রাজশাহীর বাঘায় গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে একদিকে ভাঙছে পদ্মার পাড় আরেক দিকে পদ্মার পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। পদ্মায় পানি বাড়ায় জেলার বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নে পদ্মা নদী বেষ্টিত বেশ কয়েকটি গ্রামসহ হাট-বাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অপরদিকে পানি বৃদ্ধির সাথে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে সেখানকার মানুষের । স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান,জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রক্ষার চেষ্টা করছে ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। (পাউবো)। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে পানিবন্দি ও ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ।
পানি বৃদ্ধির সাথে ভাঙছে পদ্মার পাড়। উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের পাকুড়িয়া ইউনিয়নের পূর্ব-দক্ষিণের পানিকুমড়া এলাকা থেকে শুরু করে চকরাজাপুর ইউনিয়নের, উত্তর-পশ্চিম দিকে নিচ পলাশী, হবিরচর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিঃমিঃ এলাকা জুড়ে একটানা ভেঙে যাচ্ছে। বণ্যা আর ভাঙনের সাথে লড়াই করে বসবাস করছে পদ্মা নদী বেষ্টিত এলাকার মানুষ। ভয়ংকর রুপ দেখে এলাকাবাসীর আশঙ্কা পরিস্থিতি গত কয়েক বছরের চেয়ে এবছরের বেশি ভয়াবহ হতে পারে।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিজুল আযম জানান, তার ইউনিয়নটি যোগাযোগ বিছিন্ন চরাঞ্চলে অবস্থিত। পদ্মা নদীর পানি বাড়ার কারণে ইউনিয়নের কালিদাসখালী, পলাশীফতেপুর, লক্ষীনগর ও
দিয়াড়কাদিরপুর,আতারপাড়া, চৌমাদিয়া, উদপুর, দাদপুর, চকরাজাপুর বাজার, ২টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ চর এলাকার অধিকাংশ এলাকায় এখন বন্যার পানি। যার ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার। তলিয়ে গেছে ইউনিয়নের প্রায় ২৫% শতাংশ জমির ফসল ও গাছ-পালা। ভাঙনে অনেকে হারিয়েছে বাপ দাদার বসতভিটা। চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভাঙনের দুরত্ব ৫০ মিটার। এ ছাড়া চকরাজাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক পদ্মার ভাঙনে হুমকির মধ্যে পড়েছে। সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার, দিলরুবা ইয়াসমিন, চর অঞ্চলের বিদ্যালয় গুলোর বর্তমান অবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য পরিদর্শন করেছেন।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার ভাঙন ও বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা গেছে, পানিবন্দি হয়ে পড়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। কিছু কিছু এলাকায় চুলাও জ্বলছে না। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। বেড়েছে সাপের উপদ্রব। গবাদি পশুর খাদ্য সংকটে ভুগছেন কৃষকরা। ডুবে গেছে রাস্তা-ঘাট। এসব স্থানে দাঁড়িয়ে অনেকেই খেপলা জাল দিয়ে মাছ ধরছেন।
দিয়াড়কাদিরপুর গ্রামের বাসিন্দা সাবিরুল ইসলাম জানান, ভাড়া করা জমিতে দুটি ঘর তুলে স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে বসবাস করছিলেন। পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ছাগল ও গরু নিয়ে বিপদে পড়েছেন। এলাকায় কোন কাজ নেই। সংসার চালাচ্ছেন জাল দিয়ে মাছ ধরে বাজারে বিক্রির টাকা দিয়ে।
কালিদাশখালি গ্রামের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মিজানুর রহমান মাষ্টারসহ অনেকেই জানান, বছওে প্রায় তিন মাস তারা পানিবন্দি থাকেন। কয়েক বছর ধরে এ অবস্থা চলছে। গত কয়েকদিন হলো তাদের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। চুলায় রান্না করতে পারছেন না। কেউ কেউ মাচায় রান্না করছে। অনেককেই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে রান্না কিংবা তাদের বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে এসে খেতে হচ্ছে।
চৌমাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা, ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান জানান,স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে। বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে কেউ মারা গেলে লাশ মাটি দেওয়ার জায়গা নেই। তিনি বলেন, গত বুধবার দুপুরের দিকে আমার গ্রামের পাশের উপজেলা দৌলতপুরের চিলমারী ইউনিয়নের দক্ষিণ খারিজার থাক গ্রামে বাড়ির পাশের জলাশয়ে ডুবে ছিদ্দিক মোল্লার ছেলে সিয়াম (৭) ও জমাদারের মেয়ে ঝুমা আক্তার মনি (৭) নামের দুই শিশু মৃত্যুবরণ করেছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম সেখ বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নীচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পদ্মার তীরবর্তী ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাপিয়া সুলতানা জানান,ভাঙন রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চেঠি দিয়ে জানা হয়েছে। পানিবন্দি মানুষদেও উঁচু জায়গায় নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন। আজ শুক্রবার (২০-৮-২০২১) থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণ সহযোগিতা দেওয়ার হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী অফিসার।
এস/আর