রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে টমেটো ফেলে তিন জেলার চাষিরা বিক্ষোভ করেছেন। টমেটো ও আমের পাল্পের ওপর বর্ধিত ভ্যাট-শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছেন তারা।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে নাটোর স্টেশন সড়কে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের নাটোর স্টেশন বাইপাস অবরোধ করেন। এ বিক্ষোভে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরের চাষিরা অংশ নেন।
এসময় চাষিদের বিক্ষোভে রাজশাহী-ঢাকা রুটের মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা বিক্ষোভ শেষ হলে ফের এই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি সরকার টমেটো, আমসহ বিভিন্ন ফলের পাল্পের ওপর নতুন করে ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে ভ্যাট আরোপ করেছে। এর ফলে প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ হঠাৎ করে চাষিদের কাছ থেকে টমেটো সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ভরা মৌসুমে চাষিরা টমেটো বিক্রি করতে পারছেন না এবং টমেটো ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। তাই টমেটো ও আমের পাল্পের ওপর বর্ধিত ভ্যাট-শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে সম্মিলিতভাবে সড়ক অবরোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাটোর ও রাজশাহী অঞ্চলের টমেটো ও আমচাষিরা।
গোদাগাড়ীর টমেটো চাষি মো. ইফতেখার আলম মুন্না বলেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশের প্রান্তিক কৃষক, শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষের জীবন মানে প্রভাব পড়বে। এতে তাদের জন্য ক্ষতিকর হবে। তাই দ্রুত এ খাতের বাড়তি কর প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা। শুধু তাই নয়, ভ্যাট ট্যাক্স বৃদ্ধির ফলে অনেক কৃষকের টমেটো খেতে নষ্ট হচ্ছে।
নাটোরের টমেটো চাষি বাবু বলেন, ১৫ শতাংশ ট্যাক্স বৃদ্ধির কারণে আমরা পণ্য বিক্রি করতে পারছি না। এর ফলে আমাদের কৃষি পণ্য জমিতে নষ্ট হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা অবিলম্বে এই ভ্যাট যেন প্রত্যাহার করা হয়। কৃষি পণ্যের ওপরে ভ্যাট, ট্যাক্স না করলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়বে। ফলে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বিপণন ব্যাহত হবে।
নাটোরের ব্যবসায়ীরা বলেন, করোনার ধাক্কা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে ভ্যাট বৃদ্ধির এ উদ্যোগ মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। এর ফলে ভোক্তা চাহিদা কমে যাবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ খাতের ছোট ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি এবং ডলার বাজারে অস্থিরতার কারণে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাত ইতিমধ্যেই চাপে আছে। ভ্যাট বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য খাদ্যপণ্য কেনা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নাটোরের ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন বলেন, আজকে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এ কর্মসূচিতে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর জেলার কৃষকরা অংশ নেন। তাদের সবার দাবি এ ভ্যাট, ট্যাক্স প্রত্যাহার না করা হলে আগামীতে মহাসড়ক অবরোধ করে বৃহত্তর কর্মসূচি পালন করা হবে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, সড়কে টমেটো ফেলে বিক্ষোভের বিষয়টা আমার জানা নেই। তবে আমরা সাধারণত কৃষকদের ভালো জাত এবং টমেটো চাষের জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের প্রত্যাশা কৃষকরা ভালো দাম পাক।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টমেটো চাষ হয় জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজশাহীতে মোট ৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৬ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। এছাড়া নাটোর জেলায় টমেটোর চাষাবাদ হয়েছে শিক্ষক ১৭৬ হেক্টর জমিতে। এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজাট ৮৭২ মেট্রিক টন।
নই