সবার আগে.সর্বশেষ  
ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৯ নভেম্বর ২০১৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মনোনয়ন বাণিজ্যে জাপায় তোলপাড়

অনলাইন ভার্সন
নভেম্বর ২৯, ২০১৮ ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: সংসদ নির্বাচনে টাকার বিনিময়ে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জাতীয় পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে। মনোনয়নবঞ্চিত
প্রার্থীরা নিজ দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এনেছেন। টাকা দিয়েও মনোনয়ন না পাওয়ার অভিযোগও করেছেন অনেকে। এনিয়ে তোলপাড় চলছে খোদ দলেই। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। এসব ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

ওদিকে হঠাৎ করে জাপার কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের অনেকটা অন্তরালে। গত দুই-তিন দিন ধরে তাদের অদৃশ্যপটে থাকা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। ওদিকে মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে সোমবার জাপা চেয়ারম্যানের বনানী অফিসে সাংবাদিকদের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এমপি শওকত চৌধুরী।

তিনি কার্যালয়ে উপস্থিত রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমানের উদ্দেশ্যে বলেন, আমার টাকা ফেরত দিয়ে স্যারকে (এরশাদ) সৈয়দপুর যেতে বলবেন মোস্তফা ভাই। না হলে পুলিশ তাঁকে রক্ষা করতে পারবে না, বলে গেলাম। আমি তাঁকে দেখে নেবো।

তাকে ৬০ লাখ টাকা দিয়েছি। যখন যা চেয়েছে সব দিয়েছি, কোনো অনুষ্ঠানে টাকা দিইনি? মহাজোটে জাপার তালিকায় নিজের নাম না দেখে এমন ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন এমপি শওকত চৌধুরী। পরে ওই রাতেই ডেকে এনে পার্টির মনোনয়ন ফরম দেয়া হয়। যদিও আরেক প্রার্থী আদেলুর আদেলেরও নাম রয়েছে তার নামের পাশে। শওকত চৌধুরীর টাকা দেয়ার ব্যাপারটি প্রকাশ্যে আসার পরেই পার্টির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী মুখ খুলেন। পার্টির কম পক্ষে পাঁচজন নেতার সঙ্গে টাকা লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর অব. খালেদ আখতার এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চেয়ারম্যানের পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভরায়ের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠেছে। তবে মনোনয়ন বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করেন জাতীয়পার্টি (জাপা) মহাসচিব।

তিনি জাপায় অর্থ বাণিজ্যের লেনদেনকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বলে অবহিত করেন। জাপার একটি সূত্র জানায়, পার্টির পাঁচ জনে পাঁচ দিক থেকে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন। এ কারণে তালিকাও হয়েছে পাঁচটি। এজন্যই জাপার মহাজোট চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার কথা বলেও সেটা ঘোষণা করেনি। আবার যে তালিকা প্রকাশ পেয়েছে সেটা নিয়েও রয়েছে বিভ্রান্তি। কোনটা সঠিক তালিকা সেটাও কেউ বলতে পারে না। জাপার মনোনয়ন চিঠি না পেয়ে মঙ্গলবার দিনভর পার্টি অফিসের সামনে অপেক্ষা করেন একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা। সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও মনোনয়নের চিঠি না পেয়ে কয়েকজন নেতা টাকা লেনদেনের কথা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, টাকা নেয়া হলেও তাদের মনোনয়ন দিবে না। এ কারণেই পার্টি অফিসে তারা আসছেন না।

কিশোরগঞ্জ-৬ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ভৈরব উপজেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক নুরুল কাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাপার জন্য কি করিনি। সবই দিয়েছি। মনোনয়ন পেতে কত টাকা দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি টাকার সংখ্যা না বললেও তিনি যে টাকা দিয়েছেন সেটা জানান। বলেন, যে বেশি টাকা দেয় তার কাছেই সিনিয়র নেতারা বিক্রি হয়ে যায়। আর আমরা পার্টি টিকিয়ে রেখেও মনোনয়ন পাই না।

পরে মঙ্গলবার রাতে জাপা মহাসচিব বনানী চেয়ারম্যানের পার্টি অফিসে এসে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের হাতে চিঠি তুলে দেন। তিনি ২০০ এর অধিক চিঠি দেয়ার কথা গণমাধ্যমের কাছে বললেও ১১১ জনের তালিকা দেন। বাকিদের তালিকা তৈরি করা হয়নি খাতায় লেখা রয়েছে এমন বলে এড়িয়ে যান। তবে পার্টি সূত্র বলছে, ওই ১১১ জনের তালিকায় জাপার চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ থেকে ৩২ জনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের স্বাক্ষর করা হয়নি। এরাই মহাজোটের চূড়ান্ত প্রার্থী হবেন। জাপা গণমাধ্যমে ৪৭ জনের একটা তালিকা দিলেও আওয়ামী লীগ ৩২ জনের বেশি মানেননি।

মহাজোটে জাপার মনোনয়ন তালিকায় নাম থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, জাপা চেয়ারম্যান, মহাসচিব ও কো-চেয়ারম্যানকে হেলিকপ্টারে করে তার নির্বাচনী এলকায় নিয়ে গেছেন। সেখানে সমাবেশে হাজার মানুষের সামনে আমাকে মহাজোটের প্রার্থী পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পার্টির পক্ষ থেকে মহাজোটের যে তালিকা করা হয়েছে সেখানে তার নাম নেই। তিনি মনোনয়নের জন্য কোন টাকা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, এ বিষয় পরে কথা বলবো।

পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়ের বিরুদ্ধেও অনেক নেতা কথা বলছেন। জাপা থেকে যশোর-৫ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী এক নেতা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মানবজমিনকে বলেন, তিনি আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। অথচ এখন তাকে ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না। আমি এখন মনোনয়ন পেলেও জমা দিতে পারবো না। এদিকে গত কয়েকদিন ধরেই পার্টি অফিসে আসছেন না জাপা চেয়ারম্যানের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি। তাকে কেউ ফোনেও পাচ্ছেন না। তবে এরই মধ্যে তিনি সোমবার রাতে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মহাজোট থেকে খুলনা-১ এ নিজের মনোনয়ন পাওয়ার কথা জানান। এ কারণে বিক্ষুব্ধ হন অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশী।

গাজীপুর-৫ আসনে জাপা থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খানের স্ত্রী কালীগঞ্জ উপজেলা সভাপতি রাহেলা পারভীন শিশির। এ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী গাজীপুর মহানগর জাপা সহসভাপতি গাজী ওবায়দুল কবির মজনু বলেন, আমাকে পার্টির মনোনয়ন দেয়া হয়নি। আমার কাছ থেকে এক কোটি টাকা চেয়ে অন্যের কাছে মনোনয়ন বিক্রি করছে। তাহলে উনার (এরশাদ) মতো নেতার কাছে আমি কেন আসব? দলের এ অবস্থার জন্য চেয়ারম্যানকে দোষারোপ করার পাশাপাশি নিজের আসনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দেন মজনু।

একই অভিযোগ করেন জয়পুরহাট-২, যশোর-৬, চট্টগ্রাম-১৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। মানিকগঞ্জ-৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা জাপা সহসভাপতি এম হাবিব উল্লাহ হাবিব বলেন, জাপার মতো একটি পার্টির এমনটা করা উচিত হয়নি। যেখানে পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের নিজেই কিছু জানেন না। তাকে কোনো কিছু জানানো হচ্ছে না। জাপার যে ১১১ জনের তালিকা দেয়া হয়েছে সেখানেও আমার আসনে অন্য প্রার্থীর নাম দেয়া হয়েছে। এই তালিকার কোনো ভিত্তি নেই। এটা সম্পূর্ণ ‘আই ওয়াশ’। তবে আমার কাছে টাকা চায়নি, কিন্তু ভিতরে কি এমন ঘটে থাকতে পারে।

তবে গতকাল, জাপা মহাসচিব একটি সংবাদ ব্রিফিং করে সেখানে টাকা লেনদেনের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এটা কোনো একটি স্থান থেকে এসেছে, আমাকে ও পার্টিকে হেয় প্রতিপন্ন করতে। ৪০ বছর রাজনীতি করলাম এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসল না। এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। কোনো একটি লোক এটা করাচ্ছে। জাপার একাধিক নেতা এ অভিযোগ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পয়সা খেয়ে, কোনো জায়গা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এটা করতে পারেন। মহাজোটে জাপার প্রার্থীদের তালিকার জন্য প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আমরা কিছুটা আশা নিয়ে আগাচ্ছি। বেশ ক’টি আসনের ব্যাপারে কথা চলছে। আমাদের আরো আসন বাড়তে পারে।

এসময় তিনি আরো জানান, জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শারীরিক অসুস্থতা তেমন কিছু নয়। অসুস্থতার জন্য আমাদের নিজেদেরই তো হাসপাতালে যেতে হয়। যেটা আপনারা জানতে চাচ্ছেন। তেমন কিছু ঘটেনি। তার স্বাভাবিকভাবে চিকিৎসা চলছে। অথচ মঙ্গলবার রাতে জাতীয় পার্টির তরফ থেকে বলা হয়েছিল, এরশাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে আসায় তার শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে।

একইদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, এরশাদ সত্যিই ‘অসুস্থ’। তাকে সিঙ্গাপুর নেয়া হতে পারে। তবে এরশাদকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার কথা ‘সম্পূর্ণ গুজব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন দলটির মহাসচিব। ওবায়দুল কাদের এরশাদের অসুস্থতা নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা তার ‘রাজনৈতিক মহানুভবতা’। বুধবার সকালে আমি সিএমইচে দেখে এসেছি। তাতে মনে করি, তাকে সিঙ্গাপুর নেয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই। তিনি বৃহস্পতিবার বাসায় ফিরতে পারেন। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অসুস্থতা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও গুঞ্জন। আবার ২০১৪ সালের মতো কোনো নাটকীয় ঘটনা জাপায় দেখতে হয় কিনা সেটা নিয়ে খোদ পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যেও চলছে আলোচনা।

পটুয়াখালীতে জাপা মহাসচিবের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে ঝাড়ু মিছিল
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, জাতীয় পার্টির মহাসচিব পটুয়াখালী-১ (সদর-মির্জাগঞ্জ-দুমকী) আসনের এমপি এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে ঝাড়ু ও জুতা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে নৌকার সমর্থকরা। মিছিল শেষে প্রেস ক্লাবের সামনে রুহুল আমিনের কুশ পুত্তলিকা দাহ করে তারা। মিছিল প্রদর্শনকালে শ’ শ’ নারী-পুরুষ তাকে কটূক্তি করে নানা স্লোগান দেয়। বুধবার পটুয়াখালী জেলা শহরে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা নৌকার প্রার্থীর দাবি জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শাহজাহান মিয়ার পক্ষে স্লোগান দেয়।

মঙ্গলবার জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হেলিকপ্টারযোগে পটুয়াখালীতে এসে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এমন খবর সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং ওইদিনই পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ধর্মপ্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শাহজাহান মিয়ার বাসার সামনে সমবেত হয়ে জাপার এই নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নৌকার সমর্থকরা। একই সঙ্গে স্থানীয় জনসাধারণ পটুয়াখালী-১ আসনের জন্য নৌকা মার্কার প্রার্থীর দাবি জানায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এবং শাহজাহান মিয়ার পক্ষে তারা স্লোগান দেয়।

গতকাল সকাল থেকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সহস্রাধিক নারী-পুরুষের জমায়েত ঘটে। এ সময় জাপা নেতা রুহুল আমিন হাওলাদারকে উদ্দেশ করে নানা স্লোগান দেয় তারা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কয়েকশ’ নারী-পুরুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ঝাড়ু-জুতা প্রর্দশন করে শহরে একটি মিছিল বের করে। এ সময় লঞ্চ টার্মিটাল চত্বরে জাপা মহাসচিব হাওলাদারের কুশ পুত্তলিকা দাহ করে বিক্ষোভকারীরা। মিছিল প্রর্দশনকালে বিক্ষুব্ধ জনতা স্লোগান দেন, বাকেরগঞ্জের রুহুল আমিন বাকেরগঞ্জে ফিরে যা। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অশোভন স্লোগান দেয় নৌকার সমর্থকরা। এ সময় পটুয়াখালী-১ আসনে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শাহজাহান মিয়াকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানায়। সূত্র: মানবজমিন

খবর২৪ঘণ্টা, জেএন

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।