বিশেষ প্রতিবেদক :
নকল পত্রিকা ছাপিয়ে টেন্ডারের পর এবার রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মালামাল ক্রয়ের জন্য নির্বাচিত ঠিকাদারের ব্যাংক হিসাব থেকে পুলিশের তিন কর্মচারীর বিরুদ্ধে অর্ধকোটি টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে। বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছেনা আরএমপির।
এমন খবর দেশের একটি প্রভাবশালী জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হলে আরএমপি একটি এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
তদন্তের সত্যতা নিশ্চিত করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার হেড কোয়ার্টার তানভীর হায়দার চৌধুরী বলেন, রোববার একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একজনই এ বিষয়টি তদন্ত করছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। কাউকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না। সিভিল কর্মচারীদের এমন অনিয়মের কারণে আরএমপি বির্তকের মধ্যে পড়ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগে অনিয়মের কারণে জড়িত থাকার কারণে একজনকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তনাধীন রয়েছে। দোষ প্রমাণ হলে কোন ছাড় নেই।
নগর পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের মালামাল ক্রয়ের জন্য দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার বাছাই করা হয়। মালামাল সরবরাহের জন্য বিল চেকের মাধ্যমে দেওয়া হয়।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে মহানগর পুলিশের মালামাল সরবরাহের জন্য আলফাজ উদ্দিনকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। সেই ঠিকাদারের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব থেকে পুলিশের তিন কর্মচারী ৪৮ লাখ ৬২ হাজার ১৭১ টাকা তুলে নিয়েছেন। এরমধ্যে রয়েছেন, আরএমপির কার্যালয়ের পিয়ন আজিজুল হক ও ফিরোজ হোসেন এবং প্রধান সহকারী মনিরুল ইসলাম।
সূত্রে আরো জানা যায়, প্রধান সহকারী মনিরুল ইসলাম ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। পিয়ন ফিরোজ ২০১৬ সালের ৩ ডিসেম্বর তুলেছেন ৪ লাখ ৮ হাজার টাকা।
প্রধান সহকারী মনিরুল ইসলামের সাথে খবর ২৪ ঘণ্টার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একটি পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে টাকা তোলার অভিযোগ করা হয়েছে। যারা লেখেছে তারাই প্রমাণ করুক। এসব নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের সাথে তিনি চড়া ভাষায় কথা বলেন।
ঠিকাদার আলফাজ উদ্দিনের দুটি হিসাব নম্বর থেকে আজিজুল হক মোট ৩৯ লাখ ৪ হাজার ১৭১ টাকা তুলেছেন। আজিজুল রহমান নামে ২০১৬ সালে তুলেছেন ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ২০১৭ সালে তুলেছেন বাকি টাকা।
ঠিকাদার আলফাজ উদ্দিন বলেন, তাঁর সরবরাহকৃত মালামাল খারাপ হতে পারে এ আশঙ্কা থেকে তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়ে পুলিশের লোক নিজেরাই মাল কিনেছে। পরে তাঁকে বিল দিয়েছে।
এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আরএমপির অন্যান্য সিভিল কর্মচারীরা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, দু’একজন অসাধু কর্মচারী দোষ করবে আর সবার অপমান হবে। তাই প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। যাবে ভবিষ্যতে তারা আর এমন অনিয়ম করার সাহস না দেখায়।
আরএমপি এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করার শর্তে বলেন, আরএমপির সদর দপ্তরে এমন অনিয়ম হচ্ছে। একজন ছোট খাট কর্মচারী এমন কাজ করার সাহস পায় কোথায়? এই অনিয়মের সাথে মূল হোতা হিসেবে যারা কাজ করে তাদেরও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে টেন্ডারে অনিয়ম ও পুলিশ কমিশনারের রিপোর্ট জাল করে নিজের প্রমোশনের সুপারিশ নিজে করে বরখাস্ত হন আরএমপির প্রধান সহকারী আব্দুল কুদ্দুস। এরপর নকল পত্রিকা ছাপিয়ে টেন্ডারের ব্যাপারে বিষয়টি তদন্তনাধীন রয়েছে।
খবর২৪ঘণ্টা/আর