বাঘা প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর বাঘায় ঋণ গ্রহনে আগ্রহী সদস্যের সঞ্চয়কারী টাকা ও চাকুরি দেয়ার নামে অর্ধশতাধিক ব্যক্তির কাছে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছে প্রগ্রেসিভ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এর আড়ানী শাখার ম্যানেজার শাহিন আলম। গত এক সপ্তাহ থেকে অফিসে এসে ফিরে যাচ্ছেন ঋণ গ্রহনে আগ্রহী সঞ্চয়কারী সদস্যরা। বুধবার (১৭ জানুয়ারী) থেকে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার অফিস বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছে। টাকার শোকে বন্ধ অফিসের গেইটের সামনে সদস্যরা ভিড় করতে দেখা গেছে।
জানা যায়, বাঘা উপজেলার আড়ানীর শান্তি সুপার মার্কেটের দোতালায় দুটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে প্রগ্রেসিভ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এর আড়ানী শাখার কার্য্যক্রম শুরু করে। এই অফিস ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। অফিসের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন টাংগাইল জেলার কালিহাতি উপজেলার জকরমান গ্রামের শাহিন আলম নামের এক প্রতারক।
অফিস উদ্বোধনের পর ১০ হাজার টাকা বিমা করলে দুই সপ্তাহের মধ্যে এক লক্ষ টাকা, বিশ হাজার টাকার বিমা করলে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ দেয়া হবে মর্মে কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রচারনা করে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার শাহিন আলম। এই প্রচারনা শুনে স্থানীয় মাজদার রহমান, ইয়ারুল ইসলাম, তিতাস হোসেন, আবদুল হাকিম, মনোরঞ্জন, সুনন্দ কুমার হালদার, জিল্লুর রহমান, মিন্টু হোসেন, সুমন হোসেন, আসলাম হোসেন, বিপুল সরকার, পলি খাতুন, শাকিব হোসেন, তিথি খাতুন, স্বর্ণা খাতুন, লিখন হোসেন, মজিবর রহমান, জালাল হোসেন, সোহেল হোসেন, পিন্টু হোসেন, ফিমা খাতুন, সুমন সরকার, নুরবানু খাতুন এর মধ্যে কেউ ১০ হাজার আবার কেউ ২০ হাজার টাকা জমা দেন।
এছাড়া ভালো বেতন দেয়া হবে মর্মে প্রচারনা করেন ওই ম্যানেজার। ফলে চাকরি নেয়ার লোভে আসলাম উদ্দিন, আমিরুল ইসলাম, সমেন হোসেন, জমসেদ আলীর মধ্যে কারো কাছে থেকে ২০হাজার টাকা, আবার কারো কাছে থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার শাহিন আলম।
প্রতিষ্ঠানের সদস্য পিয়াদাপাড়া গ্রামের মুরগি ব্যবসায়ী তিতাস হোসেন বলেন, প্রগ্রেসিভ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেড বাহ্যিক চাকচিক্য অফিস মোটা অঙ্কের ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার কাছে থেকে ১১ হাজার টাকা নিয়েছে। আমাকে ২২ জানুয়ারী ঋণ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই অফিস বন্ধ করে পালিয়েছে ম্যানেজার।
আরেকজন আড়ানী দিয়াড়পাড়া গ্রামের মুরগি ব্যবসায়ী ইয়ারুল হোসেন বলেন, আমি সহজ শর্তে ঋণ নেয়ার লোভে আমার স্ত্রীর স্বর্ণের কানের দুল বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। আমি মঙ্গলবার অফিসে গিয়ে দেখি অফিস তালা বন্ধ। বাধ্য হয়ে ফিরে এসেছি। ম্যানেজারকে ফোন দিয়েও তার ফোন বন্ধ পাচ্ছি। এখন আমি নিরুপায় হয়ে পড়েছি।
আড়ানী বাজারের ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী বিপুল সরকার বলেন, আমার দোকানের মালামাল বৃদ্ধি করার জন্য ২০ হাজার টাকা জমা দিয়েছি। আমাকে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ দেয়ার কথা বলে এই টাকা নিয়েছে। এখন তাকে খুঁজে পাচ্ছিনা। এছাড়া কিছু ঋণ গ্রহনে আগ্রহী সদস্যের কাছে থেকে স্বাক্ষরসহ ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্পও নিয়েছেন ম্যানেজার শাহিন আলম।
প্রতিষ্ঠানের আড়ানী শাখার ম্যানেজারের শাহিন আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রগ্রেসিভ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এর রাজশাহী জোনের সহকারি ম্যানেজার হাসানুজ্জামান বলেন, ঋণ দেয়ার কথা বলে এই টাকা নিয়েছে এই বিষয়ে কোন সদস্য আমাকে জানায়নি। শাহিন আলম চলে যাওয়ার পর ভবনের মালিক ঘটনার দুইদিন পর আমাকে জানিয়েছেন। তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে তার ব্যাপারে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।
বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল হাসান রেজা বলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কোন অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে সদস্যরা অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে প্রতারণাকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ