নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মহানগরীর অদুরে কাটাখালিতে বাস-ট্রাকের চাপায় কলেজ ছাত্র ফিরোজের হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঘটনায় বহনকারী বাসের চালক ফারুক হোসেন সরকার (৩৯) কে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় তাকে রাজশাহীর পুঠিয়া বাজার থেকে আটক করা হয়। সেই সাথে বুধবার রাত ১১টায় ট্রাকটিও জব্দ করা হয়েছে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ জানায়, বগুড়ার নন্দীগ্রাম বাস স্ট্যান্ড থেকে রাজশাহী উদ্দেশ্যে একটি বাসে উঠেন। তাড়াহুরা করে বাসে উঠার কারণে কলেজ ছাত্র ফিরোজ বাসের নাম ও রেজিষ্ট্রেশন নম্বর জানতেন না। ২৮ জুন শুক্রবার রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভা কার্যালয়ের পশ্চিমে ইমাদপুর নামক স্থানে পৌঁছালে বিপরীত দিক
থেকে নাটোর অভিমুখে বেপরোয়াভাবে দ্রত গতিতে আসা একটি ট্রাকের সাথে ফিরোজ সরকারকে বহনকারী বাসটির মুখোমুখি বেপরোয়াভাবে ক্রসিং করার সময় দুটি যানবাহনের চাপা লেগে ফিরোজ সরকারের ডান হাতের তিন-চতুর্থাংশ কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাস্তার উপর পড়ে যায়। ফিরোজ সরকার (২৫) রাজশাহী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। তার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। বাসের চালক বাসটি ঘটনাস্থলে না থামিয়ে অনুমান ৫ কিলোমিটার দূরে মতিহার থানাধীন তালাইমারী মোড়ে বাস থামিয়ে ফিরোজকে বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। অজ্ঞাতনামা অপর যানবাহন (বাস অথবা ট্রাক) টি নাটোর অভিমুখে চলে যায়। বাসে থাকা অন্যান্য যাত্রীরা ভিকটিমকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী-এর ৩১নং ওয়ার্ডে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। মারাত্মক আহত অবস্থায় ভিকটিম এর অস্ত্রোপচার করে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়।
কাটাখালী থানা পুলিশ স্থানীয় জনসাধারণের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ভিকটিম ফিরোজ সরকারের ডান হাতের কাটা অংশ পেয়ে তৎক্ষনাৎ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ফিরোজ সরকারের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কর্তব্যরত ডাক্তার জানান, ভিকটিমের হাতের কর্তিত অংশ জোড়া লাগানো সম্ভব না। এরপর ভিকটিমের হাতের কর্তিত অংশ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হিমঘরে রাখা হয়। ভিকটিমের সাথে থাকা অন্যান্য যাত্রী, ঘটনাস্থলের সাক্ষী, কেহই দূর্ঘটনায় পতিত দুটি যানবাহনের নাম, রেজিষ্ট্রেশন নম্বর দিতে পারেনি। ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। ছাত্র ফিরোজ তাকে আরোহণকারী বাসটির বর্ণনা দিতে গিয়ে বাসের সামনের উইন্ড সেডের গ্লাস ভাঙ্গা এবং বাসটির নামের আদ্যাক্ষর শুধুমাত্র “গঙ” লেখা ছিল বলে জানাতে পারেন। হাতের কর্তিত অংশ ব্যতিত আর কোন দূর্ঘটনা সংক্রান্ত আলামত ছিল না।
এ ঘটনায় ফিরোজের বাবা মাহফুজার রহমান বাদী হয়ে কাটাখালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর থেকেই কাটাখালী থানা পুলিশ কর্তৃক তথ্য সংগ্রহ ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অব্যাহত থাকে। শুধুমাত্র উপরোক্ত দুটি তথ্যকে ভিত্তি করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় আরএমপির কাটাখালী থানা পুলিশ ২৪ ঘন্টার মধ্যে দুর্ঘটনায় জড়িত বাস-“মোহাম্মদ পরিবহন”, যার রেজিষ্ট্রেশন নম্বর-ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-০৪৬২, রাজশাহী শিরোইল বাস স্ট্যান্ড হতে সনাক্ত করে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধারপূর্বক জব্দ করেন। জব্দকৃত বাসে দূর্ঘটনায় পতিত হওয়ার চিহ্ন বিদ্যমান। বাসের চালক ফারুক হোসেন সরকার (৩৯)। সে পুঠিয়া উপজেলার গোপালহাটি গ্রামের আতাহার আলীর ছেলে। এরপর পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও
তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বোয়ালিয়া থানাধীন উপরভদ্রা এলাকার বক্কার অটোমোবাইল ওয়ার্কসপ হতে দূর্ঘটনায় জড়িত একটি ঊওঈঐঊজ, ঋঅজওঝঞঅ ট্রাক, যার রেজিষ্ট্রেশন নম্বর-ঢাকা মেট্রো-ট-১৬-৮৭৯৬, হেলপার মোঃ রায়হান সরদার (২১), পিতা-মোঃ মাসুদ রানা, সাং-পাসুন্দিয়া, থানা-চারঘাট, জেলা-রাজশাহী-এর হেফাজত হতে জব্দপূর্বক গ্রহন করেন। জব্দকৃত ট্রাকেও দূর্ঘটনায় পতিত হওয়ার চিহ্ন বিদ্যমান। দূর্ঘটনায় পতিত হওয়ার পর বর্ণিত ট্রাকটির মালিক আবু মহসিন আলী (৬৫), জানান, জব্দকৃত ট্রাকটি ঘটনার দিন আদা বোঝাই করে রাজশাহী থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে ওই বাসের সাথে দুর্ঘটনা ঘটে। এরপর ট্রাকটি ঢাকায় না গিয়ে বেলপুকুর মোড় হতে মাহেন্দ্রা বাইপাস হয়ে শাহমখ্দুম থানাধীন ছন্দা পেট্রোল পাম্প-এ
অবস্থান করে। পরের দিন ঢাকায় আদা পৌঁছে দিয়ে পুনরায় ছন্দা পেট্রোল পাম্পে ট্রাকটির পার্ক করে ড্রাইভার পালিয়ে যায়। ৩ জুলাই হেলপার মোঃ রায়হান ট্রাকটি মেরামত করার জন্য বক্কার অটোমোবাইল ওয়ার্কসপে নিয়ে যায়। ট্রাকের মালিক মোঃ আবু মহসিন আলী জানান, ঘটনার তারিখ ও সময়ে মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান(২৪), পিতা-আব্দুল কাদের, মাতা-আকলেমা বেগম, সাং-পাটিয়াকান্দি, থানা-চারঘাট, জেলা-রাজশাহী বর্ণিত ট্রাকটির চালক ছিল। ঘটনার সময় উপরে বর্ণিত হেলপার রায়হান ট্রাকে দায়িত্ব পালনরত ছিলেন না। প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ ও তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে সংগৃহীত তথ্যেও উক্ত
হেলপার রায়হান-এর বিরুদ্ধে ঘটনার দিন ও তারিখে বর্ণিত ট্রাকে হেলপার হিসাবে নিয়োজিত থাকার স্ব-পক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তাকে গ্রেফতারের জন্য বিশেষ অভিযান অব্যাহত আছে। আটক বাস চালক পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে জানায়, ঘটনার সময়ে জব্দকৃত বাসটির চালক তিনি ছিলেন। জব্দকৃত ট্রাকটির সহিত তার বাসের দূর্ঘটনা সংঘটিত হয় বলে ট্রাকটিকেও সনাক্ত করেছেন।
আর/এস