নজরুল ইসলাম জুলু : রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের রাজশাহী আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ব্যানার্জী, সহকারী পরিচালক(কলেজ) মো: আলমাছ উদ্দিন, গবেষণা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র প্রামানিক, সহকারী পরিদর্শক মো: রাশেদুল ইসলাম এবং মো: আসমত আলীর বিরুদ্ধে দূর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা ও দূর্নীতি দমন কমিশনের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ে রাজশাহী অঞ্চলের প্রগতিশীল ও সচেতন নাগরিক তথা শিক্ষক সমাজের পক্ষে লিখিত অভিযোগ করেছেন রাজশাহী জজ কোর্টের এডভোকেট মো: এনামুল হক, মো: তোরাব আলী পারভেজ এবং মো: কাউসার আলী।
অভিযোগের বিষয়টি এডভোকেট মো: এনামুল হক, মো: তোরাব আলী পারভেজ এবং মো: কাউসার আলী নিশ্চিত করেছেন। অভিযোগ পত্রের প্রতিলিপি এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট তৈরির মাধ্যমে মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অমান্য করে এমপিও দূর্নীতি সহ নানাবিধ অনিয়মের মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে শিক্ষকরা সমন্বয় এমপিওভূক্তি, উচ্চতর বেতন স্কেল,পদোন্নতি সহ প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ে অনলাইনে আবেদন করলেও মাউশি পরিচালক অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ব্যানার্জীর সিন্ডিকেটের সদস্যরা শিক্ষকদের কল করে ডেকে এনে প্রতিটি কাজের বিনিময়ে মোটা অংকের অর্থ দাবি করেন এবং অনাদায়ে ফাইল রিজেক্ট করে দেন।
পরিচালক ড. বিশ্বজিৎ ব্যানার্জী, সহকারী পরিচালক মো: আলমাছ উদ্দিন,গবেষণা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র প্রামানিক, সহকারী পরিদর্শক মো: রাশেদুল ইসলাম এবং মো: আসমত আলীর প্রতিটি কাজের বিনিময়ে মোটা অংকের অর্থ দাবি করার ফলে এই অঞ্চলের শিক্ষক- কর্মচারী অত্যন্ত বিক্ষুব্ধ ও অতিষ্ঠ বলে জানা গেছে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ড.বিশ্বজিৎ ও গংদের এই সিন্ডিকেটটি তাদের দূর্নীতির খবরাখবর গোপন রাখতে স্থানীয় বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত চাঁদা প্রদান করে আসছেন। ফলে মাউশি তেবেই সিন্ডিকেটের দুর্নীতি ও নিয়ম বহির্ভূত কার্যাবলীর খবরাখবর খুব একটা প্রকাশিত হতো না।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় যে, ড. বিশ্বজিৎ ব্যানার্জীর তৎকালীন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম দোসর ও সাবেক রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সাথে ঘনিষ্ঠতা ছিল। মেয়রের সাথে সখ্যতার বলেই তিনি অনায়াসেই মাউশি কে দূর্নীতির আখড়াই পরিণত করেছিলেন। এমনকি কোনোরকম নিয়মের তোয়াক্কা না করেই আওয়ামী লীগ পন্থি শিক্ষদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে ড.বিশ্বজিৎ এর বিরুদ্ধে। কিন্তু, এত অনিয়মের পরেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় তার দূর্নীতি ও মাউশিতে গড়ে তোলা সিন্ডিকেট নিয়ে ভয়ে কেউ টু শব্দটা করতো না । তবে ৫ই আগষ্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড.বিশ্বজিৎ ব্যানার্জী ও তার সহযোগিদের মাউশিতে এতদিন ধরে চালানো দূর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে এবং বিভিন্ন মহল থেকে তাদের কে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধনও করা হয়। উল্লেখ্য, গত ৩০শে সেপ্টেম্বর বিতর্কিত মাউশি পরিচালক ড. বিশ্বজিৎ ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অনুসারী শিক্ষকদের হয়ে কাজ করার অভিযোগে স্থানীয় ছাত্রদলের কর্মীরা তাকে অফিস থেকে বের করে দিয়ে তালা দিয়ে দেয়। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে রাজশাহীর ছাত্র জনতার ব্যানারে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন করা হয়। আ
অভিযোগ সূত্রে জানা যায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক এমপিওভূক্তির জন্য যোগদানের সময় থেকে অবশ্যই বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এ তথ্য আপডেট থাকা এবং ইউজিসি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে অর্জিত সনদপত্র থাকতে হবে। এছাড়াও, ২০১৫ সালের পর এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশ ব্যাতীত শিক্ষক সমন্বয় এমপিওভূক্তির কোনো সুযোগ না থাকলেও রহমত আলী ডিগ্রী কলেজ, বামি হাল, সিংড়া, নাটোরে ২০০৪ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানের প্রভাষক
মো: শাহেন শাহ সরদার এর কনো তথ্য ব্যানবেইস এ নেই এবং তার সনদটিও ইউজিসি অনুমোদিত নয় এমন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্জিত। এছাড়াও সোনাহাটা ডিগ্রী কলেজ, ধুনোট, বগুড়া’র ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো: আতাউর রহমান, নওগাঁর পত্নীতলা কৃষ্ণপুর ডিগ্রী কলেজের বাংলা বিষয়ের প্রভাষক মোহাম্মদ শামীম হোসেন চৌধুরীকে সমন্বয় এমপিওভূক্তির জন্য মাউশি বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে এমপিওভূক্ত করা সহ উক্ত শিক্ষকদের কোনো তথ্য ব্যানবেইস-এ অন্তর্ভুক্ত নেই বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও অভিযোগ করা হয়েছে নাটোর মহিলা কলেজের ২০১১ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো: মিজানুর রহমান , ২০০৮ সালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে নিয়োগপ্রাপ্ত মোহা: এজাজ আহমেদ বাবুকে প্যাটার্ন বহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। উক্ত পদ দুইটিতে কর্মরত কর্মচারীগণ অবসরে যাওয়ায় পদ দুইটি শূন্য হওয়ায় তাদের সমন্বয় করে এমপিওভূক্তির জন্য আবেদন করা হয়েছিল কিন্তু পরিচালক ও তার সিন্ডিকেট নিয়মবহির্ভূত ভাবে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া তাদের সমন্বয় এমপিওভূক্তি করেছেন।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয় রাজশাহী চারঘাটের ভায়া লক্ষীপুর বুদিরহাট কলেজের ইসলাম শিক্ষা প্রভাষক মো: বেলাল হোসেনকে ইউজিসি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ অর্জন না করলেও পরিচালক বিশ্বজিৎ ব্যানার্জী ও তার সিন্ডিকেট নিয়মবহির্ভূত ভাবে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সমন্বয় এমপিওভূক্ত করেন।
পাবনা ঈশ্বরদীর বাঁশেরবাদা ডিগ্রী কলেজের সমাজবিজ্ঞানের প্রভাষক মো: সাখাওয়াত হোসেন, জয়পুরহাট মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্মের প্রভাষক লিপি মন্ডল, নওগাঁ পোরশার গাঙ্গুরিয়া কারিগরি ও কৃষি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের প্রভাষক মোসা: রোকসানা খাতুন (একজন ৩য় শিক্ষক), এবং রাজশাহী চারঘাটের মোজহার হোসেন ডিগ্রী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক মোছা: জোবাইদা খাতুন (একজন ৩য় শিক্ষক) গণের তথ্য ব্যানবেইসে না দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অমান্য করে বিধি বহির্ভূত ভাবে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে এমপিওভূক্ত করা হয়েছে বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করা হয়েছে ড. বিশ্বজিৎ ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।
দূর্নীতি ও নিয়ম বহির্ভূতভাবে এমপিওভূক্তির অভিযোগ প্রসঙ্গে মাউশি পরিচালক ড. বিশ্বজিৎ ব্যানার্জীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে ফোনে না পাওয়ায় এ বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য গ্রহন সম্ভব হয়নি।
বিএ..