যশোর প্রতিনিধি: বাসার মালিকের স্বর্ণালঙ্কার চুরির অপবাদ দিয়ে যশোরের চৌগাছা উপজেলায় এক গৃহবধূ (৩৫) ও তার শিশুসন্তানকে নির্যাতন করা হয়েছে। এ সময় ওই নারীর মাথার চুল কাটতে তার স্বামীকে বাধ্য করা হয়।
এ ঘটনায় নির্যাতিত নারীর স্বামী চৌগাছা থানায় মামলা করেন। বৃহস্পতিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) মামলার আসামি চৌগাছা কারিগরপাড়ার জাফর ইমামের স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া (৪৫) ও তার দুই মেয়ে জান্নাত আরা ইমাম (২৪) ও সুমাইয়া ফারজানাকে (২০) গ্রেফতার করে পুলিশ। দুপুরে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এর আগে বুধবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে চৌগাছা পৌরসভার কারিগরপাড়ার জাফর ইমামের বাড়িতে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। আহত ওই নারী ও তার মেয়েকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
চৌগাছা থানা পুলিশের ওসি রিফাত খান রাজীব বলেন, বাড়ির মালিকের বাসা থেকে একটি স্বর্ণের চেইন হারিয়ে যায়। ওই নারীর তাদের বাসায় যাতায়াত থাকায় সন্দেহ করেন। একপর্যায়ে স্বর্ণের চেইন চুরি করেছে বলে বাসার মালিকের স্ত্রী ও দুই মেয়ে নির্যাতন করেন। একই সঙ্গে তার মাথার চুল কাটতে স্বামীকে বাধ্য করেন। এ ঘটনায় ওই নারীর স্বামী মামলা করেন। মামলার তিন আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর অভিযোগ, প্রায় আট মাস ধরে তিনি তার স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে নিয়ে চৌগাছা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কারিগরপাড়ার জাফর ইমামের বাড়ি ভাড়া থাকেন। গত ২৬ জানুয়ারি তিনি ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে রেখে গ্রামের বাড়ি অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী গ্রামে যান। ১ ফেব্রুয়ারি বাড়ির মালিকের মেয়ে সুমাইয়া ফারজানা মোবাইল ফোনে জানান তার স্ত্রী বাড়ি থেকে স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে পালিয়েছেন।
এ ঘটনায় চৌগাছা থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। সেখান থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে বুধবার তারা ভাড়া বাড়ি যান। রাত ১২টার দিকে বাড়ির মালিকের স্ত্রী ও দুই মেয়ে তাদের শোবার ঘরে গিয়ে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে তার স্ত্রীকে বেধড়ক মারপিট করেন।
এ সময় তার শিশু কান্নাকাটি করলে জান্নাত আরা ইমাম তার গলা টিপে ধরে এবং ঘরের চৌকির সঙ্গে আঘাত করেন। তারা ওই নারীর স্বামীকে বলেন, ‘হয় তোর স্ত্রীকে স্বর্ণ দিতে বল, না হলে এখনই তার মাথার চুল কেটে (ন্যাড়া করে) দিবি।’
নির্যাতিত নারীর স্বামী বলেন, বাড়ির মালিকের স্ত্রী ও তার দুই মেয়ের কথা মতো আমি স্ত্রীর চুল কাটতে অস্বীকার করলে তারা আমার শিশুকে নিয়ে দোতলার দিকে উঠে যায় ও মারপিট করতে থাকে। এ সময় মেয়ের কান্না ও স্ত্রীর চিৎকার সহ্য করতে না পেরে বলি মেয়েকে আমার কাছে নিয়ে এসো স্ত্রীর চুল কেটে দিচ্ছি। এরপর তারা মেয়েকে আমার কাছে নিয়ে আসে এবং আমার হাতে কাঁচি দিয়ে স্ত্রীর চুল কেটে দিতে বাধ্য করে।
বাধ্য হয়ে স্ত্রীর চুল কেটে দেয়ার পরও আমাদের তিনজনকে মারপিট করে তারা। আমাদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা গিয়ে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
চৌগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান বলেন, ওই নারী ও তার মেয়েকে মারধর করা হয়েছে। এরপর স্বামীকে দিয়ে জোর করে গৃহবধূর মাথার চুল কাটানো হয়েছে। এ ঘটনায় করা মামলায় তিন নারীকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।