বাগমারা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বড়-বিহানালী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দালাল মুক্ত করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে তহশীলদার প্রনব কুমার বিশ্বাস।
ভূমি অফিস হবে দালাল মুক্ত রাজশাহী জেলা প্রশাসকের এমন ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনলেন এই তহশীলদার। জানা গেছে, এক সময় বড়-বিহানালী ইউনিয়ন ভূমি অফিস ছিলো দালালের দখলে। দালাল ছাড়া এখানে কোন কাজ পার করতে পারেনি তহশীলদাররা। দালালদের সাথে আতাত না করলে সেখান থেকে নানান অভিযোগে বদলী হতে হয়।
গত মার্চ মাসে ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে দালাল মুক্তভাবে কাজ করার লক্ষ্যে বড়-বিহানালী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের বদলী করা হয়। বড়-বিহানালী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে জনবল সংকটের কারনে যোগ দানের পর থেকে একজন পিয়নকে সাখে নিজেকেই ইউনিয়ন বাসীর সেবা দিয়ে আসছেন তিনি। এদিকে অফিসের কাজে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে গেলে দালাল চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে এলাকাবাসী। তহশীলদার প্রনব কুমার বিশ্বাসের অগোচরে কাগজ পত্রাদী ঠিক করে দেয়ার নাম করে লোকজনের নিকট থেকে অধিক পরিমান অর্থ আদায় করে আসছিল। এছাড়াও সহজ সরল কৃষকে কায়দা করে ডিসি আর খাজনার চেক এবং জাল দলিল সহ জমি খারিজের নাম করে টাকা আদায় করতো। বিষয়টি স্থানীয় ভুক্তভোগীরা তহশীলদারকে অবহিত করলে তিনি এর প্রতিবাদ করেন। সেই ঘটনার পর থেকে আব্দুল বারী, খাজা ময়েন উদ্দীন, সিরাজ উদ্দীন সহ বেশ কয়েক জন চিহ্নিত বড়-বিহানালী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দালালদের অফিসের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। সেই থেকে তহশীলদার প্রনব কুমার বিশ্বাসকে বড়-বিহানারী ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে বদলী করে নিজের স্বার্থ হাসিলে উঠে পড়ে লেগেছে। এরই জের ধরে গত রবিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন একটি চক্রে। এদিকে স্থানীয় একজন মুক্তিযোদ্ধা দ্বীপুর ইউনিয়নের খাঁপুর গ্রামের আজাহার আলী নামের এক ব্যক্তির কেস নং ৮৩৮/৯-১-১৮-১৯ নম্বরের একটি দলিল নিয়ে খাজনার চেক কাটার জন্য ভূমি অফিসে যান।
পরে অফিসে থাকা রেকর্ড পত্রে ওই নম্বরের কোন দলিল না থাকায় খাজনা নিতে অস্বীকার করলে জাল দলিল নিয়ে আসা ওই মুক্তিযোদ্ধা তহশীলদারকে হুমকী প্রদান করেন। এদিকে যে জাল দলিল নিয়ে খাজনা দিতে যান মুক্তিযোদ্ধা সেটা নিয়ে উপজেলা ভূমি নিয়ে ভূয়া দলিল বাতিলের মামলা চলমান রয়েছে বলে জানাগেছে। ভোঁজ নিয়ে আরো জানাযায়, তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসিম মাহমুদের স্বাক্ষর জাল করে ওই জাল দলিলের মালিক আজাহার আলী ডিসিআর কেটে নেয়। যার ডিসিআর নম্বর ৬৮৮৮৬/০২ বহি নং ২২২, খারিজ কেস নং ১৭২/৯-১/১৫-১৬। এছাড়াও বর্তমান ইউনিয়ন ভূমি তহশীলদার প্রনব কুমার বিশ্বাস ওই অফিসের যোগদানের আগেই তার স্বাক্ষর জান করে খাজনার রশিদ কেটে নেন। যার কেস নং সি ৩৮৯১১৪ তাং ২৪-৭-১৮। এ সকল জালিয়াতি উদঘাটন করার ফলে তার বিরুদ্ধে ওই চক্রটি উঠে পড়ে লেগেছে। সেই সাথে ভূমি জালিয়াত চক্রটি মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে বিভ্রান্তি মূলক অভিযোগ দাখিল করে চলেছে।
এদিকে এলাকাবাসী রকিব উদ্দীন, শফির উদ্দীন, ভগিরত চন্দ্র, রনজিত মাস্টার সহ অনেকে দাবী করে বলেন, বড়-বিহানালী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে জনবল সংকটরে কারনে দালাল চক্রটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দালাল ছাড়া কোন কাজ করা সম্ভব হতো না আগে। বর্তমানে হয়রানির হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে ইউনিয়ন বাসী। তবে জনবল কম থাকার কারনে কাংখিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ইউনিয়নের লোকজন।
এ ঘটনায় প্রনব কুমার বিশ্বাস জানান, আমি চক্রটির সাথে আতাত না করায় আমার বিরুদ্ধে তারা নানান রকম ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এই অফিসে কোন ব্যক্তির কাছ থেকে কাজ করে দেয়ার নাম করে অতিরিক্ত অর্থ নেয়া হয় না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকিউল ইসলাম বলেন, বড়-বিহানারী ইউনিয়ন ভূমি অফিসারের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী লিখিত অফিযোগ দিয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইউনিয়ন ভূমি অফিস দালাল মুক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছে প্রশাসন। যারা এই জালিয়াতি চক্রের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেনও জনিয়েছেন তিনি।
আর/এস