বাগমারা প্রতিনিধি: বাগমারার মাধাইমুড়ি গ্রামের এক স্কুল শিক্ষকের বাড়িতে মাদক রেখে কৌশলে পুলিশকে খবর দিয়ে শিক্ষককে মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। মামলা আতংক ও পুলিশী হয়রানীর ভয়ে ওই স্কুল শিক্ষক এখন বাড়ি ফিরতে পারছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মচমইল গ্রামের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী পলাশ মীর পুলিশের সোর্স বলে এলাকায় প্রচার চালিয়ে আসছিল। দীর্ঘদিন থেকে পলাশ সহ তার মাদক বাহিনী এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে বিভিন্ন প্রকার মাদক বিক্রয় সহ এলাকার বিত্তশালী পরিবারের লোকজনের বাড়িতে মাদক রেখে পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়।
এর প্রতিবাদ করতে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা তার বড় ভাই সহ তাদের মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যরা নানা ভাবে হুমকি প্রদর্শন করে। এতে করে জনসাধারনের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান , পলাশ এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী হলেও থানা পুলিশের সাথে তার ব্যাপক দহরম মহরম থাকায় মাদক সহ হাতে নাতে ধরা পড়লেও পুলিশ রহস্যজনক কারনে তাকে ছেড়ে দেয় । পলাশের মাধ্যমে পুলিশ এলাকার বিত্তশালী ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইল করে মোট অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। মাদক স¤্রাট পলাশ পুলিশের সোর্স হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের মচমইল গ্রামের বরকতুল্লাহর ছেলে পলাশ মীর ওরফে মাদক পলাশ নামে পরিচিত।
শুধু পলাশই নয় দীর্ঘদিন থেকে তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই কোন না কোন ভোবে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। বেশ কয়েকবার পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করে । তারা জামিনে বের হয়ে পুনরায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত পলাশকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। উল্লেখ্য গত ৮ আগস্ট উপজেলার গনিপুর ইউনিয়নের মাধাইমুড়ি গ্রামের স্কুল শিক্ষক জাহিরুল ইসলাম বুলুর বাড়িতে গোপনে মাদক নিয়ে প্রবেশ করে পলাশ। ওই সময় স্কুল শিক্ষক জাহিরুল ইসলাম বুলু বিদ্যালয়ে থাকার সুবাদে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে পলাশের কাছে থাকা একটি মাদক দ্রব্যের ব্যাগ বুলুর বাড়ির বৈঠকখানার কক্ষে রাখে। বিষয়টি আগেই পুলিশকে জানিয়ে রাখে পলাশ। সে কারনে পূর্ব থেকে স্কুল শিক্ষক জাহিরুল ইসলাম বুলুর বাড়ির আশপাশে অবস্থান নিয়েছিল পুলিশ। বুলুর বাড়িতে পলাশের প্রবেশের একটু পরে বুলুর বাড়িতে পুলিশ ঘুকে পড়ে।
সে সময় পলাশের আরেক সহযোগি মাদক ব্যবসায়ী মাধাইমুড়ি গ্রামের আশরাফ আলী ওরফে এসকেন মিলে মাদক সেবন করা অবস্থায় পুলিশ তাদের আটক করে। পরে তাদেরকে রাস্তায় নিয়ে এসে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের সামনেই বুলুর বাড়িতে রাখা মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে। তখন পর্যন্ত বুলু বাড়িতে ছিল না। পলাশের সাথে জোগসাজসে পুলিশ তাদেরকে আসামী না করে স্কুল শিক্ষক জাহিরুল ইসলাম বুলুর নামে বাগমারা থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ। এমন সাজানো ঘটনা ঘটিয়ে পলাশ বুলুকে জানায় ১ লাখ টাকা থানায় দিলে তার বিরুদ্ধে কোন মামলা হবে না।
সে সময় আত্মসম্মানের ভয়ে বুলু পলাশকে জনসম্মুখে ৬৫ হাজার টাকা প্রদান করে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উক্ত টাকা পলাশ কাউকে না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করে। বর্তমানে সেই টাকা ফেরত চাইলে পলাশ আত্মগোপনে থেকে নানান রকম টালবাহানা করছে বলে বুলু মাস্টারের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। সেই সাথে পলাশ ওই ৬৫ হাজার টাকা পুলিশকে দিয়েছে বলে মিথ্যা প্রচার শুরু করে।
এ ব্যাপারে বাগমারা থানার উপ পরিদর্শক আব্দুল মজিদ ও নজরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, মাদক উদ্ধারের ঘটনায় কোন প্রকার অর্থ লেনদেনের প্রশ্নই আসে না। পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে পালশ সেই অর্থ আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছে।
এদিকে বাড়িতে মাদক রেখে পুলিশকে ডেকে এনে একজন স্কুল শিক্ষককে ফাঁসানোর ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
খবর ২৪ঘণ্টা/ নই