বাঘা প্রতিনিধি: বাঘায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় ওরস উপলক্ষে ঈদুল ফিতরের ঈদ মেলায় কোন প্রকার অনৈতিক কার্যকলাপ চলতে দেওয়া হবেনা বলে ঘোষনা দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও অফিসার ইনচার্জ (ওসি)। উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় সরকার ঘোষিত মাদক নিয়ন্ত্রন,চোরাচালান প্রতিরোধসহ বাঘার ঈদ মেলায় বিনোদনের নামে অনৈতিক কার্যকলাপ বিষয় নিয়ে আলোচনা শেষে এ ঘোষনা দেন তারা। এর সাথে রাজনৈতিক ও সচেতন মহলের সহযোগিতা কামনা করেছেন ওই দুই অফিসার।
সুত্রে জানা যায়, আব্বাসীয় বংশের হযরত শাহ্ধসঢ়; মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলা (রহঃ) ও তার ছেলে হযরত আব্দুল হামিদ দানিশমন্দ (রহঃ) ওফাৎ দিবসে ধর্মীয় ওরস মোবারক উৎসবকে কেন্দ্র করে সাধকদের সাধনার পীঠস্থান বাঘা ওয়াকফ এষ্টেটের বিশাল এলাকা জুড়ে প্রতি বছর ঈদুল ফিতরের ঈদে অনুষ্ঠিত হয় ঈদ মেলা। ধর্মীয় চেতনায় আঘাত হানতে পারে এমন কার্যকলাপের ১০ টি শর্ত জুড়ে দিয়ে মেলার জন্য ইজারা দেওয়া হয় ওয়াকফ এষ্টেটের মাঠ। (তালিকায় রয়েছে,নগদ জমানত ছাড়াও
ডাকের সমুদয় অর্থ নগদ প্রদান,আইনশৃঙ্খলা ও পরিস্কার পরিছন্নতা বজায় রাখাসহ অন্যান্য শর্তের মধ্যে রয়েছে, যাত্রা, নাচ,গান,পুতুল নাচ, জুয়াখেলা, লটারি, অশ্লিল সিডি, অসামাজিক কার্যক্রম,মেলায় আগত ব্যবসায়ীদের কাছে ১শত টাকা ফুট (দের্ঘ্য-প্রস্থের গড়) হিসাবে ও আসবাবপত্র ক্রেতাদের নিকট শতকরা ৫টাকার বেশি খাজনা আদায় না করা)। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যায় উল্টো চিত্র। এবারেও ওই আশংকায় অনৈতিক কার্যকলাপ পরিহারের দাবি তুলেন সচেতন মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের ঈদ মেলায় বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ আশি হাজার টাকায় ইজারা দিয়েছেন বিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। সেখানে বিনোদনের জন্য সার্কাস-যাত্রা,পুতুলনাচ, মৃত্যু কুপ খেলা,কার ও মটরসাইকেলের প্যান্ডেলের কাজও শুরু করা হয়েছে। আগের মতো জুয়ার আসরও বসতে পারে বলে ধারনা করছেন অনেকেই। অভিযোগ রয়েছে,অধিক সময় ধরে চালানো হয়
সার্কাস ও পুতুল নাচের নামে অশ্লিল নৃত্য। স্কুল মাঠে এসব আয়োজনের কারনে রমজানের ছুটি শেষে ভোগান্তিতে পড়ে শিক্ষার্থীরা। নির্ধারিত ছুটি ছাড়াও অতিরিক্ত ছুটি কাটাতে হয় এসব শিক্ষার্থীদের। এনিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে, গত বছর স্কুল মাঠ ইজারা বন্ধ রাখেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এবার অদৃশ্য শক্তির ইশারায় মাঠ ইজারা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এনিয়েও রয়েছে দুটি পক্ষ-বিপক্ষ। বিদ্যালয়ের মাঠ ইজারা দেওয়ার সত্যতা স্বিকার করেছেন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী দেওয়ান। উপজেলা নির্বাহি অফিসার শাহিন রেজা বলেন, ধর্মীয় ওরস উপলক্ষে ঐতিহাসিক এ মেলার ঐতিহ্য প্রায় ৫’শ বছরের। তাই মেলায় অশ্লিতা বন্ধে তিনি বদ্ধ পরিকর। ওসি রেজাউল হাসান বলেন,জুয়া ও মাদকের ব্যাপারেও শক্ত
অবস্থানে থাকবেন তিনি।
সরেজমিন দেখা গেছে,ঈদের ব্যস্ততা এখন বাঘার পুরো এলাকা জুড়ে। ফুটপাত এখন হকারদের দখলে। স্থায়ী ব্যবসায়ী ছাড়াও নানা পসরা নিয়ে ব্যবসায় নেমেছে প্রায় ৫ হাজার হকার। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে বিভিন্ন পণ্য ব্যবসায়ীর সংখ্যা। প্রধান প্রধান শপিং কমপ্লেক্স,বিপনি বিতানের পাশাপাশি বিভিন্ন পশ্য সাজিয়ে বসেছেন ভাসমান এসব ব্যবসায়ীরা। অভিজাত মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অসন্তুষ্ট হলেও নিম্নবিত্ত সাধারন মানুষ তুলনামূলকভাবে কমদামে ঈদের কেনা-কাটার সুযোগ পেয়ে খুশি তারা। ক্রেতা বৃদ্ধির সংগে বাড়ছে বিকিবিনি। উপজেলা সদর থেকে শুরু করে নারায়নপুর, মনিগ্রাম, ও চন্ডিপুর পর্যন্ত বেশিরভাগ বাজার এলাকায় কেনা-কাটায় শীর্ষে রয়েছে মেয়েদের শাড়ী, থ্রিপিচ,গহনা, কসমেটিকস, শিশুদের রকমারি পোশাক, জুতা- সেন্ডেল ও ছেলেদের পাঞ্জাবী ও শার্ট। ঐতিহ্যবাহী ঈদ মেলাকে কেন্দ্র করে গনসমুদ্রে পরিনত হয়েছে বাঘা উপজেলা প্রান কেন্দ্র।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ