বাঘা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘায় বাড়িতে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর, লুটপাট ও নারিকে টানাহেঁচড়া সহ মারধরও করে। প্রায় ঘণ্টাখানেক ওই বাড়িতে হামলায় অংশ নেয় প্রায় ২০-২৫ জনের একটি দল। এসময় বাড়ির ভেতরে অবস্থান করা সোনাভান নামের এই গৃহবধুকে টানাহেঁচড়া করে মারধর ও লাঞ্চিত করে হামলাকারিরা। এতে আহত হয় সে। হামলার আগে ওই বাড়ির লোকজন এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করেন। তাদের ভয়ে প্রায় ঘন্টা দু’য়েক পুরুষশূন্যে হয়ে পড়ে বাড়িটি। আকুতি-মিনতি করলেও মারধরের হাত থেকে রক্ষা পায়নি ওই বাড়ির গৃহবধু সোনাভান। হামলাকারিদের বেশির ভাগই যুবক ও মধ্য বয়সী! এখনো হামলার আতঙ্ক কাটেনি গ্রামটিতে।
ঘটনার শিকার পরিবারটির সদস্যদের অভিযোগ,পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকায় ভাংচুরের দৃশ্য পরিদর্শন না করেই বরং ভুক্তভূগী পরিবারকে সাশিয়েছে। তাদের কাছে ঘটনার কথা বলতে চাইলে তারা নাটক কইরেন না বলে তাড়িয়ে দেয়। তবে পুলিশ হামলাকারিদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার পর রাতে বাড়িতে ফিরে আসে পুরুষরা ।
ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (২৪-৫-১৮) রাত সোয়া বারোটায় উপজেলার জোতকাদিরপুর গ্রামের লোকমান সা’র বাড়িতে।
রোববার (২৬-৫-১৮) সরেজমিন পরিদর্শনকালে, হামলার শিকার সোনাভান কেঁদে উঠে বলেন, তবে বেঁচে আছি এটাই বড় পাওয়া। কিছু পর শান্ত হয়ে বলেন, প্রথমে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে ২০-২৫ জনের একটি দল। হামলার টের পেয়ে সটকে পড়ে বাড়ির পুরুষ ও অপর নারিরা। এসময় বের হতে না পেরে বাড়ির মফস্বল গেটের টয়লেটের পাশে লুকিয়ে পড়েন। সেখান থেকে টানাহেঁচড়া করে বাড়ির মধ্য নিয়ে গলায় ও পেটে চাকু ধরে মারধরও করে। কোন কথা না বলার ভয় দেখিয়ে একই গ্রামের খালেকের ছেলে কালু,কছেরের ছেলে নাজমুল, খোশ মোহাম্মদের ছেলে শাওন, প্রত্যয়, আবদুল্লার ছেলে লালন, সৈকত, সাগর, এবাদুল্লার ছেলে জুয়েল, আব্দুল্লাহ ও তার ভাই সহ আরো কিছু লোকজন খোশ মোহাম্মদের নের্তৃত্বে তার ঘরে প্রবেশ করে ড্রয়ারের তালা ভেঙ্গে ৫ভরি ৪আনা ওজনের স্বর্ণালংকার- চেইন ৩টা. দুল ৩ জোড়া, ১টি আংটি,কালার টিভিসহ নগদ আটচল্লিশ হাজার টাকা, ৪টা খাশি নিয়ে যায়। সবমিলিয়ে পরিধেয় বস্ত্র ছাড়া বাড়ির কিছুই রেখে যায়নি তারা। একই পরিবারের সদস্য গোলাম মোস্তফা জানান.তার ঘর থেকেও ফ্রিজ,টিভি, ফ্যান সহ ড্রয়ার ভেঙ্গে দোকানের মালামাল বিক্রির ৫০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। পাশের বাড়ির কলেজ ছাত্রী জুই বলেন,ভয়ে কেউ কেউ তার বাড়িতে ছাড়াও পাশের অন্য বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করে।
পাশের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান বলেন, জমি জমা নিয়ে বিবাদের জের ধরে একইদিন রাতে ও দুপুরে তার বসত বাড়িতে এবং খামার বাড়িতে ওইসব ব্যক্তিরাসহ ভাড়াটে কিছু লোকজন হামলা করে ৫০ হাজার টাকাসহ স্যালো মেশিন, সংগীত বাদ্যযন্ত্র, কম্পিউটার লুটপাট করাসহ বিদুৎ মিটার ভাংচুর এবং সোপাসেট, আসবাবপত্র তছনছ করে ।
স্থানীয়রা জানান,এর আগে মঙ্গলবার (২২-৫-১৮) হামলা ও ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে। খোশ মোহাম্মদ দাবি করেছেন, জমি জমা নিয়ে প্রতিপক্ষ আসাদুজ্জামানের নের্তৃত্বে তার লোকজন তার গাছের আম নামানো শুরু করে। বাঁধা দেওয়ায় মেহেদী হাসান বাবু, রুবেল, আস্তুল, আবু বক্কর, অন্তর, ফরিদ, সুরুজ, শিমুল, হাসান, কালু, নাসির. আনিস ও রানাসহ প্রায় ৩০ জনের একটি দল বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ির আসবাবপত্র ভাংচুরসহ গরু, ছাগল, ফ্রিজ, টিভি ও নগদ আশি হাজার টাকা লুটপাট করে। হামলায় আহত হয়-আকরাম হোসেন,আব্দুল্লাহ,বাবুল হোসেন,খাদিজা বেগমসহ ৭জন।
আসাদুজ্জামানের দাবি নালিশি জমির বাইরে দুইটি আমগাছের আম নামিয়ে নিচ্ছিল আকরাম ও তার লোকজন। এসময় তার ভাই আবু বক্কার বাঁধা দিলে তাকে কুপিয়ে জখম করে আকরাম, খশু মন্ডল,লালন ও সাগরসহ তার পক্ষের লোকজন।
স্থানীয় মেম্বর আব্দুল আজিজ জানান, মূলত দুই নাবালকের জমি ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে তাদের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হয়। মৃত কলিমুদ্দীন সা, তিন ছেলে- করিম,বজলু ও কাদেরকে রেখে মারা যান। এর মধ্যে বজলু ও কাদের নাবালক ছিলো। কলিমুদ্দিনের রেখে যাওয়া ৪৯ শাতংশ জমির পৈতৃক অংশ মোতাবেক সাবালক ছেলে করিম তার অংশের সোয়া ৭ শতাংশ জমি ফইমুদ্দিনের কাছে বিক্রি করে। পরে করিমের অংশের ৯ শতাংশ ও নাবালক দুই ভাইয়ের ৩৩ শতাংশ জমিসহ ৪২ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। এ জমি কিনেন খোশ মোহাম্মদ ও তার ভাইয়েরা। নাবালক দুই ছেলে বজলু ও কাদেরের অংশের জমি কিনেন গোলাম মোস্তফা ও ফইমুদ্দিন।
এ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার (তদন্ত) হীরেন্দ্রনাথ বলেন, এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ