1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
মামলা বাণিজ্য ও রাজনৈতিক মদদে গ্রেফতার এড়িয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা! - খবর ২৪ ঘণ্টা
শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১০ পূর্বাহ্ন

মামলা বাণিজ্য ও রাজনৈতিক মদদে গ্রেফতার এড়িয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা!

রাজশাহীতে পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভুমিকা-

  • প্রকাশের সময় : বৃস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫

নজরুল ইসলাম জুলু : জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হাসিনার পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হওয়া পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের জোর দাবি তোলা হয়। তবে ৬ মাস অতিক্রম করলেও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো সংস্কার চোখে পড়েনি। সংস্কারের নামে দোষী, অভিযুক্ত ও সমালোচিত পুলিশ সদস্যদের কেবল একস্থান থেকে আরেক স্থানে বা এক ইউনিট থেকে অন্য স্থানে বদলি ও পদায়ন এবং পুলিশ বাহিনী সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকের রঙ পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

জুলাই -অগাস্ট এর আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের নির্যাতন করে বিতর্কিত ভূমিকা পালনের জন্য বিভিন্ন মামলায় আসামী হোন পুলিশবাহিনীর বেশ কিছু সদস্য। কিন্তু, তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও অবহেলার দেখা দিয়েছে। এখনো পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে আওয়ামী মদদ পুষ্ট কর্মকর্তারা বহাল তবিয়তে কর্মরত আছেন। কাঙ্ক্ষিত সংস্কার না হওয়ায় মূলত পুলিশ বাহিনীর মধ্যে এখনো আওয়ামী লীগের মদদপুষ্টরা বহাল তবিয়তে রয়েছেন এবং ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। দীর্ঘ ১৬ বছরে হাসিনা শাহী কীভাবে পুলিশবাহিনীর আওয়ামীকরণ করেন তা কারও অজানা নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এখনো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তার মনে আওয়ামী লীগ প্রীতি বিরাজ করছে। আর এই আওয়ামী প্রীতি থেকেই পুলিশের আওয়ামী পন্থি সদস্যরা দ্বায়িত্ব পালনে নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে। এই নির্লিপ্ততার জন্যই আন্দোলনের সময় ধারালো ও প্রাণঘাতী অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো বেশিরভাগ আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। এদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে কোনো জোরালো তৎপরতা বা অভিযানও চোখে পড়ছে না।

এর ফলস্বরূপ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘাপটি মেরে বসে থাকা আওয়ামী সন্ত্রাসীরা দেদারসে সুযোগ বুঝে গর্ত থেকে বের হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। প্রায়ই আন্দোলনের সময় নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা আওয়ামী সন্ত্রাসীর শিকার হচ্ছেন।

যেকোনো কারণেই হোক না কেন পুলিশ প্রশাসন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ও অপরাধ দমন করে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে ব্যর্থ হচ্ছেন। তাদের এই ব্যর্থতার জন্যই দেশের বিভিন্ন জায়গা তে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বুক ফলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাজশাহীতেও পুলিশের একাংশের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ‘বুক ফুলিয়ে’ প্রকাশ্যে ঘুরছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এজাহারভূক্ত মামলার আসামীরাও অবলীলায় গ্রেফতার এড়িয়ে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনকি আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পরিষদ ও থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এতে বিএনপি, জামায়াত সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ১২ থানায় মোট মামলা হয়েছে ৪২টি। এসব মামলায় মোট আসামি ৯ হাজার ৭৭৫ জন। এদের মধ্যে এজহারভুক্ত আসামি ২ হাজার ৫ জন। আর ৭ হাজার ৭৭০ জন রয়েছেন অজ্ঞাতনামা আসামি। কিন্তু, এখন পর্যন্ত মাত্র ২০০ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এইদিকে আগস্ট পরবর্তী সময়ে জেলা পুলিশের থানায় দায়ের হয়েছে ৩৫টি মামলা। এসব মামলায় এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে মাত্র ৬১৮ জন। তবে মামলার আসামি সংখ্যা জানায়নি জেলা পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে, এজহারভুক্ত আসামিরা প্রক্যাশ্যে ঘুরলেও পুলিশ তাদের ধরছে না। আসামিরা টাকা দিয়ে ম্যানেজ করছেন পুলিশের কর্মকর্তাদের। আসামির তথ্য দেওয়া হলে অভিযানে নামার আগেই আসামিকে টেলিফোন করে সরে যেতে বলছে পুলিশ।

বিএনপি, জামায়াত ও এদের অঙ্গসংগঠনের কিছু নেতাকর্মীদের সহায়তায় পুলিশের কিছু দূর্নীতিবাজ সদস্যদের মামলা বাণিজ্যে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগও উঠেছে।

মামলা বাণিজ্য, রাজনৈতিক দলের কিছু নেতাকর্মীদের তদবির,মদদ ইত্যাদি কারণে আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। রাজশাহীতে মামলা এবং তদবির বাণিজ্যের শিকার হয়েছেন খোদ বিএনপির কিছু নেতাকর্মী। গত ২১ শে নভেম্বর দিনে দুপুরে রাজশাহী নগরীর ভদ্রা এলাকায় হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসীরা ছুরি দিয়ে পেটে ও মাথায় আঘাত করে মারাত্মক জখম করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর, সাবেক ছাত্রদল নেতা ও রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক বজলুল হক মন্টুকে। এক মাস কাঠখড় পুড়িয়ে মন্টু বোয়ালিয়া মডেল থানায় উক্ত ঘটনায় একটা মামলা দায়ের করেন। বিএনপি নেতা মন্টুর উপর হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো হামলার ঘটনায় জড়িত আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা, সদস্য সচিব মামুন অর রশীদ সহ প্রমুখ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশও করেন। কিন্তু, এখনো এই মামলার আসামীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সহ যুব লীগ ও শ্রমিক লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীদেরও প্রকাশ্যে শহরে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। সাবেক রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের শ্যালক ২১ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও রাসিক-এর সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ৫ই আগস্টে ছাত্র শিবির নেতা রায়হান আলী হত্যা মামলার আসামী নিজাম উল আজীম নিযাম ও তার ভাই আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদার কুতুব গা ঢাকা দিলেও আত্মগোপনে থেকেই নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। নিযাম তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং নিজেদেরকে বিএনপির কর্মী দাবি করা কয়েকজন ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় এখনো ২১ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে নিজেদেরকে বিএনপির নেতাকর্মী বলে পরিচয় দেওয়া উক্ত এলাকার এইসব ব্যক্তিবর্গ বিগত রাসিক নির্বাচনে নিযামের জন্য নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিল। তারা নিযাম কে জয়ী করতে তার জন্য ব্যাপক প্রচার প্রচারণা, সভা সমাবেশ আয়োজন করা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়া, পোস্টার লাগানো ইত্যাদি কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। এরা নিজেদেরকে বিএনপির নেতাকর্মী দাবি করলেও বিএনপিতে এদের কোনো পদ নেই বলে জানা গেছে। এখনো তারা উক্ত এলাকায় প্রভাববিস্তার করে যাচ্ছে। বিএনপির চেয়ারপারসন এর উপদেষ্টা জনাব মিজানুর রহমান মিনু’র অনুসারী ও নিযামের একান্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী নগরীর ২১ নং ওয়ার্ডের সাগর পাড়া এলাকার নুরুল ইসলাম নূরু এখন নিযামের পরামর্শে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকায় প্রভাব বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে । গুঞ্জন রয়েছে, নিযামের বিশ্বস্ত হওয়ায় নুরূকে আগামী নির্বাচনে ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে জয়ী করতে এখন থেকেই অর্থ সহায়তা করছে নিযাম। এলাকায় গণসংযোগ বৃদ্ধি, নির্বাচনকে ঘিরে পরিচিতি বাড়ানোর জন্য পোস্টার লাগানোর কাজে নিযামের নির্দেশ অনুযায়ী নুরূ কে সাহায্য করছে নিযামের লোকজন।

এইদিকে, গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রতিমন্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা সহ ৬০ জনের নামে চাঁদাবাজি ও বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা হয়। জেলার দুর্গাপুর উপজেলার সুখানদিঘি এলাকার রাকিবুল ইসলাম মামলাটি করেন। মামলার এজহারভুক্ত আসামি ২০ জন। ওই মামলার ৪ নম্বর আসামি বেলপুকুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউজ্জামান বদি। তিনি বেলপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। বদির ছেলে সুমনুজ্জামান সুমন পুঠিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনিও মামলার আসামি।

স্থানীয় সূত্র জানা যায়, বদি এখনো উক্ত এলাকায় বুক ফুলিয়ে চলছেন। বেলপুকুর ইউনিয়ন পরিষদও চালাচ্ছেন তিনি। সরকারি বরাদ্দের ত্রাণ তিনি তালিকা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিচ্ছেন। তথ্য সূত্রে জানা যায়, ৮ জানুয়ারি তিনি বেলপুকুর ইউনিয়ন পরিষদে ছিলেন। তার ছেলে সুমনও রয়েছেন এলাকায়। তবে রহস্যজনক কারণে পুলিশ তাদের ধরছে না। অথচ বদির নিজের গ্রাম পুঠিয়ার জামিরায় অভিযান চালিয়ে রাজু আহমেদ পনি নামে আওয়ামী লীগের এক সমর্থককে গ্রেফতার করে আরএমপির বোয়ালিয়া থানা পুলিশ।

এছাড়াও, জেলার দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাগমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমজাদ হোসেন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার ছেলে হিটলার মাহমুদ যুবলীগের নেতা। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপির ডান হাত ছিলেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা ছাড়াও হিটলারের বিরুদ্ধে রাজশাহী নিউ ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্রী কে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগী ঐ ছাত্রী জানান, তিনি ২০২০ সালে ধর্ষণের শিকার হোন। হিটলারের বাবা আমজাদ হোসেন মেম্বার গণিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তারা দলীয় দাপট দেখাতো। কিন্তু তার মামা সাখাওয়াত হোসেন বল্টু বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ও মনোনয়ন প্রত্যাশী, তার খালু বিএনপির আরেক প্রভাবশালী নেতা এনামুল হক বাসুপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি। এখন সে বিএনপির দাপট দেখাচ্ছে। ঐ কলেজছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ তাদের ধরছে না। আমি থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। আওয়ামী লীগের ওই নেতারা বিএনপির আশ্রয়ে আছে। পুলিশকে দেড় লাখ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে রেখেছে। তাই তাদের গ্রেফতার করছে না। ধর্ষণের বিচার পাওয়া নিয়ে আমি শঙ্কায় আছি।

তবে, ভুক্তভোগী ঐ নারীর অভিযোগ অস্বীকার করে বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কলেজছাত্রী মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে। আমরা তার কথা শুনে লিখিত অভিযোগ নিয়েছি। তবে সে নিজেই আমাদের অফিসারের সাথে দুর্ব্যবহার করেছে।
সূত্র আরও জানায়, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সোহরাব আলী খান প্রকাশ্যে নেতাকর্মী নিয়ে শোডাউন দিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান। সোহরাব মোহনপুরের ধুরইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর ওই স্কুলের ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর ও অশ্লীল কথাবার্তা বলার দায়ে স্থানীয়রা তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। সেই সোহরাব সম্প্রতি জেলার মোহনপুরে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্যও দিয়েছেন। বাঘা ও চারঘাটে আওয়ামী লীগের ফখরুল, একরামুল, আক্কাস, লাবু ও মুক্তারসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা বর্তমানে একটি রাজনৈতিক দলে ভিড়ছেন। মহানগর শ্রমিক লীগের শীর্ষ এক নেতা ইতোমধ্যে বড় একটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনের সভাপতি বনে গেছেন! ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছেন মামলার এজহারভুক্ত অনেক আসামি। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম এবং রাজশাহী সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার খায়রুজ্জামান লিটন সপরিবারে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন অনেক আগেই। জেলার ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের শুধু রাজশাহী-৩ (পবা- মোহনপুর) ও রাজশাহী-৪বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গত বছরের অক্টোবর মাসে এ দুজনকেই র‌্যাব গ্রেফতার করে। এসব ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ বলেন, ‘পুলিশ তো কোনো কাজই করছে না। পুলিশ আওয়ামী লীগের সাথে লিয়াজোঁ করে চলছে এবং রাতের অন্ধকারে টাকা, অবৈধ ফেনসিডিলের ব্যবসা এগুলোর সাথে পুলিশ জড়িত, মাদকের সাথে পুলিশ জড়িত। ঠিক আগে যে অবস্থা ছিল এখনো তাই। চারঘাট-বাঘাতে মাদকের লোকজন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং পুলিশের সাথে তাদের যোগাযোগ। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে পুলিশের সহযোগিতায়।’ বিএনপির প্রবীণ এই নেতা বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব তো এগুলো দেখতে মানা করেছে, প্রশাসনের বিরুদ্ধে যেতে মানা করেছে, যার জন্য আমরা কথা বলছি না। কিন্তু আসলে তো ঘটনা- পুলিশ নিষ্ক্রিয়। একটা অস্ত্র কিন্তু এ পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি। আওয়ামী লীগের এত অস্ত্র আছে, চারঘাট-বাঘায় শাহরিয়ার (সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) যত অস্ত্র দিয়েছিল, একটা অস্ত্র তারা উদ্ধার করতে পারেনি। কীসের জন্য করছে না বা কী ব্যাপার?’

আবু সাঈদ চাঁদ অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশের কিন্তু কোনো কাজ বা দক্ষতা এই ৫ মাসে আমরা দেখতে পাইনি, লক্ষ্য করিনি। একদম নিষ্ক্রিয়। পুলিশ কোনো কাজ করছে না। পুলিশ সচল হোক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের দায়িত্ব পালন করুক, সেটা তো করছে না। বরং আগেও মাদকের সাথে পুলিশ জড়িত ছিল, এখনো মাদকের সাথেই জড়িত। আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে পুলিশের সহযোগিতায়। আমরা (পুলিশকে) বলছি, আসেন। আসতে লাগবে ৪ ঘণ্টা, ওখান থেকে আগে টেলিফোন করে দিচ্ছে, আপনারা হেটি (সরে) যান, তারপর (আসামিরা) হেটি (সরে) যাচ্ছে।’

রাজশাহী মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম রবি বলেন, ‘প্রথমত পুলিশের অবহেলা আছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে যেতে তারা ভয় পাচ্ছে কি না আল্লাহ ভালো জানেন। দ্বিতীয় বিষয় হলো, অনেকে টাকা-পয়সা দিয়ে কনভেন্স করছে, ওদেরকে ধরছে না। যারা ছাত্র-জনতার ওপর হামলার জড়িত না, নিরীহ মানুষ, তাদেরকে যাতে মামলায় না ফাঁসাতে পারে। যারা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাই।’

এসব ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘মামলায় যারা অভিযুক্ত তাদের বিরুদ্ধে আরও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। আমি প্রশাসনসহ সবাইকে বলেছি যে, আপনারা দ্রুত ব্যবস্থা নেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক। দলীয় যারা সহিংসতায় ছিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।’

পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা নিয়ে ভুক্তভোগী বিএনপি নেতা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মো: বজলুল হক মন্টু বলেন, ” দুঃখজনক হলেও সত্যি যে পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তার জন্য দোষীদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। আমার দল এবং দলের নেতারা সব সময় বলে আসছি অপরাধীদের কোনো দল,ধর্ম,বর্ণ নেই। অভিযুক্ত যে দলের বা মতেরই হোক না কেন তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় যদি না আনা যায় তাহলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না। আমরা দেখতে পাচ্ছি পুলিশ প্রশাসন অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালানো জন্য আমি একটি মামলা দায়ের করেছি। আশা করেছিলাম তদন্ত সাপেক্ষে মামলার আসামিদের গ্রেফতার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। কিন্তু এখনো তাদের গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের উপর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অসংখ্য মামলা করা হয়েছে। আমাদেরকে পুলিশ বাহিনী দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। আমরা মাসের পর মাস বাড়িঘর, পরিবার ছেড়ে পালিয়ে বেড়িয়েছি। আমাদেরকে গ্রেফতারে পুলিশ কত অভিযান পরিচালনা করেছে। গ্রেফতার করে শারীরিক নির্যাতন করেছে।জামিন পেয়ে বের হতে না হতেই কখনো জেল গেইটে আবার কখনো আদালতে প্রাঙ্গণেই আবার গ্রেফতার করে জেলে ভরা হয়েছে। অথচ, এখন অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশের কোনো মাথাব্যথা নেই বলেই মনে হচ্ছে। আসলে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে পুলিশ বাহিনীর এমন গা ছাড়া আচরণ মেনে নেওয়ার মতো না। আমরা আশা রাখবো আসামিদের গ্রেফতারে তারা আরও তৎপর ভূমিকা পালন করবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি থাকবে তারা দ্রুত পুলিশ বাহিনী থেকে আওয়ামী মদদ পুষ্ট কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। পুলিশ বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদ গুলো কে আওয়ামী প্রভাবমুক্ত না করা অব্দি আমাদের কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসবে না।”

রাজশাহী নগর জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক আশরাফুল আলম ইমন বলেন, ” স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের সময়ে আমাদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা হয়েছে। আমরা বছরের পর বছর পালিয়ে বেড়িয়েছি গ্রেফতার আর পুলিশি নির্যাতন এড়াতে। তবুও আমাদের রক্ষা হয় নি। পুলিশ বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা গুলো তাদের বিভিন্ন টেকনোলজি ও সোর্স ব্যবহার করে আমাদের অবস্থান চিহ্নিত করে আমাদেরকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের পর বারবার রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করেছে। আমাদেরকে আদালতে হাজির করা হতো ডান্ডাবেড়ি পড়িয়ে। জেলহাজতেও ডান্ডাবেড়ি দিয়ে রাখতো। সুস্থ শরীরে কখনো আমরা আদলতে হাজিরা দিতে যেতে পারিনি। অথচ সেই পুলিশ এখন আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। তাদেরকে আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে বলা হলে তারাই উল্টো আমাদের কাছে আসামিদের অবস্থানের তথ্য চায়। আমাদেরকে ধরিয়ে দিতে বলে। আসামি ধরা বা তাদের অবস্থানের তথ্য দেওয়া কী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের কাজ? তাহলে, আগে তারা কীভাবে অভিযান পরিচালনা করে আমাদেরকে গ্রেফতার করতো? তাও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি পুলিশ প্রশাসনকে সাহায্য করার। আসামিদের ব্যাপারে তাদেরকে নিজ দ্বায়িত্ববোধ থেকেই তথ্য দিই। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। আসলে ৫ই আগস্টের পর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল পুলিশ প্রশাসন সংস্কারের। কিন্তু, পুলিশ প্রশাসন সংস্কারের নামে রীতিমতো ছেলে খেলা করা হয়েছে। এখনো আওয়ামী প্রেতাত্মারা পুলিশ বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে আছে। তাদের অপসারণ করা না হলে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের ব্যাপারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ হবে না। তাই দল, মত নির্বিশেষে সবাইকেই পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে থাকা আওয়ামী মদদ পুষ্ট কর্মকর্তাদের যেন কোনোভাবেই গুরুত্বপূর্ণ কোনো জায়গায় পদোন্নতি না করা হয় বা নিয়োগ না দেওয়া হয় সে বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সজাগদৃষ্টি রাখতে হবে এবং প্রশাসনের মধ্যে থাকা আওয়ামী প্রেতাত্মাদের চিহ্নিত করে অপসারণের বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে। নইলে সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এইভাবেই গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবে।”

তবে, এসব অভিযোগ বিষয়ে আরএমপির মুখপাত্র সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার ওপর হামলা ও বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত আসামিদের প্রতিদিনই গ্রেফতার করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বিএ..

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST