নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মাথা ফেটে যাওয়ায় চিকিৎসা নিতে এসেছেন ষাটোর্ধ বয়সের এক বৃদ্ধ। তার মাথায় সেলাই করে দিচ্ছেন ওয়ার্ড বয়। মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্টের বদলে ওয়ার্ড বয়ের সেলাইয়ের এমন ঘটনা রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিত্যদিনের। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অদক্ষ এসব ‘স্পেশাল ওয়ার্ডবয় রোগীর ইনজেকশনসহ বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তবুও তারা হাসপাতালে রয়েছেন।
তবে এ উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ কৃষক আর দিনমজুর। এসব গরিব মানুষ রোগে আক্রান্ত হলে তাদের একমাত্র ভরসা সরকারি হাসপাতাল। ভরসার সেই হাসপাতালে গিয়ে পাওয়া যাচ্ছে না সরকারি ওষুধ। চিকিৎসকরা রোগনির্ণয় করে অসহায় রোগীদের হাতে লিখে দিচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির দামি ওষুধের কাগজ। যা কিনে খাওয়ার সক্ষমতা অনেকের নেই। ফলে সরকারি ওষুধ না পেয়ে রোগা শরীর নিয়ে অনেককে খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। এমন অবস্থা চলছে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
শুধু তাই নয় অভিযোগ উঠেছে, ডাক্তারদের নির্দিষ্ট চুক্তি ছাড়া লেখা হয়না ভালো কোনো কোম্পানীর ঔষধ। হাসপাতালে প্রতিদিন নাম মাত্র আল্ট্রাসনোগ্রাম সিরিয়াল নেয়া হয়। এরপরে পাঠানো হয় পাশের দুই বেসরকারি ক্লিনিকে। বিশেষ করে আবাসিক ডাক্তার মিল্টন কুমার কর্মঘন্টা শেষ হওয়ার পূর্বেই বসে থাকেন প্রাইভেট চেম্বারে। তবে হাসপাতালের অলিখিত কর্তা আবাসিক ডাক্তার (আরএমও) মিল্টন কুমারের সাথে যোগ হয়েছেন সদ্য যোগদানকৃত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডাঃ রুহুল আমিন। এই দুই কর্মকর্তার যোগসাজশে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা সর্বনিম্নে পৌঁছেছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জানায়, টিকিট কেটে হাসপাতালের ডাক্তারদের কাছে গিয়ে রোগের বিবরণ তুলে ধরলে হাতে চিরকুট লিখে দেন। হাসপাতালের ফার্মেসিতে রোগের ওষুধ না দিয়ে প্যারাসিটামল, এন্টাসিড, হিস্টাসিন, ট্যাবলেট দেয়। পরে সব ওষুধ বাইরের দোকান থেকে কিনতে হয়। চুলকানি রোগ নিয়ে রুলি বেগম হাসপাতালে আসেন চিকিৎসা নিতে। তিনি বলেন, আমি দরিদ্র মানুষ হাসপাতালে চুলকানির চিকিৎসার জন্য এসে আমাকে প্যারাসিটামল আর এন্টাসিড দিয়েছে এগুলো ওষুধ নিয়ে কি করবো আমি?
হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালের নোংরা বেডে শুয়ে থাকা আর প্যারাসিটামল, এন্টাসিড ছাড়া কিছুই মেলেনা। সেই সাথে অস্বাস্থ্যকর নোংরা টয়লেটের দুর্গন্ধে চিকিৎসা সেবা শেষ না হতেই স্বজনরা তাদের রোগীদের হাসপাতাল ছাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক রোগী কোন উপায় না পেয়ে টয়লেটের দুর্গন্ধ সহ্য করে হাসপাতালের বেডে দিন পার করছে। চিকিৎসা বলতে সকালে ডাক্তাররা ওয়ার্ড গুলো ঘুরে দেখা ছাড়া আর কিছুই নয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার ও রোগ নির্ণয় যন্ত্রপাতি না থাকায় জনসাধারণ এর সুফল পাচ্ছেনা। অপর দিকে হাসপাতালের দুই কর্তার যোগসাজশে চিকিৎসা সেবা বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে (আরএমও) মিল্টন কুমার জানান, কাটা-ফাটা সেলাইয়ের কাজটি ওয়ার্ড বয়ের নয় কর্তব্যরত ডাক্তারদের। কিন্তু অনেক ওয়ার্ড বয় দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতাল থেকে কাটা-ছেঁড়া সেলাই কাজে অভিজ্ঞতা অর্জন করায় অথবা রোগীর চাপ বেড়ে গেলে কখনও কখনও ওয়ার্ড বয় দিয়ে এসব কাজ করানো হয়। তবে হাসপাতালে সিরিয়াল না থাকলে রোগীদের বাইরে টেস্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আমার কর্ম ঘন্টা শেষ হওয়ার পরে বাইরে রোগী দেখি!
এব্যাপারে, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা: রুহুল আমিন বলেন, আমি নতুন এসেছি। ওয়ার্ড বয়ের অভিজ্ঞতা থাকলে কাটা ছাড়া সেলাই দিতে পারে। তবে কে ট্রেন্ড সেটা আমার জানা নেই। তিনি বলেন, আমার ওষুধ কোম্পানির কারো সাথে আর্থিক লেনদেনের চুক্তি নেই। জনবল সংকটের কারনে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডাঃ আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক মুঠোফোনে বলেন, আইনগতভাবে কোনো ওয়ার্ড বয়ই রোগীদের কাটা-ছেঁড়া সেলাই করতে পারেন না। হাসপাতালে অনিয়মের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।
বিএ..