খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: করোনার নমুনা পরীক্ষার নামে প্রতারণার অভিযোগে দেশজুড়ে আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন। নানা শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা সাহেদ প্রতারণা করেছেন বাবার অসুস্থতা নিয়েও। করোনা আক্রান্ত বাবাকে নেগেটিভ সনদ দেখিয়ে ভর্তি করান নিজের হাসপাতাল রেখে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে তার বাবার করোনা পজিটিভ আসে। এক পর্যায়ে মারা যান সাহেদের বাবা।
জন্মদাতা বাবার অসুস্থতা নিয়ে এমন প্রতারণার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করছেন অনেকে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাহেদের বাবা গত বৃহস্পতিবার রাতে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেলে মারা যান।
জানা গেছে, শুরুতে বাবার খোঁজ নিলেও রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর সিলগালা করে দেয়ার পর আর বাবার খোঁজ নেয়নি সাহেদ। শুধু তাই নয়, খোঁজ নেননি মারা যাওয়ার পরও। পরে অবশ্য তার ভাড়া বাসার কেয়ারটেকার ও গাড়ি চালককে পাঠিয়ে বাবার মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
বাবা সিরাজুল করিমকে ভর্তি করাতে গিয়ে সাহেদের প্রতারণার কথা নিশ্চিত করেছেন মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী।
গণমাধ্যমকে তিনি জানান, গত ৪ জুলাই সিরাজুল করিমকে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করেন সাহেদ। সিরাজুল করিমের বয়স ছিল প্রায় ৭০ বছর। ভর্তি করার সময় সাহেদ জানান তার বাবার কোভিড-১৯ সংক্রমণ নেই।
বাবার করোনা পরীক্ষার ভুয়া প্রতিবেদন দেয়ার কথা জানিয়ে ডা. আশীষ জানান, ‘আমাদের বলা হয়েছিল, এর আগে তিনটি পরীক্ষায় সিরাজুল করিমের কোভিড-১৯ নেগেটিভ আসে। তিনটি সনদও দেখানো হয়। কিন্তু তার লক্ষণ দেখেই মনে হয়েছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত। আমাদের এখানে পরীক্ষায় তার কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে।’
হাসপাতালটির চিকিৎসক আজিজুর রহমান জানান, সাহেদের বাবার করোনা পজেটিভ আসলে তাকে আমরা ফোন দেই। আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেহেতু আপনার হাসপাতাল কোভিড রোগীদের জন্য সেখানে আপনার বাবাকে নিয়ে যান। কিন্তু সাহেদ অপারগতা প্রকাশ করেন। বলেন তার ওখানে চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।
ভর্তির দুই দিন পর সিরাজুল করিমকে আইসিইউতে নেওয়া হয় জানিয়ে ডা. আশীষ বলেন, ‘তার ফুসফুসে সংক্রমণ ছিল। অবস্থা খারাপ হলে দুই দিন আগে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার মারা যান তিনি।’
ভর্তির পর প্রথম দুই দিন সাহেদ তার বাবাকে দেখতে এসেছিলেন। তবে ৬ জুলাইয়ের পর থেকে এখানে তাদের আর কেউ আসেননি বলেও জানান ইউনিভার্সেলের এমডি।
জানা গেছে, সাহেদ বাবাকে দেখতে আসা বন্ধ করলেও তার সঙ্গে আসা লোকজন পরেও হাসাপাতালে এসেছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে তার বাবা মারা যাওয়ার পরে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি ইউনিভার্সেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে থানায় জিডি করে তারা। সাহেদের ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়ায় পরে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে হাসপাতালের লোকজন। পরে শুক্রবার সকালে সাহেদের কেয়ারটেকার এসে লাশ বুঝে নেয়। সকালেই আজিমপুর কবরস্থানে সাহেদের বাবাকে দাফন করা হয়।
গত ৬ জুলাই র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। পরীক্ষা ছাড়াই করোনার সনদ দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিল তারা।
র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অন্তত ছয় হাজার ভুয়া করোনা পরীক্ষার সনদ পাওয়ার প্রমাণ পায়। একদিন পর গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে র্যাব রিজেন্ট হাসপাতাল ও তার মূল কার্যালয় সিলগালা করে দেয়। রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। তবে প্রধান আসামি সাহেদ এখনও পলাতক রয়েছে।
খবর২৪ঘন্টা/নই