আলতাফ হোসেন, বাগমারা: বাগমারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ১৬টি অবৈধ ড্রাম-চিমনি ইটভাটা। আর এসকল ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে একদিকে যেমন রাস্তার দু’ধার বৃক্ষ শূন্য হয়ে পড়ছে অন্যদিকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে মারাত্মকভাবে পরিবেশ দুষিত হয়ে পড়ছে। রাজশাহীর পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাগমারার বিভিন্ন এলাকায় লোকালয়ে কৃষি জমির উপর কয়েক বছর ধরে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি সরকারি অনুমোদন ছাড়াই প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধ ড্রাম-চিমনি ইটভাটা স্থাপন করে ব্যবসা করে আসছেন। অনেক ভাটার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ও স্থানীয় প্রশাসনে অভিযোগ দিলেও স্থানীয় প্রশাসন এখনও অবৈধ সরকার নিষিদ্ধ ড্রাম-চিমনির ইটভাটার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা করায় স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। ড্রাম-চিমনির অবৈধ ইট ভাটাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো: উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের বানাইপুর মোড়ে রশিদুল ইসলামের ভাটা, হাট নরদাশ এলাকায়
ইয়ানুছ আলী ও খয়বর আলীর ভাটা, পারিলা মোড়ে শফিকুল ইসলাম, সুজন পালশায় মোয়াজ্জেম হোসেন, মোস্তাক আহম্মেদ, আলতাব হোসেন ও হাটমাধনগর এলাকায় বাবুর ভাটা, গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের করখন্ড মাদরাসা সংলগ্ন আমিনুল ইসলামের ভাটা, চাইসারা মোড়ে খুরশেদ আলম, পশ্চিম দৌলতপুরে ইয়ানুছ আলী, দেওপাড়ায় খুরশেদ আলম, আউচপাড়া ইউনিয়নের হাট খুজিপুর এলাকায় দুলাল হোসেন, হাটগাঙ্গোপাড়া এলাকায় মাসুম ও বুলুর ভাটাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে লোকালয়ে গড়ে উঠা প্রায় ২০টি ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই স্থাপন করা হয়েছে। এসব ইট ভাটার বৈধ কোনো লাইন্সে নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্রও নেই। ভ্যাট, ইনকাম ট্যাক্স প্রদান না দিয়েই প্রশাসনের নাকের ডগায় বছরের পর বছর এ অবৈধ ড্রাম-চিমনির ভাটাগুলো চলছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনো ইটভাটা স্থাপন করতে হলে প্রথমেই বিএসটি.আই কর্তৃক লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু এসব ভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১২০ ফুট উঁচু পাকা কংক্রিটের স্থায়ী চিমনি ছাড়া কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু এসব ভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রেও সেই নিয়ম মানা হয়নি। পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের প্রজ্ঞাপন অমান্য করে মাত্র ২৫/৩০ ফুট উঁচু টিনের অবৈধ ড্রাম-চিমনি দ্বারা এসব ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এ কারণে সামান্য উঁচু ড্রাম-চিমনি দিয়ে নির্গত কালো ধোঁয়া উপরে না গিয়ে নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে ভাটা সংলগ্ন এলাকার জমির কৃষি আবাদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নির্গত কালো ধোঁয়ার কারণে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন রোগ। এছাড়া অনুসন্ধানে জানা যায়, অবৈধ এসব ইটভাটায় বাগমারা ও মোহনপুর উপজেলার বিভিন্ন রাস্তার দু’পার্শ্বে
রোপিত নানা প্রজাতির ছোট ছোট গাছ কেটে অবাধে জ্বালানী হিসাবে ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে জানান, এসক অবৈধ ইট ভাটা উচ্ছেদের জন্য আদালত ও স্থানীয় প্রশাসনে আমরা এলাকাবাসীর পক্ষে অভিযোগ দিয়েও কোন লাভ হয়নি। এছাড়াও সরকারি রাস্তার দু’ধারের গাছ একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে রাতের আধারে শিশু, মেহগনি, আম, জাম ও বাবলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ভুটভুটি/নসিমনযোগে ওইসব ভাটায় সরবরাহ করা হয়। এতে একদিকে যেমন রাস্তার দু’ধার বৃক্ষ শূণ্য হয়ে পড়ছে অন্যদিকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে মারাতœকভাবে পরিবেশ দুষিত হয়ে পড়ছে। অপরদিকে কৃষকদের অর্থের লোভ দেখিয়ে কৃষি জমির (টপ সয়েল) মাটি কেটে ইট তৈরির জন্য ভাটার সামনে এনে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। এতে কৃষি জমির উর্বরতা শক্তিও কমে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, লোকালয়ে কৃষি জমির উপর অবৈধভাবে ড্রাম-চিমনি ইটভাটা স্থাপন ও জ্বালানী হিসাবে কাঠ পোড়ানো অবাধে চলছে। এদিকে দামনাশে ড্রাম-চিমনি ইটভাটার মালিক উকিল চাঁদের বিরুদ্ধে ও আদালত ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে অভিযোগ থাকলেও থেমে নেই উকিল চাঁদের ড্রাম-চিমনি ইটভাটা। এ প্রসঙ্গে বাগমারা ড্রাম-চিমনি ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও ড্রাম-চিমনি স্টার ভাটার মালিক আফসার জানান, আমরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ড্রাম-চিমনি ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ভ্যাট ইনকাম ট্যাক্স দেয়ার প্রয়োজন হয়না। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, খুব শিঘ্রই সরকার নিষিদ্ধ ড্রাম-চিমনি ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আর/এস