও আব্দুল মালেককে কালিয়াকৈরে এবং পয়েন্টসম্যান সেন্টু আলীকে কালিয়াৗকর, তোরাব আলীকে পার্বতিপুরে ও পোর্টার মোজাফরকে রিলিফে বদলি জনিত কারনে তারা আজিম নগর থেকে চলে যায়।
ফলে বর্তমানে একজন পয়েন্টসম্যান,একজন পোর্টার ও একজন ক্লিনার কর্মরত আছে। মুলত ওই একজন পয়েন্টসম্যান ও পোর্টার দিয়ে চলছে স্টেশন। প্রতিদিন ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, দিনাজপুর, রংপুর, লালমনিরহাটসহ দেশের পূর্ব ও দক্ষিনাঞ্চলের সাথে পশ্চিমও উত্তরাঞ্চলের সকল আন্তনগর, মেইল, লোকাল, মালট্রেন ও মটর ট্রলিসহ প্রতিদিন ৬০-৬৫টি ট্রেন আপ ডাউনে এ স্টেশন ও রেলগেট দিয়ে যাতায়াত করে।
স্টেশনে অপেক্ষমান একাধিক যাত্রী অভিযোগ করে জানান, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে ব্যাস্ততম ও গুরুত্বপুর্ন স্টেশন হওয়া সর্তেও কি ভাবে এখান থেকে স্টেশন মাষ্টারসহ অন্যান্য কর্মচারী বদলী করা হয়েছে তা বোধগোম্য নয়। স্টেশন মাষ্টার না থাকায় ট্রেনের সঠিক খবর পাওয়া যাচ্ছেনা এবং টিকেট পেতেও অসুবিধা হচ্ছে। আজিম নগর রেল গেটের গেটম্যান আশরাফ আলী জানান, নাটোর-লালপুর প্রধান সড়কের এই রেলগেটটি খুবই ব্যাস্ততম গেট। এ গেট দিয়ে প্রতি মিনিটে গড়ে ৪০-৫০ টি যান বহন চলাচল করে। এই গেটের উভয় পার্শে দুটি কলেজ, ৫টি স্কুল ও একপার্শে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলসসহ উপজেলা পরিষদ অবস্থিত। সিগনাল বন্ধ থাকায় গেটের অটোলক কাজ করছেনা ফলে যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
অপর গেটম্যান বাবু জানান, সিগনাল বাতি না জ্বলায় গেটে খুবই সমস্যা হচ্ছে। এখন ট্রেনের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। আর দ্রুতগামী ট্রেনের ক্ষেত্রে এ সমস্য আরও প্রকট। গেট বন্ধ করতে ১-২ মিনিট সময় লাগে কিন্তু ট্রেন দেখা যাওয়ার কয়েক সেকেন্টের মধ্যেই রেল গেটে চলে আসে। ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে। রেলের পাকশী অঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা ডিটও আব্দুল্লাহ আল মামুন টেলিফোনে জানান, লোকবল সংকটের কারনে আজিম নগর স্টেশনের স্টেশন মাষ্টার সহ কয়েকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, পাকশী অঞ্চলে স্টেশন রয়েছে ১১৪টি এর মধ্যে আজিম নগরসহ ৪৫টি স্টেশনে স্টশন মাষ্টার নেই। কবে নাগাদ স্টেশনে মাস্টার আসবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে তবে সঠিক সময় বলা যাচ্ছেনা।
এ দিকে সিগনাল বাতি না জ্বলায় শত শত শিক্ষার্থী ও যানবহন রেলগেট দিয়ে চলাচল ঝুকিপুর্ন হওয়ায় নিরাপত্তার সার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অতি সত্তর আজিমনগর রেল স্টেশনে স্টেশন মাষ্টার নিয়োগের প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেন এ অঞ্চলের জনসাধারণ।
খবর২৪ঘন্টা / সিহাব
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।