বাগমারা প্রতিনিধি :
বাগমারায় বাল্য বিয়ে রেজিষ্টি করার অভিযোগে উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের কাজী রেজাউল করিম ওরফে আক্কাস কাজীকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদ্বন্ড ও বর স্বপন রহমানের ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় কনেকে তার পিতার জিম্মায় দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। গত শনিবার রাত সাড়ে দশটার সময় বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে আদালতের বিচারক বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রথম শ্রেণির নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জাকিউল ইসলাম এ রায় ঘোষনা করেন। রায় ঘোষনার পর আদালত চত্তরে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের আবতারনা হয়। কাজীর পরিবার ও বর ও কনের পরিবারের সদস্যরা এ সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এদিকে বাগমারায় বাল্যবিয়ে রেজিষ্ট্রি করার অপরাধে এই প্রথম কোন কাজীর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা হওয়ায় শনিবার রাতে আদালত কক্ষে ও বাইরে উপস্থিত প্রায় অর্ধশতাধিক জনতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ভ্রাম্যমান আদালত ও গোয়ালকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন সরকার জানান, চলতি চছরের ফেব্রয়ারী মাসে মানিকগঞ্জ জেলার জয়নগর পোষ্ট অফিসের অধীন গিলন্ড গ্রামের আক্কাস সিকদারের ৯ম শ্রেণি পড়ুয়া লাকী খানমের সাথে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার কুমারপুর গ্রামের আব্দুল করিমের পুত্র স্বপন রহমান(১৯) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তার আগে চলতি বছরের ফেব্রয়ারী মাসে মানিকগঞ্জ জেলার মুন্সিবাড়ি মেলায় স্বপন রহমানের সাথে লাকী খানমের প্রথম পরিচয় হয়। এই পরিচয়ের সূত্রে তাদের মধ্যে দীর্ঘ ১০ মাস প্রেমের সম্পর্ক চলতে থাকে। সে সময় স্বপন রহমান মানিকগঞ্জ জেলা সদরের একটি হোটেলের বয় হিসাবে চাকুরী করত। এরই মাঝে উভয়ের প্রেম আরো গভীরতর হলে গত ২৩ আক্টোবর স্বপন রহমান লাকি খানমকে তার পরিবারের আগোচরে পালিয়ে নিয়ে নিজ গ্রাম কুমারপুরে চলে আসে এবং ওই দিন দিবাগত রাতে তারা পাশ্ববর্তী বাগমারা উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের কাজী রেজাউল কমির ওরফে আক্কাস কাজীর কাছে তাদের বিয়ে রেজিষ্ট্রি করার জন্য উপস্থিত হন। এ সময় আক্কাস কাজী বর ও কনের বয়স পূর্ন না হওয়ায় নানান টালবাহানা করে অবশেষে সাড়ে ১৭ হাজার টাকার বিনিময়ে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করে দেন।
আসম এই বাল্য বিয়ের পর বর কনে বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দী ইউনিয়নের একডালা গ্রামে বরের মামা দুলাল হোসেনের বাড়িতে বসবাস শুরু করে। এদিকে মেয়েকে হারিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করে আক্কাস সিকদার জানতে পারে তার মেয়ে বাগমারার গোয়ালকান্দী ইউনিয়নের একডালা গ্রামে অবস্থান করছে। তিনি বিষয়টি বাংলাদেশ সচিবালয়ে কর্মরত তার এক আত্মীয় উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে অবগত করে তাঁর সহায়তা কামনা করেন। পরে ওই কর্মকর্তা বিষয়টি বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিউল ইসলামকে অবহিত করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গত শনিবার বিষয়টি গোয়ালকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর সরকারের নজরে আনেন এবং বর ও কনেকে তার দপ্তরে হাজির করার নির্দেশ প্রদান করেন। ইউএনও’র নির্দেশ পেয়ে চেয়ারম্যান আলমগীর সরকার বর স্বপন রহমান, কনে লাকী খানম ও তার পিতা আক্কাস আলী সহ উভয় পবিরারের সদস্যদের ইউএনও’র দপ্তরে হাজির করেন। এ সময় ইউএনও’র নির্দেশ পেয়ে বাগমারা থানার পুলিশ কাজী রেজাউল করিম ওরফে আক্কাস কাজীকেও ভ্রাম্যমান আদালতে হাজির করে। আদালতের বিচারক উভয় পক্ষের জেরা ও সাক্ষীদের সাক্ষ গ্রহন পূর্বক
বাল্যবিয়ের অপরাধে ২০১৭ সালের বাল্য বিয়ে নিরোধ আইনের ১১ ধারা মোতাবেক বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রি করায় কাজীর ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও একই আইনের ৭ ধারা মোতাবেক বর স্বপন রহমানের ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদ্বন্ড ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় কনে লাকী খানমকে তার পিতা আক্কাস শিকদারের জিম্মায় হস্তান্তর করা হয় । এ প্রসঙ্গে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রথম শ্রেণির নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জাকিউল ইসলাম জানান, নাবালককে বিয়ে পড়ানোর অপরাধে কাজীর ৬ মাসের এবং নাবালক বিয়ে করার অপরাধে বরের ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদ্বন্ড দেয়া হয়েছে। একই সাথে নাবালক লাকী খানক ভুলপথে পরিচালিত ও প্ররোচনার শিকার হওয়ায় তাকে তার পিতার জিম্মায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
খবর ২৪ ঘণ্টা/এমকে
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।