ঢাকাসোমবার , ৩১ অক্টোবর ২০২২
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মামলাবাজ অধ্যক্ষ মুসা মিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ৩১, ২০২২ ৪:০৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

তার অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বললেই মামলা করেন তিনি। এভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে এক ডজনের বেশি মামলা করেছেন তিনি। কীর্তিমান সেই পুরুষ হলেন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার নান্দিগ্রাম দারুস সালাম আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মুসা মিয়া।

তার বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেছে এলাকাবাসী।

নান্দিগ্রাম মাদরাসার বিষয়ে সরে জমিনে জানতে গেলে, সাংবাদিকদের দেখে যেনো গ্রামবাসীরা প্রাণ ফিরে পায়। বহু মানুষ ছুটে আসেন কিছু না কিছু বলার জন্য। তবে তাদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। কারণ ওই অধ্যক্ষ সবাইকে করে “ডোন্ট কেয়ার”।

এলাকাবাসীরা অধ্যক্ষ মুসা মিয়ার নানান অপকর্মের কথা তুলে ধরেন। মাদরাসার কোন ব্যত্যয় দেখে কেউ প্রতিবাদ করলে বা মুখ খুললে তার ভাগ্যে জোটে মামলা। আর এভাবেই দমিয়ে রাখা হয়েছে পুরো গ্রামের যুব সমাজ থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত। তার মামলা থেকে বাদ যায়নি জনপ্রতিনিধি, মাদরাসার সভাপতি এমনকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৮ সালে মাদরাসাটির সভাপতি হন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইমাম উদ্দিন কবির। তখন ওই এলাকার একটি সরকারি পুকুর মাদরাসার নামে নিয়ে নিজেই ভোগ দখল করতে থাকেন। এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজন এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইমাম উদ্দিন কবির সহ সবাই মিলে প্রতিবাদ করে। পরে অধ্যক্ষ মুসা মিয়া প্রতিবাদকারীদের সবার উপর মামলা দায়ের করে সবাইকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেন।

বর্তমানে ওই এলাকায় অধ্যক্ষ মুসা মিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী। যে কোন মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় সহিংস ঘটনা।

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট এলাকার কোনো ব্যক্তি কথা বললে কিংবা মাদ্রাসা সংক্রান্ত কেউ প্রতিবাদ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। শুধুমাত্র অধ্যক্ষের খারাপ আচারণের কারণে, এলাকার কোনো নতুন ছাত্রছাত্রীরা মাদরাসায় ভর্তি হচ্ছে না। স্থানীয়রা বলছে, বর্তমানে প্রতিদিন মাত্র ৫/৭ ছাত্রছাত্রী ক্লাসে দেখা যায়।

দুর্গাপুর উপজেলার ১নং নওপাড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আজাদ আলী বলেন, নান্দিগ্রাম মাদরাসা অধ্যক্ষ মুসা মিয়া বাবা পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করেন। এলাকার কেউ তার অনিয়মের বিরুদ্ধে বললে তার বিরুদ্ধে তিনি মামলা করে রেখেছেন। সে অন্যায় করলে, তার বিরুদ্ধে গিয়ে প্রতিবাদ করা যাবে না। মামলার ভয়ে বর্তমানে কেউ তার বিরুদ্ধে যাচ্ছে না। তিনি এক ব্যক্তির নামেই করেছেন আধাডজন মামলা। মাদরাসায় ছাত্র-ছাত্রী নেই বললেই চলে।

তিনি গ্রামের সাধারণ মানুষকে মূল্যায়ন করেন না। একারনে এলাকার অভিভাবকরা তাদের ছেলে মেয়েদের ওই মাদরা পড়তে পাঠায় না। দুর্গাপুর উপজেলার ভেতরে এক সময়ে নান্দিগ্রাম নামকরা মাদরাসা ছিল। অধ্যক্ষ মুসা এখানে আসার পর থেকে মাদরাসাটি করুনদশায় পরিণত হয়েছে।

সাবেক ইউপি সদস্য জফির উদ্দিন বলেন, মাদরাসায় আমি কিছুদিন সহ-সভাপতি ছিলাম। শিক্ষকদের বিভিন্ন অজুহাতে বিল বন্ধ করে রাখতেন অধ্যক্ষ। বর্তমানে মাদরাসার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, নিয়োগ দেওয়াসহ মাদরাসার কোনো কিছুই আমাদের জানতে দেয়া হয় না। প্রতিষ্ঠান বিষয়ে কোনো অনিয়মের প্রতিবাদ করলে বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন তিনি।

আজমত আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, মাদরাসার অধ্যক্ষ তার বিরুদ্ধে শুধু আমি নয়, এলাকার যে ব্যক্তিগুলি মাদরাসা সংক্রান্ত অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে, সে ব্যক্তিরাই মামলায় পড়েছে। আমি নিজেও ছয়টা মামলার ভুক্তভোগী। আমার বাবার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছেন তিনি। মাদরাসার গেটের সামনে আরো কিছু দোকানদার আছে, তাদের মধ্যে অনেকে অধ্যক্ষের মামলার ভুক্তভোগী। যেহেতু মাদরাসাটি আমাদের প্রতিবশি প্রতিষ্ঠান। তাই আমরা দুই একটা ভালোমন্দ কথা বলতেই পারি। আর সেটা বললেআমাদের অন্যায় হয়ে যায়।

তার বাড়ি পুঠিয়া উপজেলার শিবপুরে। আমাকে তার বাড়ির নিকটে পেলে গুম করা হবে বলে তিনি হুমকি দিয়েছেন। বর্তমানে আমি আতঙ্কের ভেতরে আছি। আজমত আলী আরো বলেন, গত দাখিল পরীক্ষায় মাদরাসা হতে মাত্র চারজন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছে। বাকি ৯ জন ছাত্রছাত্রী ছিল অন্য মাদরাসার ভাড়াটিয়া। এই প্রতিষ্ঠানে কোনদিনই ১৬ ডিসেম্বর, ২৬শে মার্চ জাতীয় দিবসগুলো পালন হয় না। তবে আমি একবার ১৬ ডিসেম্বর পালন করার দাবি করে ছিলাম। তখন অধ্যক্ষ মুসা বলেন, তুমি কী চাঁদা চাইতে এসেছ।

নবম শ্রেণীর ছাত্রী রিপা খাতুন বলেন, আমার রোল নম্বর এক। আমার ক্লাসে আমি একাই। আর অন্যান্য ক্লাসে সব মিলে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ জন মাদরাসায় আসে।

স্থানীয়রা জানায়, শিক্ষকরা টাকা দিয়ে বাহির থেকে ছাত্রছাত্রী এনে পরীক্ষা দিয়ে পাস করায়। আমাদের গ্রামের অনেক ছেলে-মেয়ে বাধ্য হয়ে পার্শ্ববর্তী আলিপুর মাদরাসা, বেলঘড়িয়ার মতো প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে। এ বিষয়গুলো গ্রামের মানুষ বললে, তখন অধ্যক্ষ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেন। এলাকার মোশারফ, আজাদের ওপর মামলা দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে প্রায় ২০ জন ব্যক্তির ওপর মামলা দিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে নান্দিগ্রাম দারুস সালাম আলিম মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ মুসা মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও পরবর্তীতে প্রতিবেদকের নাম পরিচয় জানার পর তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে নান্দিগ্রাম দারুস সালাম আলিম মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি এই মাদরাসায় নতুন সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছি। আমি একাডেমিকের এত কিছু বুঝিনা। অধ্যক্ষ নিজেই মাদরাসাটি চালান। এবার আমি সভাপতি হয়েছি এলাকার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলেছি। সবাই ওই অধ্যক্ষের মামলার ভয়ে ভীত। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্গাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহীদুল হক জানান, বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হবে।
বিএ/

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।