শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: বিদ্যালয় একটি, প্রধান শিক্ষক দুজন, একজন ভারপ্রাপ্ত, আরেকজন বরখাস্তকৃত। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সুপ্রীম কোর্টের মামলার রায় বা বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার না পেতেই বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক দাপট ও ভূল ব্যাখায় বিভ্রান্ত ছড়িয়ে কোণঠাসা করছে প্রশাসনকে। এমন অভিযোগ উঠেছে বগুড়ার শেরপুরের দোয়ালসাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে। তাছাড়া উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকলেও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি’র পদ নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টির অভিযোগ ছড়ানোর অপচেষ্টায় রয়েছে প্রতিপক্ষ।
জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধের দলিলসমূহ শিক্ষার্থীদের জানার সুযোগ বঞ্চিত করা, বিনামুল্যের বই বিক্রয় করা, মুভমেন্ট রেজিষ্ট্রার ব্যবহার না করা, বিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে ধুমপান এবং অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সাথে অসৌজন্যমুলক আচরণ এবং বিদ্যালয়ের আয়-ব্যায়ের হিসাব না দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হয় শেরপুরের দোয়ালসাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তমতে গত ১৫/০৪/১৯ তারিখে স্থায়ী বরখাস্ত হয় ওই প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদ আলী।
এর প্রেক্ষিতে চাকুরী ফিরে পেতে এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি’র রাশেদুল ইসলাম রাজুর বিরুদ্ধে উল্টো অনৈতিক অভিযোগ এনে বগুড়ার এডিসি (শিক্ষা) তদন্ত করে শিক্ষা বোর্ডর কাছে এর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এক তরফা তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে সভাপতি পুনঃতদন্তের জন্য আবেদন করলেও তা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি। উল্টো পক্ষপাতিত্বের তদন্তের সাপেক্ষেই শিক্ষা বোর্ড এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিধিমালা অনুসরন না করেই সভাপতির পদ বাতিলের আদেশ দেয়। এর প্রেক্ষিতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাজু উচ্চ আদালতে মামলা করলে বিজ্ঞ আদালত ওই শিক্ষকের চাকুরীর বিষয়টিতে কোন আদেশ না দিয়ে সভাপতির পদে রাজুকে পূর্ণবহালের আদেশ দেয়। এ আদেশ বাতিলের জন্য ওই বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদ আলী হাইকোর্টে রিট করলে বিজ্ঞ আদালত ওই সভাপতি’র বিরুদ্ধে ১লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করলেও পরবর্তীতে সভাপতি’র আপিল আবেদনে গত ১২ ফেব্রæয়ারি বিজ্ঞ আদালত ৮ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে এবং দায়েরকৃত চলমান মামলা পরবর্তীতে শুনানির জন্য নির্দেশ দেয়।
এদিকে ওই বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদ আলী উচ্চ আদালতে মামলা চলমান ও পূর্ণাঙ্গ রায় না পেয়েই এমনকি তার বিরুদ্ধে বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার না পেতেই সকল তথ্য গোপন করে স্থানীয় প্রশাসনকে অপব্যাখ্যা দিয়ে দাপটের সাথে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন। এছাড়াও সভাপতির প্রত্যায়ন ছাড়াই চলতি বছরের অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র(খাতা) সা: বিজ্ঞান(১২৭) এ প্রধান পরীক্ষক(কোর্ড ১৪৫২) হিসেবে অদ্যবধি বহাল তবিয়তে রয়েছেন। শুধু তাই নয়, একই বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকা সত্বেও ওই বরখাস্তকৃত শিক্ষক নুর মোহাম্মদ আলী স্থানীয় প্রশাসনকে ভূল বুঝিয়ে প্রত্যায়ন নিয়ে গত ৭ মার্চ থেকে শুরু হওয়া রাজশাহীতে আইসিটি ট্রেনিংএ অংশগ্রহন করেছে স্বীকার করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। তাছাড়া ওই বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদ আলী তার নিজের বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার না পেয়েই আদালতে মামলা চলমান থাকাও সত্বেও অনৈতিক দাপট ও ভূল ব্যাখায় বিভ্রান্ত ছড়িয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে বরখাস্তকৃত ওই প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদ আলীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে, তিনি রাজশাহীতে বিদ্যালয় প্রধানদের আইসিটি ট্রেনিংএ রয়েছি এবং সাক্ষাতে বিস্তারিত বলবো বলে মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে দোয়ালসাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাজুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হাইকোর্টের চলমান মামলায় গত ১২ ফেব্রæয়ারি অর্থনৈতিক সংক্রান্ত একটি আদেশ হয়েছে, তবে মামলাটি পুন শুনানীর জন্য মহামান্য আদালত ৮ সপ্তাহের সময় দিয়েছেন। এক্ষেত্রে সভাপতির পদ বাতিল হয়েছে মর্মে ওই অর্ডারের কোথাও লেখা নাই, এটা বিভ্রান্ত মূলক অপব্যাখ্যা বলে এমনটাই মন্তব্য করেন তিনি।
এ ব্যাপারে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সষ্টিটিউট থেকে প্রাপ্ত ওই বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষকের নামের তালিকা দেখে প্রত্যায়ন দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে ওই শিক্ষক অন্যকোন অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারবেনা। তাছাড়া ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিয়ে বির্তকের ব্যাপারে প্রশ্নে, শিক্ষা বোর্ড থেকে কোন নির্দেশনা বা কাগজ পাননি বলেও তিনি জানান।
খবর২৪ঘন্টা/নই