রিজার্ভ নিয়ে বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের বিস্তারিত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার সময় আমাদের আমদানি-রপ্তানি, যোগাযোগ বন্ধ ছিল। সবকিছু বন্ধ ছিল। তার জন্য আমাদের রিজার্ভ বেড়েছিল। এরপর যখন অর্থনীতি খুলে গেল। সমস্ত জিনিস যখন আমদানি করা শুরু হলো। তখন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের রিজার্ভ কমবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ২০০৯ সালে আমরা সরকার গঠনের আগে তো অনেক আতেলরাই ক্ষমতায় ছিল। তখন রিজার্ভ কত ছিল? এক বিলিয়ন ডলারও ছিল না, ০.৭৭ মিলিয়ন রিজার্ভ ছিল।
তিনি বলেন, আমি যখন ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করি, তখন বোধহয় আড়াই মিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ছিল। অর্থাৎ বিলিয়নের ধারের কাছেও ছিল না। রিজার্ভ যতটুকু বেড়েছে আমাদের সরকারের আমলেই আমরা বাড়িয়েছি। এখন দেশের মানুষকে অন্ধকারে রেখে যদি বলেন রিজার্ভ রক্ষা করতে হবে, তাহলে আমি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিই। পানি-সার দেওয়া বন্ধ করে দিই। সব বন্ধ করে বসিয়ে রাখি তখন আমার রিজার্ভ ভালো থাকবে। রিজার্ভ ভালো রাখা প্রয়োজন নাকি দেশের মানুষকে ভালো রাখা প্রয়োজন?
সরকারপ্রধান বলেন, দুইশথ ডলারে যেই গম কিনতাম এখন তা ছয়শথ ডলারে কিনতে হচ্ছে। আটশথ ডলারের পরিবহন খরচ এখন তিন-চার হাজার ডলার লাগছে। তারপরও পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে আমি বলেছি, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। আমরা নিজেরা উৎপাদন করে খাব এবং মানুষ কিন্তু সেটাই করছে। কাজেই রিজার্ভ নিয়ে অনেকে অনেক কিছু বলতে পারে। কিন্তু যদি এতো বেশি কথা হয়, তাহলে যখন সরকার গঠন করেছিলাম, তখন যত ছিল ওইখানে এনে রেখে আবার নির্বাচন করব। এরপর আবার রিজার্ভ বাড়াব। কিন্তু ওইখানে নিয়ে এসে দেখাব যে, এই অবস্থা ছিল। বিদ্যুৎ শতভাগ দেই। কমিয়ে ২৮ ভাগে নিয়ে আসব। সবাই একটু টের পাক যে কি অবস্থা ছিল। আমরা তো ভুলে যাই।
শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎমন্ত্রীকে বলেছিলাম, প্রতিদিন যেন কিছুটা লোডশেডিং দেওয়া হয়। তাহলে মানুষের মনে থাকবে যে, লোডশেডিং আছে। তখন পয়সা দিয়ে তেল কিনে জেনারেটর চালাতে হবে। তখন একটু আক্কেলটা ঠিক হবে যে, এই অবস্থা তো ছিল। কারণ এখন তো আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি। কেন আমি ভর্তুকি দেব? বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে সবাই আর ভর্তুকির সুযোগটা নিচ্ছে অর্থশালী-বড়লোকরা। সেখানে একটা স্লট করে দেব। এখন থেকে যে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে, তাকে বেশি দামে কিনতে হবে। আর যদি বেশি কথা বলে তাহলে সব বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকব।
এর আগে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। এ ছাড়া ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থানের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠান এবং বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর প্রধানমন্ত্রী ৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন থেকে লন্ডনে যান। সেখান থেকে দেশে ফেরার আগে শেখ হাসিনা বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক সংবর্ধনায় যোগ দেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৬ দিনের সরকারি সফর শেষ করে বুধবার (৪ অক্টোবর) দেশে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।
বিএ/