রাজশাহীর চারঘাট সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারী ভারতীয় নাগরিক প্রণব মণ্ডল জামিনে ছাড়া পেয়েই রাতের আঁধারে পালিয়েছে। ২৩ মার্চ দুই মামলায় জামিনের পর রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি ছাড়া পান।
জামিনের শর্তানুযায়ী জামিনদার অথবা আত্মীয় বাড়িতে অবস্থানের বদলে পরদিন রাতের আঁধারে সীমান্ত পেরিয়ে তিনি ভারতে চলে গেছেন। গত বছরের ১৭ অক্টোবর চারঘাট সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে গুলিবিনিময়ের সময় প্রণব জলসীমা দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২৫ মার্চ ভোরে কাকমারী বিএসএফ ফাঁড়ির জওয়ানরা গাড়িতে করে পশ্চিমবঙ্গের জলঙ্গি থানার শিবচর গ্রামে প্রণবকে পৌঁছে দিয়েছে।
প্রণবের জামিন ও পালিয়ে যাওয়া সম্পর্কে রাজশাহীর ১নং বিজিবি ব্যাটালিয়ন কর্তৃপক্ষ কিছুই জানে না। রাজশাহীর বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ যুগান্তরকে জানান, প্রণবের জামিন, কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়া ও কাউকে না জানিয়ে ভারতে চলে যাওয়া সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। মামলা থাকায় প্রণবের বাংলাদেশেই থাকার কথা।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, চারঘাট সীমান্তের বালুঘাট এলাকার পদ্মার জলসীমায় ভারতীয় একদল জেলে অনুপ্রবেশ করে এবং কারেন্টজাল দিয়ে ইলিশ ধরে। এ ঘটনা দেখতে পেয়ে চারঘাট ফাঁড়ির বিজিবি সদস্যরা অচিন্ত্য মণ্ডল, বিকাশ মণ্ডল ও প্রণব মণ্ডলকে নৌকা ও জালসহ আটক করে। তবে অচিন্ত্য ও বিকাশকে বিজিবি ছেড়ে দেয়।
বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠকের পর প্রণবকেও ছেড়ে দেয়া হবে বলে বিজিবি সদস্যরা জানান। কিন্তু মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গি থানার কাকমারী বিএসএফ ফাঁড়ির চার সদস্য অনুমতি ছাড়াই স্পিডবোটে বাংলাদেশে চলে আসে। প্রণবকে জাল ও নৌকাসহ তারা ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে বিজিবি বাধা দিলে বিএসএফ সদস্যরা ঘটনাস্থল ত্যাগের সময় গুলিবর্ষণ করে। বিজিবির সদস্যরাও পাল্টা গুলি করে। এ সময় বিএসএফের হেড কনস্টেবল বিজয় ভানু সিংহ নিহত হন। আরও দুই বিএসএফ জওয়ান আহত হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়। বিজিবি ও বিএসএফের ডিজি পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি উঠে আসে। দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে চিঠি চালাচালি হয়।
এদিকে ঘটনার দিন রাতে চারঘাট বিজিবি ফাঁড়ির হাবিলদার হুমায়ুন কবীর বাদী হয়ে প্রণব, অচিন্ত্য, বিকাশ ও অজ্ঞাত বিএসএফ সদস্যসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ ও কারেন্টজাল দিয়ে মাছ শিকার ও বিজিবির ওপর গুলিবর্ষণের অভিযোগে দুটি মামলা করেন। ১৮ অক্টোবর প্রণবকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ডিসেম্বরে প্রণবসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুই মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন জানান, ১৭ মার্চ প্রণবের জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী ইন্তাজুল হক। ওইদিন একটি মামলায় তাকে জামিন দেয়া হয়। অন্য মামলায়ও তিনি জামিন পান। চারঘাটের ইউসুফপুর গ্রামের নিতাই মণ্ডল আত্মীয় পরিচয় দিয়ে আদালতে হলফনামা দেন। তবে জামিননামায় স্বাক্ষর করেন চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আবদুর রহিম। জামিনের শর্তে তাকে বাংলাদেশে আত্মীয় বাড়িতে অবস্থানের কথা বলা হয়।
জানা গেছে, ছাড়া পেয়ে প্রণব নিতাইয়ের বাড়িতে যান। সেখান থেকে ২৪ মার্চ রাতে ইউসুফপুর সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। তবে প্রণবের জামিনদার আবদুর রহিম বলেছেন, তিনি প্রণবকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না। নিতাই তাকে অনুরোধ করায় তিনি জামিননামায় স্বাক্ষর করেছেন। প্রণব ফিরবে কিনা সে ব্যাপারে তিনি জানেন না।
একটি গোয়েন্দা সংস্থা ইতোমধ্যে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়েছে- প্রণবের আত্মীয় নন নিতাই। আদালতে মিথ্যা হলফনামা দিয়েছেন নিতাই। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর নিতাই বাড়ি থেকে পালিয়েছে।
প্রণব কীভাবে ভারতে গেল- এ প্রশ্নের জবাবে বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। প্রণবের জামিনের পর জিম্মাদারের কাছে তাকে বাংলাদেশেই থাকার কথা। ২৫ মার্চ দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রণব জানান, তাকে রাজশাহীর ইউসুফপুর সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে সীমান্ত পার করে দিয়েছে একজন দালাল। সীমান্ত অতিক্রম করে তিনি বিএসএফের কাকমারী সীমান্ত ফাঁড়িতে চলে যান। সেখান থেকে বিএসএফ সদস্যরা ২৫ মার্চ ভোরে তাকে গাড়িতে করে বাড়িতে পৌঁছে দেন। প্রণব বলেন, মামলা থাকলেও তিনি আর বাংলাদেশে ফিরবেন না। প্রণবের বাবার নাম বসন্ত মণ্ডল। সুত্র: যুগান্তর