আলতাফ হোসাইন, বাগমারা প্রতিনিধিঃ রাজশাহী বাগমারা মহব্বতপুর গ্রামের আদিবাসী শিক্ষা বঞ্চিত শিশু রবিন, সুমন ও মোহনরা বিদ্যালয় কি জানে না। তাদের দিন কাটে রাস্তায় রাস্তায় লাকড়ি কুড়িয়ে অথবা খেলা-ধুলা করে। যে বয়সে তাদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা সে বয়সে তারা লাকড়ি কুড়িয়ে জীবন যাপন করছে। বিদ্যালয় কি, লেখা-পড়া কি তা তারা জানে না। আশে-পাশে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আদিবাসী শাওতাল সম্প্রদায়ের সন্তান হওয়ায় তাদেরকে সাধারণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে নেওয়া হয় না। ফলে মহব্বতপুর গ্রামের শতাধিক শিশুরা বঞ্চিত থাকছে শিক্ষার আলো থেকে।
তাদের প্রবল ইচ্ছা লেখা-পড়া শিখার থাকলেও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে তাদের জীবনে ঘটছে না শিক্ষা। ফলে উন্নত জীবন রয়েই যাচ্ছে তাদের স্বপ্ন হয়ে। ২০০৯ সালের স্থানীয় একজন সাংবাদিকের প্রচেষ্টায় মহব্বতপুর গ্রামে আদিবাসী পাড়ায় একটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক সংকটে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়। ঐ সময় বিদ্যালয়ে প্রায় শিশু শ্রেণীতে প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু বিদ্যালয়টি বন্ধ হওয়ার পর থেকে সেখানে আর কোন লেখা-পড়া হয় না।
সরকারি ও বেসরকারি ভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ স্কুলসহ বিভিন্ন রকম প্রাথ-প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠলেও মহব্বতপুর গ্রামে আদিবাসী পাড়ায় কোন বিদ্যালয় গড়ে উঠেনি। যার কারণে বর্তমান ডিজিটাল যুগেও তারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এব্যাপারে বিভিন্ন সময় স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করলেও কোন লাভ হয়নি। রবিন, সুমন ও মোহনরা জানায় যে আমাদেরকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি নেওয়া হয় না। আমাদেরও ইচ্ছা হয় লেখা-পড়া শিখে দেশের উন্নয়নে কাজ করব। কিন্তু কোন ভাবেই আমরা শিক্ষা নিতে পারছি না।
এ প্রসঙ্গে ঐ সময় স্থাপিত বিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষিকা রাশ মনি জানান স্থানীয় একজন সাংবাদিক ভাইয়ের প্রচেষ্টায় ২০০৯ সালে আদিবাসী শিশুদের শিক্ষার জন্য একটি টিনের ছাউনি ও টিনের বেড়া দিয়ে একটি স্কুল স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে স্থানীয় কিছু ব্যক্তির কারণে বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে আমরা বহু চেষ্টা করেও আর বিদ্যালয়টি চালু করা সম্ভব হয়নি। বছরের প্রথম দিনে অন্যান্য সম্প্রদায়ের শিশুরা নতুন বই নিয়ে বিদ্যালয়ে যায়। আর আমাদের আদিবাসী শিশুরা চেয়ে চেয়ে দেখে। কিছুই করার নেই।
কেহ কেহ পার্শ্ববর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাদের শিশুদেরকে ভর্তি করাতে গেলেও ভর্তি করে নেওয়া হয় না। যে কারণে আদিবাসী শিশুদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার আলো থেকে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা পূর্বক পুনঃরায় বিদ্যালয়টি চালু করে আদিবাসী শিশুদের শিক্ষা দানের পরিবেশ সৃষ্টি করার আবেদন জানাচ্ছি।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ