নিজস্ব প্রতিবেদক : জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানে পুলিশের লজ্জাজনক ভুমিকা নিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে পুরো বাহিনী। পুলিশের হারানো ইমেজ ও গৌরবকে পুনরুদ্ধার করতে সরকার যখন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ঠিক সেই সময়ে বিতর্কের জন্ম দিলেন রাজশাহীর বাগমারা জোগীপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আব্দুল করিম। মামলার ভয় দেখানোর পরে জিম্মি করে সাড়ে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে । গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল হকের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। তারপর থেকে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ইনচার্জ আব্দুল করিম মামলায় ধরে চালান করার ভয় দেখিয়ে আসছে ভুক্তভোগীদের। তবে গত ১০ ফেব্রুয়ারি চেয়ারম্যান রেজাউল হকের মৃত্যুর পরে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে এলাকাজুড়ে। এসময় এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
জানাগেছে, যোগীপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আব্দুল করিমের বাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার পারগুরনোই গ্রামে। পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটি পাশ্ববর্তী এলাকা হওয়ার সুবাদে তিনি দাপট দেখিয়ে চাকরি করে যাচ্ছেন। তবে জাতীয় পরিচয় পত্র সুত্রে জানাযায় সারদা পুলিশ একাডেমি এলাকার বাসিন্দা তিনি।
ভুক্তভোগীরা জানায় , গত ( ১ ফেব্রুয়ারি) চেয়ারম্যান রেজাউল হকের বাড়িতে তাস খেলার সময় ৭/৮ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের শরীর তল্লাশি করে নগদ যা টাকা ছিল জোর পুর্বক ছিনিয়ে নেন জোগীপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আব্দুল করিম ও এএসআই তহুরুলসহ সঙ্গীয় ফোর্সরা। এর পরে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে ওই রাতে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা আদায় করা হয় তাদের কাছ থেকে। শুধু তাই নয় চেয়ারম্যান রেজাউল হককে ভয় দেখায় ইনচার্জ আব্দুল করিম। বাগমারার ওসিকে দিতে হবে বলে দাবি করা হয় আরও ২ লাখ। ওইদিন রাতে নগদ টাকা জোগাড় করতে ব্যর্থ হলে পরের দিন আরও ১ লাখ টাকা জোগাড় করে দেন চেয়ারম্যান রেজাউল হক। আইসি আব্দুল করিম ১ লাখ টাকা নিয়ে ক্ষান্ত হননি। চেয়ারম্যান রেজাউল হককে আবারও টাকার জন্য ভয় দেখাতে থাকে আব্দুল করিম। এর পরে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করেন চেয়ারম্যান। অবশেষে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।
অভিযোগ উঠেছে, আব্দুল করিম যোগীপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে যোগদানের পর থেকে নিরীহ মানুষকে হয়রানিসহ বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে থাকেন। এর আগে সীমান্তবর্তী চারঘাট ও গোদাগাড়ী থানায় চাকরি করা কালে মাদক কারবারিদের সাথে ছিল তার গভীর সখ্যতা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রাজনৈতিক মামলাকে পুঁজি করে এলাকার নিরীহ লোকজনকে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন তিনি। এলাকাবাসীর অভিযোগ চেয়ারম্যান রেজাউল হক সুস্থ একজন মানুষ ঘটনার কয়েকদিন পরে হার্ট অ্যাটাক করলো বিষয়টি পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের খতিয়ে দেখা উচিত।
ভুক্তভোগী কামরুল ইসলাম বলেন, ওইদিন রাতে চেয়ারম্যানের ফোন পেয়ে তার বাড়ি যাই সময় কাটাতে তাস খেলার আয়োজন করা হয়। হঠাৎ করে জোগীপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আব্দুল করিমসহ ফোর্স নিয়ে বাড়ি ঘেরাও করে গ্রেফতারের ভয় দেখায়। পরে সবাইকে জিম্মি করে ভয় দেখিয়ে ওই রাতে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকার বেশি আদায় করেন আইসি । এরপরে চেয়ারম্যানকে টার্গেট করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন শেষমেশ আরও ১ লাখ টাকায় মিটমাট হয়। এ কথা জানাজানি হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুমকিদেন ইনচার্জ আব্দুল করিম। ওসি স্যার সব জানে।
ভুক্তভোগী কামরুল আরও বলেন, ঘটনাটি এলাকায় ছড়ি পড়ার পরে এক এসআই আমাকে তদন্ত কেন্দ্র ডেকেছে আইসি স্যারের সাথে দেখা করতে হবে। ঘটনার শিকার আমার সাথে থাকা একজনের কিছু টাকা ফেরত দিয়েছে আইসি। আমাকেও ডেকেছে!
এব্যাপারে, জোগীপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মুহ. আব্দুল করিম মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি সঠিক নয় বলে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহা: তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমিও শুনেছি । তিনি বলেন, আইসি করিম ওই দিন রাতে জানায় আসামি ধরতে গিয়ে তাস খেলা অবস্থায় কয়েকজন আটক করেছিল। পরে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যতটুকু শুনেছি টাকা আদায়ের ঘটনা ঘটেনি। আইসি`কে বলে দিচ্ছি কথা বলেন!
জানতে চাইলে রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) হেলেনা আকতার বলেন, বিষয়টি জানতাম না। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে পুলিশের কেউ ক্রাইম করলে ছাড় পাওয়ার সুযোগ নাই বলে জানান তিনি।
বিএ…