নওগাঁর মহাদেবপুরে পিত্তথলীর পাথর অপারেশনের পর কিডনী জনিত জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে ছেরাতুন বেগম (৫৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
তিনি জেলার মান্দা উপজেলার বৈলশিং গ্রামের জনাব আলীর স্ত্রী।
শনিবার (২২ অক্টোবর) সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর মহাদেবপুর উপজেলা সদরের আল নুর হেল্থ সেন্টার এ্যান্ড হাসপাতালে তার অপারেশন করা হয়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বলছেন অপারেশনে কোন ত্রুটি ছিলনা।
শনিবার দুপুরে মান্দার বৈলশিং গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিহত ছেরাতুন বেগমের বাড়িতে শোকের মাতম। তার তিন মেয়ে সুমি আকতার, মঈফুল বেগম ও মানসিক প্রতিবন্ধী আদরী খাতুন কান্নায় গড়াগড়ি করছেন। সুমি আকতার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানালেন, তার মাকে নিয়ে মহাদেবপুর আল নুর হেল্থ সেন্টার এ্যান্ড হাসপাতালে গেলে সেখানকার ডাক্তার অস্ত্রোপচার করে পিত্তথলীর পাথর অপসারণ করেলেও আমাদেরকে অপারেশনের পর সেই পিত্তথলীর পাথর দেখাননি। অপারেশনের পর থেকে তার মায়ের কাশির সাথে রক্ত উঠতো। কিন্তু রক্ত বের হবার জন্য পেটের পাশে যে ব্যাগ দেয়া হয়েছিল,নল দিয়ে সেখানে কোন রক্ত বের হয়নি।
এক সপ্তাহ পর ৬ অক্টোবর তার অবস্থার অবনতি ঘটলে আবার ওই হেলথ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত কর্মচারীরা তাদের সাথে অসৌজন্য আচরণ করেন এবং ডাক্তার তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। রাতে তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে সেখানকার ডাক্তার জানান, তার মায়ের কিডনীর সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেখানে কয়েকদিন ডায়ালাইসিস করা হয়। দুদিন আগে তার অবস্থার ব্যাপক অবনতি ঘটলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়।
সুমি আকতার কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, তার মায়ের কখনোই কিডনীর সমস্যা ছিলনা। এমনকি অপারেশনের আগে ডাক্তারও এব্যাপারে তাদেরকে কিছু জানাননি। অপারেশনের সমস্যার ফলেই কিডনী আক্রান্ত হয়েছে। তার গরীব পিতা বাড়ির গরুবাছুর বিক্রয় এবং স্থানিয় এনজিও থেকে ঋন নিয়ে তার মায়ের চিকিৎসার জন্য লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে এখন পথের ফকির হয়ে গেছেন।
জানতে চাইলে মুঠোফোনে মহাদেবপুর আল নুর হেলথ সেন্টার এ্যান্ড হাসপাতালের মালিক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা: রাশেদুজ্জামান জানান, অপারেশন পরবর্তী জটিলটা হতেই পারে। কিন্তু এজন্য তার প্রতিষ্ঠানের কেউ অসৌজন্য আচরণ করেনি। বরং রোগীকে ৫ দিন ক্লিনিকে রেখে সেবা দেয়া হয়। সে পর্যন্ত ওই রোগীর অবস্থা ভাল ছিল। পরে তার কিডনীর সমস্যা দেখা দেয়। কোন ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় কিডনী আক্রান্ত হতে পারে বলেও তিনি জানান। তিনি আরো জানান, মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা: নাহিদুজ্জামান ওই অপারেশনটি করেন।
এ বিষয়ে ডা: নাহিদুজ্জামান জানান, পিত্তথলির পাথর অপারেশনে কোন ত্রুটি ছিলনা। অপারেশনের আগে ওই রোগীর কিডনীর সমস্যা ছিলনা। তিনিও জানান যে, কোন ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় কিডনী আক্রান্ত হতে পারে।
বিএ/