নজরুল ইসলাম জুলু: রাজশাহীতে পদ্মা নদীর বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে বাম্পার ফলন হচ্ছে ফসলের। এতে চাঙা হয়েছে অর্থনীতি। কৃষি জমিতে ফসল উৎপাদন করে সুদিন ফিরেছে শত শত পরিবারে। অনেকে ভিন্ন ব্যবসায় লোকসান গুনে এসে ঝুঁকছেন ফসলের জমি আবাদে।
জানা গেছে, জেলায় মোট ৯ উপজেলার মধ্যে পবা, গোদাগাড়ী, চারঘাট ও বাঘা চরের আওতায়। এসব উপজেলায় চর রয়েছে ১৪টি। এরমধ্যে পবার চর মাজারদিয়াড় ও চর খিদিরপুর, গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ও চর দিয়াড় মানিকচর এবং চারঘাটের টাংগন উল্লেখযোগ্য। প্রায় ৫ হাজার ৮১৬ হেক্টর জমির আয়তন নিয়ে সবচেয়ে বড় চর পবার চর মাজারদিয়াড় ও চর খিদিরপুর। গত অর্থবছরে ১৪ টি চরের অন্তর্ভুক্ত মোট জমি ছিল ১৪ হাজার ৮৫৩ হেক্টর। এরমধ্যে ১০ হাজার ১৮৭ হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ হয়। মসুর, গম, সরিষা, শাকসবজি, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলু, মাসকলাই, চিনাবাদাম ও ধনিয়াপাতা চাষে বেশি আগ্রহ কৃষকদের। গতবছর সবচেয়ে বেশি গম চাষ হয়েছে ২ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমিতে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় বিচ্ছিন্ন চর এলাকার ১১টি ব্লকে মোট জমি রয়েছে ১৪ হাজার ৪৪ হেক্টর। এরমধ্যে ৭ হাজার ৯৪৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়ে থাকে। আর ১৫ হেক্টর জমি পতিত রয়েছে। চরাঞ্চলের ২ হাজার ৭৯ হেক্টর জমিতে বছরে এক ফসল হয়। আর ৪ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে দুই ফসল এবং বাকি ১ হাজার ৮১৯ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে তিন ফসল।
সরেজমিনে চর মাজারদিয়াড়ে গিয়ে দেখা যায়, ভারত সীমান্ত ঘেষা বিস্তৃর্ণ মাঠে মাসকলাই, টমেটো ও কাঁচামরিচ চাষ করেছেন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা।চাষাবাদে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। পাওয়ার টিলার রাখা হয়েছে জমিতে। কাঁটা তারের বেড়ার পাশেই অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছিলেন স্থানীয় কৃষকরা। আর সীমান্তের দুপাশে বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় ভীতি কাজ করে না কৃষকদের মাঝে।
ভারত সীমান্তের পিলারের কাছে মাঠে টমেটোর জমিতে নিড়ানি দিচ্ছিলেন পঞ্চাষোর্ধ এক কৃষক। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আগে ভাঙাড়ির ব্যবসা করতাম। পরিত্যক্ত লোহাসহ ভাঙড়ি জিনিসপত্র কিনে কিনে নিয়ে শহরে বিক্রি করতাম। কিন্তু কয়েক বছর আগে ওই ব্যবসায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা লস খেয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে যাই। পরে একবারে চরে ফিরে এসে জনিতে ফসল করা শুরু করি। ওই কৃষক বলেন, টমেটো, ধান, গম আর আলুর ওপর দিয়েই আমার সংসার চালাচ্ছি, এই টাকায় মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। এই আদবাদপানি করে খেয়ে-দেয়ে বিক্রি করি। দুবিঘা জমিতে আমার সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে ৫-৭ লাখ টাকা লাভ থাকে। আমার আর কোনো অভাব নাই।
পাশেই মরিচে কীটনাশক ছিটাচ্ছিলেন রফিকুল নামে আরেক কৃষক। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হলে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। রাস্তায় অনেক খরচ হয়, সেজন্য লাভটা কম হয়। তবে ফসল ফলিয়ে সংসার চলে যায়। সাহেব আলী নামে আরেক কৃষক বলেন, এখান থেকে মোটরসাইকেলে করে নদীর ঘাটে নিয়ে যাই, সেখান থেকে নৌকায় করে শহরের ঘাটে যাই। এরপর সেখান থেকে শহরের আড়তে ফসল তুলি। এভাবে নিয়ে যেতে অনেক কষ্ট এবং ব্যয় হয়। আমাদের জন্য এটা সহজ করলে আরও লাভবান হতে পারতাম।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিঘাপ্রতি যেকোনো ফসলে অন্তত এক লাখ টাকা লাভ হয়। চরাঞ্চলে পলিমাটির সুবিধা পাওয়া যায়, সার কম লাগে। তবে পানির সমস্যা সমাধানে ছোট ছোট পাম্প মেশিন বসালে তাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। এছাড়া বীজ প্রদর্শনী প্লটসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিলে তারা আরও অনেক সচেতনভাবে ফসল উৎপাদন করতে পারবেন। এতে চরাঞ্চলের অর্থনীতি আরও চাঙা হবে।
তবে চরাঞ্চলে কৃষকদের জন্য পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রাজশাহীর উপপরিচালক উম্মে ছালমা ঢাকা মেইলকে বলেন, চরাঞ্চলে অর্থকরী ফসলে অনেক কৃষকের ভাগ্য বদলেছে। আমার তাদের পরামর্শ দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রজেক্ট আকারে কাজ চলমান রেখেছি। এসবের সুফল পেয়ে কৃষকরা আরও উদ্বুদ্ভ হচ্ছে। তাদের যে কোনো সমস্যা সমাধানে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাবে।
বিএ/