খবর২৪ঘণ্টা.কম, ডেস্ক: ব্রেস্ট লাম্প বা ব্রেস্টে চাকা অনুভুত হওয়া মেয়েদের জন্য একটি বড় ভয়ের বিষয়। তবে ব্রেস্ট লাম্প মানেই ক্যানসার নয়। ক্যানসার ছাড়াও ব্রেস্টে বিভিন্ন কারণে চাকা হতে পারে। এ বিষয় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ডেলটা মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুসরাত জাহান। ব্রেস্টে চাকা হবার কিছু পরিচিত কারণগুলো হচ্ছে-
ফাইব্রোএডেনসিস: সাধারনত ২৫-৩৫ বছর বয়সে হয়ে থাকে। এর কারণে মাসিকের আগে বুকে চাকা চাকা এবং ব্যথা অনুভব হয়, যা মাসিক হবার পর কমে যায়। মাসিকের সময় যে হরমোন নিঃসরিত হয় তার কারণে ব্রেস্টের টিস্যুতে কিছু পরিবর্তন হয়, ফলে এই ধরনের অনুভুতি হয়।
ফাইব্রোএডিনোমা: এটি একটি বিনাইন লাম্প। ১৫-২৫ বছর বয়েসে বেশি হয়। সাধারনত হঠাৎ করে বুকে এই চাকা ধরা পড়ে, যা সহজেই নড়াচড়া করে এবং ব্যথাহীন হয়ে থাকে। এজন্য এ ধরনের চাকাকে ব্রেস্ট মাউস বলা হয়। সাইজ ছোট হলে আপনা আপনি মিলিয়ে যেতে পারে, তবে বড় হলে অপারেশন করে অপসারণ করতে হয়।
ব্রেস্ট সিস্ট: সিস্ট হচ্ছে পানি ভর্তি টিউমার। এগুলো যেকোনো বয়সে হতে পারে, তবে মহিলাদের মেনপোজের আগে বেশি হয়। সিস্টগুলো মসৃণ ও গোলাকার হয়ে থাকে। এর চিকিৎসা হচ্ছে নিডেলের মাধ্যমে পানি অপসারণ করা।
ব্রেস্ট অ্যাবসেস বা ইনফেকশন: এটা স্তন্যদায়ী মায়েদের ক্ষেত্রে বেশি হয়। অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া আঘাত প্রাপ্ত স্থান বিশেষ করে ক্র্যাক নিপেল দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে পুঁজ তৈরি করে। এতে খুব ব্যথা হতে পারে। চিকিৎসা হিসেবে ব্যথার ঔষধ, অ্যান্টিবায়োটিক, গরম কমম্প্রেশন ইত্যাদি দেয়া হয়। পুঁজ অ্যাবসেস বড় থাকলে সার্জারির মাধ্যমে ড্রেইন করে নিয়মিত ড্রেসিং করার দরকার হয়।
ফ্যাট নেক্রোসিস: কোন কারণে ব্রেস্ট আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্রেস্টের ফ্যাটি টিস্যু নেক্রোসিস হয়ে চাকা তৈরি করে। এগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে অপসারিত হয়, কিছু সেক্ষেত্রে সার্জারি করার দরকার হয়।
লাইপোমা: এটি ফ্যাটি টিস্যুর টিউমার, যা ক্যানসার নয়। এর আকার বড় হলে সার্জারি করে অপসারণ করা লাগে।
ব্রেস্ট ক্যানসার: ব্রেস্টে চাকার একটি কারণ হচ্ছে ক্যানসার। অন্যান্য চাকার সাথে এর পার্থক্য হলো এটি সহজে নড়াচড়া করানো যায় না, উপরিভাগ অমসৃণ ও সাধারণত ব্যথাহীন হয়ে থাকে।
কিভাবে ব্রেস্টের চাকা বুঝতে পারব?
সেলফ এক্সামিনেশন এর মাধ্যমে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করে দেখা যায়। প্রতি মাসে মাসিকের পর ঘরে বসেই আপনি এ পরীক্ষা করতে পারেন।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
যেকোনো চাকা অনুভব হলে অবশ্যই ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে এর ধরন নির্ণয় করতে হবে, বিশেষ করে চাকাটি যদি মাসিক হবার পরও মিলিয়ে না যায়, আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে অথবা ব্যথা থাকে।
ব্রেস্টের চামড়ায় কোন পরিবর্তন লক্ষ করলে যেমন, কুঁচকানো ভাব, লোমকূপের ছিদ্র বড় হয়ে যাওয়া অথবা রঙের কোন পরিবর্তন।
নিপল ভিতরের দিকে ঢুকে গেলে অথবা এ থেকে কোন অস্বাভাবিক ডিসচার্জ বা রস বের হলে।
কি কি পরীক্ষার দরকার হতে পারে?
চাকার কারণ নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার হয়, যেমন আলট্রাসনোগ্রাম, এফএনএসি, বায়োপসি, ম্যামোগ্রাফি ইত্যাদি।
ক্যানসার প্রতিরোধের কিছু উপায়
যাদের পরিবারে ব্রেস্ট ক্যানসারের হিস্ট্রি আছে তাদেরকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এছাড়া সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ওজন নিয়ন্ত্রণ, হরমোনাল পিল ৩-৫ বছরের অধিক গ্রহণ না করা এবং বাচ্চাকে সঠিকভাবে বুকের দুধ পান করালে ব্রেস্ট ক্যানসারের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ